শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ভূমিকম্প নিয়ে যত প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে মানুষ 

ঢাকা মেইল ডেস্ক 
প্রকাশিত: ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:২০ পিএম

শেয়ার করুন:

ভূমিকম্প নিয়ে যত প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে মানুষ 
ভূমিকম্পের প্রতীকী ছবি

দেশে অল্প সময়ের ব্যবধানে তিনবার ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে এক ধরনের উদ্বেগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে, শুক্রবারের ভূমিকম্পে ১০ জনের মৃত্যু এবং বিভিন্ন এলাকায় ভবন হেলে পড়া ও ফাটলের ঘটনায় অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

এ অবস্থায় নিজেদের নিরাপদ রাখতে ভূমিকম্প সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের তথ্য জানার চেষ্টা করছেন সাধারণ মানুষ। এক্ষেত্রে তথ্য জানার সহজ মাধ্যম হিসেবে অনেকেই আশ্রয় নিচ্ছেন সার্চ ইঞ্জিন গুগলের।


বিজ্ঞাপন


বাংলাদেশে গত তিন দিনে ভূমিকম্প নিয়ে গুগলে যেসব বিষয় সবচেয়ে বেশি খোঁজ করেছেন মানুষ, ভূতত্ত্ববিদ ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে সেগুলোর মধ্য থেকে শীর্ষ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করেছে বিবিসি বাংলা। 

বাংলাদেশে কোন এলাকা বেশি ভূমিকম্প ঝুঁকিতে?

ভূকম্পনের ঝুঁকি বিবেচনায় বাংলাদেশকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি অংশকে 'উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল' হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সিলেট, ময়মনসিংহ এবং রংপুর ,ঢাকা, কুমিল্লা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের কিছু অংশ ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে সিলেট বিভাগের চারটি জেলায় বড় মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে।


বিজ্ঞাপন


একইভাবে, ময়মনসিংহ বিভাগের পাঁচটি জেলাও ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ঢাকা বিভাগের মধ্যে টাঙ্গাইল, গাজীপুর, নরসিংদী জেলার অংশ বিশেষ, পুরো কিশোরগঞ্জ জেলা এবং কুমিল্লা বিভাগের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বড় মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলার উত্তরাংশও ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।

 

 

অন্যদিকে, ঢাকা, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের অংশ বিশেষ এবং চট্টগ্রাম মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। আর ভূমিকম্পের তুলনামূলক কম ঝুঁকিতে রয়েছে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলো।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে বড় ভূমিকম্পের প্রধান দুটি উৎসের একটি হলো ‘ডাউকি ফল্ট’। এটি ভারতের শিলং মালভূমির পাদদেশে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ-জামালগঞ্জ-সিলেট অঞ্চলে বিস্তৃত যা প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ।

আরেকটি হলো- সিলেট থেকে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, টেকনাফ পর্যন্ত যা সব মিলিয়ে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা পর্যন্ত বিস্তৃত। এই উৎসটিকে খুব ভয়ংকর বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

টেকটনিক প্লেটে বাংলাদেশের যে অবস্থান তাতে দুটি প্লেটের সংযোগস্থল রয়েছে- পশ্চিমে ভারতীয় প্লেট আর পূর্ব দিকে বার্মা প্লেট। আর বাংলাদেশের উত্তরদিকে আছে ইউরেশিয়ান প্লেট। এর মধ্যে ভারতীয় প্লেটটি ধীরে ধীরে পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বার্মা প্লেটের নিচে অর্থাৎ চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের সাবেক শিক্ষক ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার।

সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, “তলিয়ে যাওয়ার কারণে একটা সাবডাকশান জোনের তৈরি হয়েছে। আর নটরিয়াস (ভয়ংকর অর্থে) এই জোনের ব্যাপ্তি সিলেট থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত। পুরো চট্টগ্রাম অঞ্চল এর মধ্যে পড়েছে। এখানে বিভিন্ন সেগমেন্ট আছে। আমাদের এই সেগমেন্টে আট দশমিক দুই থেকে নয় মাত্রার শক্তি জমা হয়ে আছে আজ হোক, কাল হোক- এটা বের হবেই।”  

এই অধ্যাপকের মতে, নরসিংদীর মাধবদীতে যে ভূমিকম্পের উৎস ছিলো সেটা এই সেগমেন্টেরই এবং নরসিংদীতে দুই প্লেটের যেখানে সংযোগস্থল, সেখানেই ভূমিকম্প হয়েছে। তিনি বলেন, “এখানে প্লেট লকড হয়ে ছিল। এর অতি সামান্য ক্ষুদ্রাংশ খুললো বলেই শুক্রবারের ভূমিকম্প হয়েছে। এটিই ধারণা দেয় যে সামনে বড় ভূমিকম্প আমাদের দ্বারপ্রান্তে আছে।” 

image
টেকটনিক প্লেট ও বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিক অবস্থান

 

ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পাওয়া কি সম্ভব?

বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোথায় কোথায় ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, সেটি জানা সম্ভব। তাহলে ঠিক কখন কোথায় ভূমিকম্প হবে, সেটিও কি ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব? "এক কথায় এর উত্তর হচ্ছে, না," বলছিলেন ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ অনুসারে, একটি সত্যিকারের ভূমিকম্পের পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় জরুরি- এটি কোথায় ঘটবে, কখন ঘটবে এবং কত বড় আকারের হবে। সংস্থাটি বলছে, এখন পর্যন্ত কেউই নিশ্চিতভাবে এটি করতে পারে না।
 
তার বদলে ভূতত্ত্ববিদরা তাদের সেরা অনুমান দিয়ে ‘প্রাকৃতিক বিপদ মানচিত্র’ তৈরি করে, যেখানে তারা কয়েক বছরের সময়সীমার মধ্যে ভূমিকম্পের সম্ভাবনা হিসেব করে। এগুলো সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় তোলা দালানের মান উন্নত করার মতো পরিকল্পনায় কিছুটা সাহায্য করতে পারলেও জনসাধারণকে সরিয়ে নেওয়া বা নিরাপদ আশ্রয় দেওয়ার মতো প্রাথমিক সতর্কতা নিতে প্রয়োজনীয় পূর্বাভাস দেয় না।

তবে আগে থেকে ভূমিকম্পের সঠিক সময় জানা না গেলেও রিয়েল টাইম বা তাৎক্ষণিক পূর্বাভাস পাওয়া সম্ভব বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। অধ্যাপক আখতার বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপানে ভূমিকম্পের এ ধরনের রিয়েল টাইম পূর্বাভাস দেওয়ার পদ্ধতি কার্যকর রয়েছে।” 

এক্ষেত্রে ভূমিকম্পের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যন্ত্র বসিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে আশপাশের বাসিন্দাদের কাছে তথ্য পাঠানো হয় বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। অধ্যাপক আখতার বলছিলেন, “সাধারণত এরকম মেসেজ পাওয়ার পাঁচ থেকে দশ সেকেন্ডের মধ্যেই ভূমিকম্প টের পাওয়া যায়।” 

ভূমিকম্প নিয়ে গুগলের সতর্কবার্তা কতটা নির্ভরযোগ্য?

প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগল বহুবছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্বিক জরিপ বিভাগ, ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিকাল সার্ভের (ইউএসজিএস) ও ক্যালিফোর্নিয়ার বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের সাথে এমন একটি প্রযুক্তি তৈরির চেষ্টা করছে, যেটি ভূমিকম্প হওয়ার কয়েক সেকেন্ড আগে সতর্কবার্তা পাঠাতে সক্ষম হবে।  

image
সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে ঢাকা ও নরসিংদীর অনেক ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে

এই সতর্কবার্তা ভূমিকম্পের কয়েক সেকেন্ড আগে পৌঁছানো সম্ভব। আর, ওই কয়েক সেকেন্ডই কাউকে টেবিল বা খাটের নিচে আশ্রয় নেওয়ার সময় দেবে কিংবা ট্রেনের গতি কমানোর সুযোগ করে দেবে বলে বিশ্বাস গুগলের। বড় ধরনের ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে এই সিস্টেম অনেকের জীবন বাঁচাতে সক্ষম হবে বলেও মনে করে তারা। 

এই সিস্টেম দুইটি উৎস থেকে ডেটা বা তথ্য সংগ্রহ করে। একটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে থাকা কয়েক হাজার সিসমোমিটার থেকে এটি ভূমিকম্পের তথ্য নেয়। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও এর আশেপাশের অঞ্চলে হতে যাওয়া ভূমিকম্প আগে থেকে বেশ নির্ভুলভাবেই শনাক্ত করতে পারে এই প্রযুক্তি।

আর যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে, অর্থাৎ বাকি বিশ্বের জন্য এই সিস্টেম ব্যক্তিগত ব্যবহারের অ্যান্ড্রয়েড ফোনকেই কম্পন শনাক্ত করার যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। অর্থাৎ আপনার কাছে থাকা অ্যান্ড্রয়েড ফোনই এক্ষেত্রে আগে থেকে কম্পন শনাক্ত করবে। 

গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের অধিকাংশ ফোনেই এক্সেলারোমিটার রয়েছে -ফোন নাড়াচাড়া করলে তা শনাক্ত করতে পারে এটি। ফোন ব্যবহারকারী কতটুকু হাঁটলো বা দৌড়ালো, এই ধরনের তথ্য দিতে ফিটনেস ট্র্যাকার জাতীয় অ্যাপগুলোকে সহায়তা করে থাকে এই টুল। তবে, এর সেন্সরগুলো অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং এটি একটি ছোটোখাটো সিসমোমিটার হিসেবেও কাজ করে।

image
গত শুক্রবারের ভূমিকম্পে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন

ভূমিকম্পের প্রাথমিক ধাক্কা শনাক্ত করার সাথে সাথে ফোনের এই সিস্টেমটি গুগলের অ্যান্ড্রয়েড আর্থকোয়েক অ্যালার্ট সিস্টেমে তথ্য পাঠায়। এরপর গুগল যাচাই করে যে একই এলাকার লক্ষ লক্ষ অ্যান্ড্রয়েড ফোন থেকে একই ধরনের তথ্য তারা পাচ্ছে কি না। সেরকম হলে সেসব তথ্য পর্যালোচনা করে গুগল ওই এলাকায় অবস্থিত অ্যান্ড্রয়েড সিস্টেমগুলোতে সতর্কবার্তা পাঠায়। আর এই পুরো প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন হয় কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই। 

যেহেতু রেডিও সিগন্যাল সিসমিক কম্পনের চেয়ে দ্রুত যায়, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল থেকে দূরে থাকা অঞ্চলগুলোতে কম্পন অনুভূত হওয়ার আগেই সতর্কবার্তা পাঠানো সম্ভব হতে পারে। এই সিস্টেমে ব্যবহারকারীকে যে নোটিফিকেশন পাঠানো হয় তা মূলত ব্যবহারকারীকে অতিস্বত্ত্বর নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার তাগাদা দেয়। সতর্কবার্তায় বলা হয় 'ড্রপ, কাভার অ্যান্ড হোল্ড।'

পরিসংখ্যানের হিসেবে ধারণা করা হয়, পৃথিবীতে ১৮০০ কোটির বেশি মোবাইল ফোন ডিভাইস রয়েছে যার মধ্যে সাড়ে তিন থেকে চারশো কোটি অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস আছে। গুগলের এই ভূমিকম্প শনাক্তকরণ পদ্ধতি 'আর্থকোয়েক অ্যালার্ট সিস্টেম' ৯০টির বেশি দেশে কার্যকর রয়েছে। তবে এই ব্যবস্থার কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে।  

image
বড় ধরনের ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহার করে রিয়েল টাইম এলার্ট পাওয়া সম্ভব বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা

 

ভূমিকম্প কেন হয়?

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূতাত্ত্বিক চলমান প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠ কয়েকটি টেকটনিক প্লেটে বিভক্ত, যেগুলো ভূগর্ভে তরল পদার্থের ওপর ভাসছে এবং এই প্লেটগুলো গতিশীল- একে অপরের সাপেক্ষে অবস্থান পাল্টাচ্ছে। তবে এর বাইরে অনেক জায়গায় সাব-প্লেট ক্রিয়াশীল আছে। যেসব স্থানে একটি প্লেট এসে আরেকটি প্লেটের কাছাকাছি মিশেছে বা ধাক্কা দিচ্ছে বা ফাটলের তৈরি হয়েছে, সেটাকে বলা হয় ফল্ট লাইন। বাংলাদেশে এমন কয়েকটি ফল্ট লাইন আছে।

এই প্লেটগুলো যখন সরে যায় বা নড়াচড়া করতে থাকে কিংবা একটি অন্যদিকে ধাক্কা দিতে থাকে, তখন এক ধরনের শক্তি সঞ্চিত হতে থাকে। আর সেই শক্তি যখন সেখানকার শিলার ধারণ ক্ষমতার পেরিয়ে যায়, তখন আগে থেকে থাকা কিংবা নতুন তৈরি হওয়া ফাটল কিংবা শিলা ব্লক একটি আরেকটির উপরে উঠে গেলে সেখানে সঞ্চিত শক্তি বেরিয়ে এলেই ভূ-পৃষ্ঠে কম্পন অনুভূত হয়।

ভূমিকম্প হলে করণীয় কী?

যদিও ভূমিকম্প কখন আঘাত হানবে তা ভবিষ্যদ্বাণী করা সহজ নয়, তাই বিশেষজ্ঞদের মতে, আপনাকে সব সময় প্রস্তুত থাকতে হবে। অর্থাৎ ভূমিকম্প ঘটলে কী করতে হবে সে সম্পর্কে আপনার একটা পরিকল্পনা থাকা উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

"আপনি যদি ভূমিকম্প-প্রবণ কোন এলাকায় থাকেন, তাহলে আপনার বাড়িতে একটি জরুরি প্যাক তৈরি রাখা ভালো," ২০২৩ সালে তুরস্ক এবং সিরিয়াযর ভূমিকম্পের পর দেওয়া সাক্ষাৎকারে  বলেছিলেন লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের ভূমিকম্পবিদ ড. স্টিফেন হিকস। তার মতে, জরুরি প্যাকে অতিরিক্ত খাবার পানি, একটি টর্চ, প্রাথমিক চিকিৎসার একটি কিট এবং কিছু শুকনো খাবার থাকতে হবে।

আন্তর্জাতিক সংস্থা রেড ক্রসের মতে, কিটটিতে কিছু নগদ অর্থ এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত নথিপত্রের কপি, যেমন আপনার ওষুধের তালিকা, ইত্যাদি রাখতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভে মার্কিন সরকারের একটি বৈজ্ঞানিক সংস্থা। এর পরামর্শ হচ্ছে, আপনি যেখানে আছেন সেখানে থাকলে আপনার আহত হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই ভূমিকম্প ঘটার সময় দৌড়ে বাইরে যাওয়া কিংবা অন্য ঘরে চলে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। 

image
শুক্রবারের ভূমিকম্পের পর পুরনাে ঢাকার দুর্ঘটনাস্থল

"ড্রপ, কভার এবং হোল্ড অন" অর্থাৎ বসে পড়ুন, কিছু একটার তলায় ঢুকে পড়ুন এবং সেভাবেই থাকুন- এই হচ্ছে নিরাপদ থাকার মূলমন্ত্র, বিশেষজ্ঞরা বলছেন।

হাঁটু গেড়ে বসে পড়লে মাথার ওপর কোন কিছু পড়ে যাওয়া থেকে আপনাকে রক্ষা করবে এবং প্রয়োজনে ঘরের ভেতরে আপনি সামান্য নড়াচড়া করতে পারবেন। কাছাকাছি অন্য কোনো আশ্রয় না থাকলে কোনো টেবিল বা ডেস্কের নিচে ঢুকে পড়তে পারেন। ভূমিকম্পের ঝাঁকুনি শেষ না হওয়া পর্যন্ত আপনি সেখানেই থাকতে পারেন। 

প্রথম দিকে মনে করা হতো দরজার ফ্রেমের নিচে থাকলে তা নিরাপদ হবে। কিন্তু এখন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আপনি যদি তুলনামূলকভাবে পুরানো বাড়িতে থাকেন তাহলে সবচেয়ে ভালো হবে টেবিলের নিচে আশ্রয় নেওয়া।

জানালা এবং ভবনের সামনের অংশ প্রায়ই প্রথম ধসে পড়ে। তাই এসব বিপদজনক জায়গা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ঝাঁকুনি একেবারে থেমে যাওয়ার পর সাধারণত খোলা জায়গায় বের হওয়া নিরাপদ। কারণ আপনি যে বিল্ডিংয়ে থাকেন সেটিও ধসে পড়তে পারে।  

image
শুক্রবারের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিলো নরসিংদীর মাধবদী উপজেলায় মাটির প্রায় ১০ কিলোমিটার গভীরে

কিন্তু আপনি যখন বাইরে থাকেন তখন যদি ভূমিকম্প হয়?

"যেখানে আছেন, সেখানেই থাকুন," পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। তবে বিল্ডিং, বৈদ্যুতিক তার, ম্যান-হোল, জ্বালানি এবং গ্যাসের লাইন থেকে দূরে সরে গেলে আঘাত পাওয়ার ঝুঁকি কমে যাবে। গাছ, টেলিফোনের খুঁটি এবং বিল্ডিং থেকে দূরে খোলা জায়গায় চলে যাওয়াই ভাল, বলছেন তারা।

আর্থকোয়েক কান্ট্রি অ্যালায়েন্স সংস্থার মতে, টেলিভিশন, বাতি, কাঁচ এবং বইয়ের আলমারি পড়ে গিয়ে বা উড়ন্ত বস্তুর কারণে বেশিরভাগ আঘাত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটে থাকে। এসব আঘাত এড়ানোর একটি উপায় হল ভারী আসবাবপত্রগুলোকে স্ট্র্যাপ দিয়ে পেছনের দেওয়ালের সঙ্গে আটকে রাখা। আরেকটি সম্ভাব্য ঝুঁকি হল ভূমিকম্পের পর ফেটে যাওয়া পাইপ থেকে গ্যাস বের হওয়া। -বিবিসি। 

ক.ম/ 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর