শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

পাথর চাপা আব্দুল আলিম হাত নাড়ছিলেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:১৬ এএম

শেয়ার করুন:

পাথর চাপা আব্দুল আলিম হাত নাড়ছিলেন
ধ্বংসস্তূপের নিচে আব্দুল আলিম- রয়টার্স

ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত তুরস্কের হাতায় থেকে এই হৃদয়বিদারক গল্প তুলে ধরেছে রয়টার্স। সেখানে সংস্থাটির ফটোগ্রাফার উমিত বেকতাস একটি বাড়ির ধ্বংসস্তূপ থেকে আব্দুল আলিম মুয়াইনিকে উদ্ধারের কাহিনী ছবিতে তুলে এনেছেন।

আব্দুল আলিমের পা কংক্রিটের একটি বড় স্ল্যাবের নিচে আটকা পড়েছিল কিন্তু তিনি সচেতন ছিলেন। তিনি উদ্ধারকারীদের সঙ্গে ধীরকণ্ঠে কথা বলতে সক্ষম ছিলেন। তার পাশে তার স্ত্রী এসরা শুয়ে ছিলেন। বস্তুত তিনি আগেই মৃত্যুবরণ করেন। 


বিজ্ঞাপন


turkey
পাশে মৃত স্ত্রী, হাত নাড়ছেন আব্দুল আলিম

রয়টার্সের ফটোগ্রাফার আব্দুল আলিমের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে না পারলেও তার দুই বন্ধু কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ছিলেন। তারা জানায়, আব্দুল আলিম সিরিয়ান বংশোদ্ভূত। তিনি সিরিয়ার হোমস থেকে এখানে আসেন। তিনি গৃহযুদ্ধ থেকে পালিয়ে এসে তুর্কি মহিলা এসরাকে বিয়ে করেন। এই দম্পতির মাহসেন ও বেসিরা নামে দুই মেয়ে রয়েছে। মেয়েদের কী হয়েছিল ওই সময় পর্যন্ত সেটি স্পষ্ট ছিল না।

আরও পড়ুন: ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্প, নিহত ৪

উদ্ধারে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে। বেকতাস কয়ক ঘণ্টা পর ফিরে এসে আব্দুল আলিমকে সফলভাবে উদ্ধার হতে দেখেন। তিনি ধুলায় মাখামাখি ছিলেন। তার একটি চোখ ফুলে গিয়েছিল। তিনি ডিহাইড্রেটেড ছিলেন এবং তার চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তিনি বেঁচে যান।


বিজ্ঞাপন


turkey
উদ্ধারকারীদের দেওয়া রশি ধরে রেখেছেন আব্দুল আলিম

তার স্ত্রী এসরাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এরপর তার দুই মেয়ে মাহসেন ও বেসিরাকেও পাওয়া যায়। তবে জীবিত নয়, তারাও ছিলেন মৃত।

আরও পড়ুন: হাত চুষছিল দুই মাসের মুহাম্মদ, ৪৮ ঘণ্টা পর উদ্ধার (ভিডিও)

ভূমিকম্পের প্রায় তিন দিন পরও ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত অনেককে বের করা হচ্ছে। অবাক করা বিষয় হলো- জীবিতদের মধ্যে অনেক শিশুও রয়েছে। অনেক শিশুকে প্রায় অক্ষত উদ্ধার করা হয়েছে।

turkey earthquake
উদ্ধারের পর আব্দুল আলিম

সোমবার ৭.৮ ও ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্পের পর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল। সেখানে প্রায় ১৬ হাজার মানুষের মৃত্যু এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হয়েছে। আরও হাজার হাজার মানুষ ধ্বংসস্তূপে আটকে আছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকেপড়া লোকদের বের করে আনতে যত দেরি হবে, তাদের জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা তত কমে আসবে। 

turkey earthquake
আব্দুল আলিমের স্ত্রী ও দুই কন্যার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়

যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক ইউনিভার্সিটির জরুরি সেবা বিশেষজ্ঞ ড. রিচার্ড এডওয়ার্ড মুনের মতে, পানি ও অক্সিজেনের স্বল্পতাই ভুক্তভোগীদের বেঁচে থাকার পথে প্রধান বাধা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীর থেকে দৈনিক ১ দশমিক ২ লিটার পর্যন্ত পানি বেরিয়ে যেতে পারে। এটি ঘটতে পারে প্রস্রাব, নিঃশ্বাস, জলীয়বাষ্প ও ঘামের মাধ্যমে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকেপড়া লোকদের শরীর থেকে এরই মধ্যে প্রচুর পানি বেরিয়ে গেছে। এ অবস্থায় একজন মানুষ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার ওপর, সিরিয়া-তুরস্কে এখন চলছে শীতকাল। একজন গড়পড়তা প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীর উষ্ণ থাকার ক্ষমতা না হারিয়ে সর্বনিম্ন ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে।

আরও পড়ুন: সময় ফুরাচ্ছে, কমছে আশা: হৃদয়বিদারক চিত্র তুরস্ক-সিরিয়ায়

আটকেপড়া ব্যক্তিদের আত্মীয়রা ধ্বংসস্তূপের পাশে অপেক্ষা করছেন। তাদের আশা, স্বজনদের হয়তো জীবিত খুঁজে পাওয়া যাবে। তারা সবাই আল্লাহর রহমতের দিকে চেয়ে আছেন।

একে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর