তীব্র ভূমিকম্পের এক সপ্তাহ পার হওয়ার পরও ‘অলৌকিক উদ্ধার’ অব্যাহত রয়েছে তুরস্ক ও সিরিয়ায়। এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে বের করা হচ্ছে জীবিতদের। তুরস্কে ধ্বংসস্তূপ থেকে ভূমিকম্পের ১৭০ ঘণ্টা পর এক নারীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। যাদের সন্ধান মিলছে না স্বজনরা এখনও তাদের ফির আসার আশা করছেন।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ৪০ বছর বয়সি ওই নারীর নাম সিবেল কায়া। তাকে গাজায়ান্তেপ প্রদেশের ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয়।
বিজ্ঞাপন
এর আগে আদিয়ামান প্রদেশের বেসনি জেলায় ১৬৬ ঘণ্টা পর ধ্বংসস্তূপ থেকে ৬০ বছর বয়সী এরেঙ্গুল ওন্ডারকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
আনাদুলু এজেন্সি জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে ১৬৩ ঘণ্টা কাটানোর পর হাতায়ে সাত বছর বয়সী এক ছেলে এবং ৬২ বছর বয়সী নাফিজ ইলমাজকে উদ্ধার করা হয়।
এছাড়াও ভূমিকম্পের পর থেকে একাধিক এমন উদ্ধারের দৃশ্য দেখেছে বিশ্ব। মৃত মায়ের সন্তান প্রসব ও নবজাতককে উদ্ধার, একাধিক একা শিশুকে সুস্থভাবে পাওয়া গেছে ধ্বংসস্তূপে। অনেক শিশুকে একাই পাওয়া গেছে, তাদের পরিবারের খবর মিলছে না।
বিজ্ঞাপন
ভূমিকম্পের করুণ দৃশ্য বিশ্বকে হতবাক করেছে। হাজার হাজার মানুষ এখনও ধসে পড়া ভবনগুলোর নিচে আটকা পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে যে, এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেকে বেঁচে রয়েছেন। তবে সময় পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের বেঁচে থাকার আশা ক্ষীণ হচ্ছে।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৭০টিরও বেশি দেশ তুরস্ক ও সিরিয়ায় উদ্ধারকার্যক্রমে অংশ নিয়েছে। ভূমিকম্পে তুরস্কে প্রায় সাত হাজার ভবন ধসে পড়েছে। সিরিয়ায়ও বিস্তীর্ণ অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৪ হাজার ছাড়িয়েছে। জাতিসংঘ সতর্ক করেছে যে চূড়ান্ত সংখ্যা দ্বিগুণ হতে পারে। সংস্থাটি জানিয়েছে, ভূমিকম্পের পরে সিরিয়ায় ৫৩ লাখ মানুষ গৃহহীন হতে পারে। এখন তুরস্ক এবং সিরিয়ায় প্রায় ৯ লাখ লোকের জরুরি খাদ্যের (গরম খাবারের) প্রয়োজন রয়েছে।
সিরিয়ার সরকার তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা ভূমিকম্প-বিধ্বস্ত এলাকায় মানবিক সহায়তা বিতরণের অনুমোদন দিয়েছে।
এর আগে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেন, ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা দেশের ধ্বংসাত্মক ১৯৯৯ সালের ভূমিকম্পের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে।
এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডব্লিউএইচও এর কর্মকর্তারা ধারণা করছেন যে, নিহত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়বে। তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কর্তৃপক্ষ এএফএডি জানিয়েছে, ৬ হাজারের বেশি ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাজিয়ান্তেপ শহর। ভূমিকম্পের পরে ১৭০০ আফটারশক রেকর্ড করা হয়েছে।
ডব্লিউএইচও এর শীর্ষ কর্মকর্তা অ্যাডেলহেইড মার্শাং বলেন, ‘ভূমিকম্প যেসব অঞ্চলে সংঘটিত হয়েছে, তার মানচিত্র অনুসারে বলা যায় যে দুই কোটি ৩০ লাখ মানুষ এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এদের মধ্যে ৫০ লাখ মানুষ অরক্ষিত অবস্থায় আছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওই অঞ্চলে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত আফটারশক হতে পারে। সিএনএনের আবহাওয়াবিদ ক্যারেন ম্যাগিনিস ব্যাখ্যা করে জানিয়েছেন যে ভূকম্পনের বৈশিষ্ট্যের কারণে আফটার শক পরের কয়েক সপ্তাহ, এমনকি কয়েক মাস পর্যন্তও অনুভূত হতে পারে।
একে