ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্ক ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ঘটনার দশম দিনে (বুধবার) ২২৮ ঘণ্টা পর দুই শিশু ও তিন নারীকে উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া অনেকে জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের উদ্ধারে মরিয়া চেষ্টা করছে উদ্ধারকারীরা।
তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কাহরামানমারাসের ধ্বংসস্তূপ থেকে দুই নারীকে উদ্ধার করা হয়। বুধবার আন্তাকিয়া শহর থেকে একজন মা ও দুই শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
পরে বুধবার এলা নামে এক নারী এবং তার সন্তান মেসাম এবং আলীকে ভূমিকম্পের ২২৮ ঘণ্টা পরে আন্তাকিয়ার একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয়।
তুরস্ক এবং সিরিয়ায় ভূমিকম্পে মৃত্য হয়েছে প্রায় ৪২ হাজার মানুষের। লাখ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রায় গৃহহীন হয়ে পড়া মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। রয়টার্স জানিয়েছে, সেখানে বেঁচে যাওয়া লাখ লাখ মানুষের জরুরি সহায়তা প্রয়োজন।
ভূমিকম্পে এই অঞ্চলের স্যানিটেশন অবকাঠামোর বেশিরভাগ ক্ষতিগ্রস্থ বা অকার্যকর হয়ে পড়ায় মানুষ যাতে রোগমুক্ত থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বুধবার বলেছে যে, তারা উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার মানুষের জন্য বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। এটি একটি বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল, যেখানে সাহায্যের সামান্য সুযোগ রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে মানুষ কীভাবে বেঁচে থাকছে তার গল্পও উঠে এসেছে।
হুসেইন বারবার ১৮৭ ঘণ্টা পর উদ্ধার হন। তিনি কীভাবে এত সময় সেখানে বেঁচে ছিলেন সেটি জানিয়েছেন তিনি। ডায়াবেটিস রোগী হুসেইন তার বিল্ডিংয়ের গ্রাউন্ডফ্লোরে আটকা পড়েন। সেখানে একটি ফ্রিজ ও একটি কেবিনেট তাকে বেঁচে থাকতে সহায়তা করেছে। এছাড়া বসার জন্য একটি আর্মচেয়ার ও পাটি তাকে উষ্ণ থাকতে সহায়তা করেছিল।
মারসিন সিটি হাসপাতালের বিছানা থেকে তিনি জানান, তার কাছে এক বোতল পানি ছিল। সেটি ফুরিয়ে গেলে প্রস্রাব পান করেন।
হুসেইন বারবার বলেন, 'আমি চিৎকার করতে থাকি। কিন্তু কেউ আমার কথা শুনছিল না। আমি এত চিৎকার করেছিলাম যে আমার গলা ব্যাথা করছিল। অনেক সময় পর কেউ একজন হাত বাড়িয়ে দিল। তারপর আমাকে তারা উদ্ধার করে। আমি যে গর্তে আটকা পড়েছিলাম তা অনেক ছোট ছিল। এমন পরিস্থিতিতে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
কাহরামানমারাসে গৃহহীন পরিবারগুলো মাঠে স্থাপন করা তাঁবুতে এবং শহরের স্টেডিয়ামে ঘুমিয়েছিল। একটি তাঁবুতে ২৮ বছর বয়সী হেটিস কাভাকডালি একটি ধূসর টেডি বিয়ার ধরে ছিলেন। তিনি বলেন, 'আমাদের অভিজ্ঞতা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। এটা খুবই ভয়ঙ্কর ছিল এবং আমি এখনও সেটি অনুভব করছি। ভূমিকম্পের পর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। এখন সুস্থ হয়ে উঠছি। আমি আমার পরিবারের কথা মনে করতে পারিনি বা কীভাবে আমরা বাড়ি থেকে বের হয়েছিলাম সেটিও মনে নেই।'
লাখ লাখ মানুষ যারা তাঁবু বা খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন তাদের এখন প্রধান সমস্যা স্যানিটেশন। ২১ বছর বয়সি গ্রাফিক ডিজাইনের ছাত্র মোহাম্মদ এমিন বলেন, 'ভূমিকম্পের পর থেকে আমরা গোসল করতে পারিনি।'
তুরস্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি বাতির বার্ডিক্লিচেভ সতর্ক করেছেন যে, ভূমিকম্প-বিধ্বস্ত এলাকায় পানির ঘাটতি জলবাহিত রোগ এবং সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
সূত্র: রয়টার্স
একে