শনিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

শুল্ক: মার্কিন অর্থনীতিতে মন্দার মেঘ, তবু সিদ্ধান্তে অনড় ট্রাম্প

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৪৬ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অব্যাহত। ছবি: সংগৃহীত

বিভিন্ন দেশের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের মাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্বজুড়ে শুরু হয়েছে অস্থিরতা। খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই তার বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। ইতোমধ্যে মার্কিন শেয়ার বাজারে ধস নেমেছে। বিপাকে পড়েছেন মার্কিনিরা। দেশটির অর্থনীতিতে মন্দার মেঘ দেখা দিয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তবে কোনো কিছুতেই নিজ সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়ানোর পাত্র নন ট্রাম্প। তার সাফ কথা, বিশ্ববাজার শেয়ার সূচকের ব্যাপক রক্তক্ষরণের পরেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোনো মুদ্রাস্ফীতি হবে না। যদিও এই টালমাটাল অবস্থার জন্য ট্রাম্প, পূর্ববর্তী আমেরিকান নেতাদের অর্থনৈতিক নীতিকে দায়ী করেছেন। তার দাবি, পূর্ববর্তী নীতির কারণেই চীনসহ বিদেশি শক্তিগুলো আমেরিকার থেকে প্রচুর সুবিধা নিয়েছে।


বিজ্ঞাপন


বিশ্বব্যাপী বাজার মন্দা নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি পোস্টে বলেছেন, ‘তেলের দাম কমেছে, সুদের হার কমেছে (ধীর গতিতে ফেডের হার কমানো উচিত!), খাদ্যের দাম কমেছে, কোনো মুদ্রাস্ফীতি নেই। দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতনের শিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতি সপ্তাহে অপব্যবহারকারী দেশগুলো থেকে ইতোমধ্যেই বিদ্যমান শুল্কের ওপর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আনছে।’

চীন পাল্টা শুল্ক হিসেবে মার্কিন পণ্যের ওপর বাড়তি কর চাপিয়েছে। যা নিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, ‘চীন সম্প্রতি ৩৪ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধি করেছে। এটাই ওদের প্রতিশোধ। ওরা আমাদের সতর্কবাণী উপেক্ষা করেছে। চীন আমাদের পূর্ববর্তী নীতির কারণে বহু সুবিধা পেয়েছে। ওরাই আমাদের দেওয়া সুবিধার সবচেয়ে বড় অপব্যবহারকারী।’ ট্রাম্পের দাবি, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার মুখে চীনা বাজার ধ্বংস হচ্ছে।

Trump

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপে যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংকিং কোম্পানি গোল্ডম্যান শ্যাকস।


বিজ্ঞাপন


ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপে যুক্তরাষ্ট্রে ৪৫ শতাংশ মন্দার ঝুঁকি বেড়েছে বলে মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংকিং কোম্পানি গোল্ডম্যান শ্যাকসের গবেষণায় বলা হয়েছে। 

ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপে যুক্তরাষ্ট্রে ৪৫ শতাংশ মন্দার ঝুঁকি বেড়েছে বলে মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংকিং কোম্পানি গোল্ডম্যান শ্যাকসের গবেষণায় বলা হয়েছে। এতে সতর্ক করে বলা হয়, ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক অবস্থা খারাপ হচ্ছে এবং বিনিয়োগের ওপর ক্রমাগত চাপ পড়ছে।

সোমবার (৭ এপ্রিল) ‘ইউএস ডেইলি: কাউন্টডাউন টু রিসেশন’ শীর্ষক একটি গবেষণা নোটে, গোল্ডম্যান আগামী ১২ মাসে দেশের অর্থনীতিতে ৪৫ শতাংশ মন্দা বাড়ার আশঙ্কা করেছে। যা আগের সপ্তাহের চেয়ে ৩৫ শতাংশ বেশি বাড়বে। এতে আরও দেখানো হয়, ২০২৫ সালের মার্কিন অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ১.০ শতাংশ থেকে কমে ০.৫ শতাংশ হয়েছে।

এদিকে নিজের আরোপিত শুল্ক নিয়ে বিরোধিতা যত বাড়ছে ততই কঠোর মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছেন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশটির সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান। যারা শুল্ক প্রত্যাহার করতে চাইতে তাদের হুঁশিয়ার করে দিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, শুল্ক প্রত্যাহার করতে চাইলে বিভিন্ন দেশের সরকারকে মোটা অঙ্কের অর্থ পরিশোধ করতে হবে। তিনি আরোপিত শুল্ককে ওষুধ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

স্থানীয় সময় রোববার এয়ারফোর্স ওয়ান উড়োজাহাজে বসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইঙ্গিত দেন যে, বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারে যে কোটি কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে, তাতে তার কিছু আসে যায় না।

ট্রাম্প বলেন, আমি চাই না কোনো কিছুতে ধস নামুক। তবে মাঝেমধ্যে কিছু জিনিস ঠিক করার জন্য আপনাকে ওষুধ নিতে হয়।

Trump2

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি সপ্তাহান্তে ইউরোপ ও এশিয়ার নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এসব নেতা শুল্ক কমানোর জন্য তাকে রাজি করানোর চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, তারা আলোচনার টেবিলে আসছেন। তারা আলোচনা করতে চান। তবে আমাদের বছরভিত্তিক প্রচুর অর্থ পরিশোধ না করা পর্যন্ত কোনো আলোচনা হবে না।

ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। চলমান বিক্ষোভকে সমর্থন জানিয়েছেন দেশটির সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস। ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকানদের বিরুদ্ধে হেরে যাওয়া হ্যারিস ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য আমেরিকানদের প্রশংসা করেন এবং বলেন, তাদের কণ্ঠস্বর 'অনির্বাচিত বিলিয়নেয়ারদের' চেয়েও জোরালো হবে।

এক্সে একটি পোস্টে হ্যারিস লিখেছেন, 'আজ আমাদের দেশের প্রতিটি রাজ্যে, আমেরিকানরা প্রশাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে কারণ তারা পূর্ণ গতিতে প্রজেক্ট ২০২৫ বাস্তবায়ন করছে। তাদের এই বিক্ষোভ ‘সামাজিক নিরাপত্তা, মেডিকেয়ার , শিক্ষা বিভাগ এবং হেড স্টার্টের মতো কর্মসূচির পক্ষে; বিশুদ্ধ বাতাস এবং পানির পক্ষে; সরকারি হস্তক্ষেপ ছাড়াই নিজের শরীর সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারের পক্ষে দাঁড়াতে  আপনার কণ্ঠস্বর এবং শক্তি ব্যবহার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।’

জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন