মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

লাশ আর লাশ, তীব্র ঠাণ্ডায়ও তুরস্ক-সিরিয়ায় চলছে উদ্ধারকাজ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:৩২ এএম

শেয়ার করুন:

loading/img

ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে তুরস্ক ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ধসে পড়া হাজার হাজার ভবনের নিচে এখনও আটকে রয়েছে বহু মানুষ। তাদের চিৎকার ও স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে বাতাস। এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার ছুঁয়েছে। তীব্র ঠাণ্ডায়ও পুরোদমে চলছে উদ্ধার কাজ।

সোমবার ভোরে হওয়া ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে উভয় দেশ ব্যাপক ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে। বড় বড় ভবন, অ্যাপার্টমেন্ট, হাসপাতালসহ বহু ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। গৃহহীন হয়ে পড়েছেন অনেকে। তবে হিমশীতল ঠাণ্ডায় উদ্ধার প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।


বিজ্ঞাপন


দক্ষিণাঞ্চলীয় হাতায় প্রদেশে ধ্বংসস্তূপের স্তূপের নিচে আটকে থাকা এক নারীকে সাহায্যের আহ্বান জানাতে শোনা যায়। তার পাশেই পড়ে আছে এক শিশুর লাশ।

ভূমিকম্প ও ধ্বংস্তূপের মধ্যে থেমে থেমে চলেছে বৃষ্টিও। এর মধ্যে কাঁদতে কাঁদতে ডেনিজ নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা হাত বুলাচ্ছিলেন। তিনি কাঁতর কণ্ঠে বলেন, ''তারা শব্দ করছে কিন্তু কেউ আসছে না। আমরা বিধ্বস্ত, আমরা বিধ্বস্ত। হে ঈশ্বর... তারা ডাকছে। তারা বলছে, 'আমাদের বাঁচাও,' কিন্তু আমরা তাদের বাঁচাতে পারছি না। আমরা কীভাবে তাদের বাঁচাতে যাচ্ছি?।''

earthquake

ওই অঞ্চলের তাপমাত্রা রাতারাতি হিমাঙ্কের কাছাকাছি নেমে গেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া বা গৃহহীন হয়ে পড়া মানুষদের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


হাতায়ের উত্তরে কাহরামানমারাসে পুরো পরিবার আগুনের চারপাশে জড়ো হয়েছিল এবং উষ্ণ থাকার জন্য কম্বল জড়িয়েছিল।

চার সন্তানের সঙ্গে আগুনের পাশে বসে থাকা নেসেত গুলার বলেন, 'আমরা খুব কমই ঘর থেকে বের হয়েছি। আমাদের পরিস্থিতি একটি বিপর্যয়। আমরা ক্ষুধার্ত, আমরা তৃষ্ণার্ত। এটা দুঃখজনক।'

তুরস্কে ১৯৩৯ সালে সর্বশেষ এমন ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছিল। সেই ভূমিকম্পে ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। সোমবার ভোরের ভূমিকম্পের পর অন্তত ৭৮টি আফটার শক হয়েছে। এছাড়া তীব্র ভূমিকম্প হয়েছে আরও দুইটি।

ভূমিকম্পে শুধু তুরস্কে নিহতের সংখ্যা প্রায় তিন হাজার ছুঁয়েছে। সিরিয়ায়ও দেড় হাজার ছুঁয়েছে মৃত্যু। এখন পর্যন্ত তুরস্কে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।

বিদ্রোহীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চলে দামেস্ক সরকার এবং উদ্ধারকর্মীদের পরিসংখ্যান অনুসারে সিরিয়ায় কমপক্ষে ১৪৪৪ জন নিহত এবং প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।

earthquake

দুর্বল ইন্টারনেট সংযোগ এবং তুরস্কের দক্ষিণে রাস্তাঘাট, বাড়ি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ভূমিকম্পের সঠিক ক্ষতি মূল্যায়ন করা প্রায় অসম্ভব।

আগামী মে মাসে একটি কঠিন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। এর আগে এমন ভয়াবহ ভূমিকম্পকে তিনি ঐতিহাসিক বিপর্যয় বলে অভিহিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, কর্তৃপক্ষ তাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।

সিরিয়ায় ভূমিকম্পের পরিস্থিতি তুরস্কের চেয়েও ভয়াবহ। ১১ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে আগে থেকেই ধ্বংসাবস্থায় রয়েছে দেশটি। তার মধ্যে এমন ভয়াবহ ভূমিকম্প পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। 

জাতিসংঘ সিরিয়ার সরকারের সঙ্গে মিলে কাজ করছে। জাতিসংঘের একজন শীর্ষ মানবিক কর্মকর্তা বলেছেন যে, জ্বালানীর ঘাটতি এবং কঠোর শীতের আবহাওয়া উদ্ধারকাজ বাধাগ্রস্ত করেছে।

দামেস্ক থেকে ভিডিও সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী এল-মোস্তফা বেনলামলিহ বলেন, 'অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আমরা মানবিক কাজের জন্য যে রাস্তাগুলো ব্যবহার করতাম সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কীভাবে মানুষের কাছে যাওয়া যায় সে বিষয়ে আমাদের সৃজনশীল হতে হবে। তবে আমরা কঠোর পরিশ্রম করছি।' 

earthquake

সরকার-নিয়ন্ত্রিত শহর আলেপ্পোর একটি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, দুটি পাশাপাশি ভবন ধসে পড়ছে, রাস্তাগুলো ধুলোয় ভরে যাচ্ছে। যুদ্ধে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া শহরের দুই বাসিন্দা বলেছেন, ভূমিকম্পের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ভবনগুলো পড়ে গেছে।

সিরিয়ান হোয়াইট হেলমেটস এর রাইদ আল-সালেহ (বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে উদ্ধারকারী পরিষেবা সংস্থা) বলছেন যে, তারা ধ্বংসস্তূপের নিচে থাকা ব্যক্তিদের জীবন বাঁচানোর জন্য যুদ্ধ করছে।

সূত্র: রয়টার্স

একে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর


News Hub