তীব্র ভূমিকম্পে ধ্বংসের নগরিতে পরিণত হয়েছে তুরস্ক ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। সোমবার ভোরে প্রথম শক্তিশালী ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পের পর একই দিন দুপুর ও বিকেলে আরও দুটি তীব্র কম্পন অনুভূত হয়েছে। এগুলো মূলত আফটারশক হলেও তীব্রতার কারণে একেও ভূমিকম্প হিসেবে চিহ্নিত করেছেন কর্মকর্তারা। এমন অবস্থার মধ্যে মঙ্গলবার আবারও ৫.৫ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে তুরস্ক।
সোমবার ভোরে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর গাজিয়ানতেপের কাছে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। প্রবল শীতের মধ্যে ভোররাতে হওয়া এ ভূমিকম্পে প্রতিবেশী সিরিয়া, লেবানন, ইসরায়েল, ফিলিস্তিন ও সাইপ্রাসও কেঁপে ওঠে। অঞ্চলটির অধিকাংশ মানুষই তখন ঘুমিয়ে ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চল এবং উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার বহু অংশ প্রবল ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হয়েছে। উভয় দেশে প্রায় ৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। শুধু তুরস্কেই ধসে পড়েছে সাড়ে ৩ হাজার ভবন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে যে, ভূমিকম্পে মৃত্যুর সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওই অঞ্চলে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত আফটারশক হতে পারে। সিএনএনের আবহাওয়াবিদ ক্যারেন ম্যাগিনিস ব্যাখ্যা করে জানিয়েছেন যে, ভূকম্পনের বৈশিষ্ট্যের কারণে আফটার শক পরের কয়েক সপ্তাহ, এমনকি কয়েক মাস পর্যন্তও অনুভূত হতে পারে।
সাধারণত একটি স্থানে ভূমিকম্প হলে এর উৎপত্তিস্থলের ভূ-উপরিভাগের অংশটি ‘এপিসেন্টার’ বা ‘উপকেন্দ্র’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবে সোমবার তুরস্কের ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা একে ‘এপিসেন্টার’ নয় বরং ‘এপি-লাইন’ বা ‘উপ-রেখ’ হিসেবে বর্ণনা করছেন।
ওই অঞ্চলে ১৯৯৯ সালের পর এটাই সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার ঘটনা। চ্যাড মেয়ারস বলেন, আমরা সাধারণ উপকেন্দ্রের (পৃথিবীর কেন্দ্রে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের বিবেচনায় ভূপৃষ্ঠের যে স্থান) কথা বলে থাকি, কিন্তু এই ভূমিকম্পের বেলায় আমাদের একে ‘উপ-রেখ’ বলা উচিৎ।
বিজ্ঞাপন
পৃথিবীর ভূ-ভাগের বাইরের পৃষ্ঠটি অনেক টুকরো দিয়ে গঠিত, যেগুলোকে টেকটোনিক প্লেট বলা হয়। পৃথিবী সৃষ্টির আদিতে এই প্লেটগুলো একসঙ্গে ছিল, এগুলো ক্রমে সরতে সরতে এখন বিভিন্ন মহাদেশের আলাদা অবস্থান তৈরি করেছে। সঞ্চালনশীল এই প্লেটগুলোর সীমানা ‘সিস্টেম অব ফল্টস’ হিসেবে পরিচিত। ফল্ট হচ্ছে দুই প্রস্থ পাথরের মধ্যখানের ফাটল বা চ্যুতি। টেকটোনিক প্লেটের এই ফল্টগুলোর হঠাৎ যে কোনো নড়াচড়াই ভূমিকম্পের কারণ।
তুরস্কের ভূতল দিয়ে এমনই দুটি ফল্ট লাইন চলে গেছে যার নাম ‘নর্থ আনাতোলিয়ান ফল্ট লাইন’ ও ‘ইস্ট আনাতোলিয়ান ফল্ট’। তুরস্ক এই দুই ফল্ট লাইনের উপর অবস্থিত হওয়ায় বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত।
সিসমোলজিস্টরা দীর্ঘকাল ধরে বলে আসছেন যে এই ফল্টটি অত্যন্ত বিপজ্জনক। যদিও গত ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সেখানে কোনও উল্লেখযোগ্য কার্যকলাপ হয়নি। তবে অতীতে এই এলাকায় কিছু মারাত্মক ভূমিকম্প হয়েছে।
বিশেষ করে ১৮৮২ সালের ১৩ই অগাস্ট সেখানে ৭.৪-মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছিল, যা আজকের রেকর্ড করা ৭.৮-মাত্রার চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে কম। তা সত্ত্বেও, ১৯ শতকের সেই ভূমিকম্পে অনেক শহরের প্রচুর ক্ষতি হয়। মারা যায় হাজার হাজার মানুষ।
এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, শক্তিশালী ওই ভূমিকম্পের আফটারশক চলতে থাকে প্রায় এক বছর ধরে।
একে