শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এক একটি ভবন যেন ‘গণকবর’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০১ পিএম

শেয়ার করুন:

ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এক একটি ভবন যেন ‘গণকবর’

মাথায় স্কার্ফ-ঢাকা ৪৮ বছরের নারী সেলভা। তিনি সিরিয়ার সীমান্ত অঞ্চলের শহর আন্তাকিয়াতে তার ভবনের ধ্বংসাবশেষের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ভবনটি একেবারে গুঁড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে তার কয়েক ডজন প্রিয়জন চাপা পড়েছে। উদ্ধারকারীরা তার ভবনটি পরিদর্শন করে চলে যাওয়ার সময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সেলভা সেখানে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন। তিনি জানান, উদ্ধারকারীরা তার ভবনটি দেখে চলে গেছে। যে দলগুলো এখানে এসেছিল তারা আমাদের স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছিল যে তারা বেঁচে থাকা লোকদের খুঁজছিলেন।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: পান করেন প্রস্রাব, ছিল না শক্তি: উদ্ধার হওয়াদের রোমহর্ষক কাহিনি

সেলভার মতো অনেকেই ধসে পড়া ভবনগুলোর সামনে হাহাকার করছেন। তবে এরই মধ্যে তারা তাদের আত্মীয়দের খোঁজার হাল ছেড়ে দিয়েছেন। 

আন্তাকিয়াতে শহরটি এগারোদিন আগে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল। তবে গত ৬ ফেব্রুয়ারির ভূমিকম্পে এটি এখন ধ্বংসস্তূপের পাহাড়ে পরিণত হয়েছে। প্রত্যেকটি ভবনের ধ্বংসস্তূপ এক একটি গণকবরে রূপ নিয়েছে। 

earthquake turkey


বিজ্ঞাপন


আরেক ব্যক্তি হুসেন ক্ষোভ প্রকাশ করলেও উদ্ধারকারীদের বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। তিনি বলেন, আমরা বুঝতে পারি যে উদ্ধারকারীদের প্রথমে জীবিতদের সন্ধান করতে হবে। কিন্তু আমাদের প্রিয়জনের দেহাবশেষ পুনরুদ্ধার করার ও সেটি পাওয়ার অধিকার আমাদের রয়েছে।'

আধুনিক সময়ের সবচেয়ে মারাত্মক বিপর্যয়ের পরিপ্রেক্ষিতে তুরস্ক যে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে তা বর্ণনাতীত। এখন পর্যন্ত প্রায় ৪২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আফটারশকের ভয় অতিক্রম করে ধ্বংস হওয়া ভবনগুলোর ভেতরে প্রবেশ করছেন উদ্ধারকারীরা। ভূমিকম্পের নবম ও দশম দিনেও বহু মানুষকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়াদের ‘হাড়গোড়’ হলেও চান স্বজনরা

তবে উদ্ধারকারীরা অনেক জায়গায় নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ টন টন কংক্রিটের মধ্যে ড্রিল করার জন্য পর্যাপ্ত সংস্থান নেই। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বিধ্বস্ত স্থান পরিদর্শন করেছেন এবং নিয়মিত জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছেন। 

earthquake

একজন সরকারি কর্মচারী বলেন, 'আমরা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছি যেখানে আমরা কেবল মৃতদেহ খুঁজে পেয়ে খুশি হতে পারি'। তিনি ভূমিকম্পে তার ভাই এবং শ্যালিকাকে হারিয়েছেন। তার কথায়, 'আমরা এতটাই মরিয়া যে মৃতদেহ খুঁজে পাওয়ার আশা শুধু বাকি আছে আমাদের।'

এদিকে আন্তাকিয়ার মতো তুরস্কের দশটি প্রদেশ কার্যত বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। পানি ও বিদ্যুৎ নেই। ভূমিকম্প থেকে বেঁচে যাওয়া লাখ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রায় গৃহহীন হয়ে পড়া মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। রয়টার্স জানিয়েছে, সেখানে বেঁচে যাওয়া লাখ লাখ মানুষের জরুরি সহায়তা প্রয়োজন। 

ভূমিকম্পে এই অঞ্চলের স্যানিটেশন অবকাঠামোর বেশিরভাগ ক্ষতিগ্রস্ত বা অকার্যকর হয়ে পড়ায় মানুষ যাতে রোগমুক্ত থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

earthquake

লাখ লাখ মানুষ যারা তাঁবু বা খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন তাদের এখন প্রধান সমস্যা স্যানিটেশন। ২১ বছর বয়সী গ্রাফিক ডিজাইনের ছাত্র মোহাম্মদ এমিন বলেন, 'ভূমিকম্পের পর থেকে আমরা গোসল করতে পারিনি।'

তুরস্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি বাতির বার্ডিক্লিচেভ সতর্ক করেছেন যে, ভূমিকম্প-বিধ্বস্ত এলাকায় পানির ঘাটতি জলবাহিত রোগ এবং সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

আরও পড়ুন: মহাদুর্যোগে পাশে দাঁড়ানো বন্ধুদের কখনও ভুলব না: এরদোয়ান

ফার্মাসিস্ট জিন ওজসাইগিলিও স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে চিন্তিত। তিনি বলেন, 'আমরা কলেরা এবং টাইফয়েড মহামারির আশঙ্কা করছি। এই রোগগুলো প্রতিরোধ করার জন্য জরুরিভাবে ধ্বংসাবশেষ অপসারণ করা উচিত।'

earthquake

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বুধবার বলেছে যে, তারা উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার মানুষের জন্য বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। এটি একটি বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল, যেখানে সাহায্যের সামান্য সুযোগ রয়েছে।

সিরিয়ার পরিস্থিতি তুরস্কের চেয়েও ভয়াবহ। দেশটিতে ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকার বেশিরভাগ অঞ্চলই সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে তেমন কোনো সহায়তাও প্রবেশ করেনি। এছাড়া সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকার পরিস্থিতিও খুব বেশি সুখকর নয়।

সূত্র: এএফপি, রয়টার্স

একে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর