শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

আকাশে উড়ন্ত বিমানের যাত্রীরা কি ভূমিকম্প টের পান?

এভিয়েশন ডেস্ক
প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৫৯ এএম

শেয়ার করুন:

আকাশ উড়ন্ত বিমানের যাত্রীরা কি ভূমিকম্প টের পান?
বিমানে ওড়ার সময় সমতলে ভূমিকম্প হলে বিমানের যাত্রীরা কি ভূমিকম্প অনুভব করেন? প্রতীকী ছবি।

ভাবুন, আপনি একটি ব্যক্তিগত বিমান, বাণিজ্যিক এয়ারলাইনার বা উচ্চ প্রযুক্তির কোনো এয়ার ফোর্স জেটে আকাশে ভেসে চলেছেন। ঠিক তখনই নিচের ভূ-পৃষ্ঠে ভূমিকম্পের কম্পন ছড়িয়ে পড়ছে। গাছপালা দুলছে, ভবন ভেঙে পড়ছে কিন্তু আকাশে থাকা আপনাকে কি সেই কম্পন ছুঁতে পারবে? বিমানের ভেতর কি আপনি কোনো ঝাঁকুনি অনুভব করবেন?

আরও পড়ুন: বিমানে বজ্রপাত হলে যেভাবে নিরাপদ থাকেন যাত্রীরা


বিজ্ঞাপন


প্রথমে প্রশ্নটি অদ্ভুত শোনালেও একটু ভেবে দেখলে বিষয়টি যুক্তিসঙ্গত। পৃথিবীর যেসব অংশের সাথে আমরা প্রতিনিয়ত মিথস্ক্রিয়া করি, সেগুলো শুধু মাটির গঠনে সীমাবদ্ধ নয়; এর উপরে রয়েছে বিশাল সমুদ্র এবং প্রায় ৬০০ মাইল (১,০০০ কিলোমিটার) উচ্চতার বায়ুমণ্ডল। সমুদ্রতলে ভূমিকম্প হলে যেমন জলস্তর নড়ে সুনামি তৈরি হয়—তেমনি কি বায়ুমণ্ডলেও কোনো প্রতিক্রিয়া হতে পারে?

plane_pic

ভূমিকম্পে সৃষ্টি হওয়া ভূকম্পন তরঙ্গ মূলত দুই ধরনের: পি ওয়েভ (P-wave) ও  এস ওয়েভ (S-wave)। যখন পি ওয়েভ বা চাপ তরঙ্গ পৃথিবীর পৃষ্ঠ ছাড়িয়ে বাতাসে প্রবেশ করে, তখন তা শব্দতরঙ্গে রূপ নেয় (S-তরঙ্গ গ্যাস বা তরলে চলতে পারে না)। তবে P-তরঙ্গ সাধারণত ২০ হার্জের নিচে থাকে, যা মানুষের শ্রবণসীমার বাইরে—এগুলোকে ইনফ্রাসাউন্ড বলা হয়।

আরও পড়ুন: মাঝ আকাশে যাত্রীরা কেন তীব্র ঝাঁকুনি অনুভব করেন?


বিজ্ঞাপন


মানুষ যখন ভূমিকম্পের শব্দ শোনে, তারা প্রকৃতপক্ষে ভূমিকম্পের তরঙ্গকে নয়; বরং ভবন, দেয়াল, আসবাবপত্র দুলে যে শব্দ সৃষ্টি হয় সেটিকেই শোনে। আকাশে ভেসে থাকা বিমানে এই ধরনের শব্দ শোনা সম্ভব নয়। ইনফ্রাসাউন্ডও অনুভব করা যাবে না। কারণ বাতাসের মতো মাধ্যম দিয়ে ছড়িয়ে যেতে যেতে এই তরঙ্গগুলো ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যায়, যাকে পদার্থবিদরা attenuation বলেন। যেমন দূর থেকে রেডিওর শব্দ কম শোনা যায় বা বায়ুমণ্ডলের স্তর পেরিয়ে আসতে আসতে সূর্যালোকের তীব্রতা কমে যায়।

plane_pic2

অতএব, ভূমিকম্পের তরঙ্গ যদি ৩০,০০০ ফিট (৯,১৪৪ মিটার) উচ্চতা পর্যন্ত পৌঁছাতেও পারে, তবুও মাটি ও বায়ুর মধ্য দিয়ে উপরে উঠতে উঠতে তা এতটাই দুর্বল হয়ে যায় যে বিমানের নিজস্ব শব্দ–কম্পনের মধ্যেই তা হারিয়ে যায়। ফলে আপনি বিমানে বসে কোনো ভূমিকম্পের শব্দ বা কম্পন—দুটোই অনুভব করতে পারবেন না।

তথ্যসূত্র

অ্যাপলগেট, ডেভিড। সিনিয়র সায়েন্স অ্যাডভাইজর ফর আর্থকোয়েক অ্যান্ড জিওলজিক হ্যাজার্ডস, ইউএসজিএস। ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার। ৭ জুলাই, ২০১১।

ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি। “Signals From Space Enable Earthquake Detection.” সায়েন্সডেইলি, ৩ নভেম্বর, ২০০৩।

ল্যাঙ্কাস্টার ইউনিভার্সিটি, ডিপার্টমেন্ট অফ ফিজিক্স। “The Ionosphere: an Introduction.” SPEAR, ২৩ মে, ২০১১।

ইউ.এস. জিওলজিক্যাল সার্ভে (USGS), আর্থকোয়েক হ্যাজার্ডস প্রোগ্রাম। “Earthquake Facts.” ১৯ মার্চ, ২০১১।

এজেড

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর