সোমবার, ৬ মে, ২০২৪, ঢাকা

বঙ্গবাজারে অন্ধকারে চলছে পোড়া লোহার সন্ধান!

খলিলুর রহমান
প্রকাশিত: ১১ এপ্রিল ২০২৩, ০৭:২৯ এএম

শেয়ার করুন:

বঙ্গবাজারে অন্ধকারে চলছে পোড়া লোহার সন্ধান!
ছবি: ঢাকা মেইল।

‘সারাদিন রোজা ছিলাম। তাই আসতে পারি নাই। ইফতার শেষে এসেছি। এখনও আছি। ১০ থেকে ১৫ কেজি হয়ে গেলে চলে যাব।’

সোমবার (১০ এপ্রিল) রাত ৯ টার দিকে বঙ্গবাজার ধ্বংসস্তূপে পোড়া লোহার সন্ধানে আসা পঞ্চাশোর্ধ্ব রহিমা বেগম ঢাকা মেইলকে এসব কথা বলেন।


বিজ্ঞাপন


রহিমা বলেন, আমার বাসা নাজিরাবাজার এলাকায়। আমার স্বামী একটি জুতার কারখানায় চাকরি করেন। অল্প বেতনে আমাদের সংসার চলে। কিন্তু রমজানে দ্রব্যমূল্য বেশি হওয়াতে হিমশিম খাচ্ছেন আমার স্বামী। তাই তাকে সহযোগিতা করার জন্য বঙ্গবাজারের ধ্বংসস্তূপে পোড়া লোহার সন্ধানে এসেছি। 

তিনি বলেন, দিনে লজ্জায় আসতে পারি নাই। তাই ইফতারের পর অন্ধকারের মধ্যে এসেছি। সঙ্গে আমার ছেলে রয়েছে। মা-ছেলে মিলে ১০ থেকে ১৫ কেজি লোহা পাইলে চলে যাব। 

Bongobazarরহিমা আরও বলেন, লোহাগুলো নিয়ে পুরান ঢাকার ভাঙারি দোকানে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পারব। এতে বাড়তি আয় হবে। ভালোভাবে ঈদের জামাকাপড় কিনতে পারব। 

শুধু রহিমা নয়, তার মতো আরও শত শত মানুষকে বঙ্গবাজারের সেই ধ্বংসস্তূপে পোড়া লোহার সন্ধান করতে দেখা গেছে।


বিজ্ঞাপন


সোমবার (১০ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বঙ্গবাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শত শত মানুষ সেই ধ্বংসস্তূপে লোহার সন্ধান করছেন। তাদের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের শ্রমিকদেরও ওই এলাকা পরিষ্কার করতে দেখা গেছে।

এর আগে ধ্বংসস্তূপে ব্যবসায়ীদের নিজেদের শেষ স্বপ্ন খুঁজতে দেখা গেছে। কিন্তু আজ ঠিক উল্টো চিত্র। কেউ কেউ লাইটের আলোয়, আবার কেউবা অন্ধকারের মধ্যেই লোহার সন্ধান করছেন। সবাই নিম্নআয়ের মানুষ। অবশ্য এরমধ্যে ‍কিছু ভাঙারি ব্যবসায়ীও রয়েছেন। 

Bongobazarআবুল হোসেন নামের এক ব্যক্তি ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি পেশায় একজন রিকশাচালক। দীর্ঘদিন থেকে পুরান ঢাকার বংশাল এলাকায় বসবাস করি। আজ দিনে রিকশা চালানোর সময় দেখি অনেকেই বঙ্গবাজারের ধ্বংসস্তূপে এসে লোহার সন্ধান করছে। তাই সন্ধ্যার পর আমিও লোহার সন্ধানে এখানে এসেছি। কয়েক কেজি লোহা পাইলে ভাঙারি দোকানে বিক্রি করব। 
 
ইসমাইল হোসেন নামে আরেকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনি দুদিন ধরে বঙ্গবাজারের ধ্বংসস্তূপ থেকে পোড়া লোহা ও টিন নিয়ে ভাঙারি দোকানে বিক্রি করে আসছেন। দুই দিনে প্রায় ১০ হাজার টাকার লোহা ও টিন বিক্রি করেছেন। তাই আজ সকাল থেকে আবারও লোহার সন্ধানে বঙ্গবাজারে এসেছেন। মাঝখানে বিকেলে চলে গিয়েছিলেন, পরে সন্ধ্যায় আবারও এসেছেন।

আজ কত কেজি লোহা সংগ্রহ করেছেন জানতে চাইলে ইসমাইল বলেন, দিনে ১০ কেজি লোহা সংগ্রহ করে ৪০০ টাকা পেয়েছি। তাই সন্ধ্যার পর আবার এসেছি। এখনও যদি আরও ১০ কেজি লোহা সংগ্রহ করতে পারি তাহলে চলে যাব।

Bongobazarএদিকে, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, বঙ্গবাজার মার্কেটের জায়গা পরিষ্কারের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে পোড়া লোহা, টিন ৪০ লাখ টাকায় মার্কেটের মালিক সমিতির অনুমতিক্রমে বিক্রি করা হয়েছে। এ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত সব ব্যবসায়ীকে দেওয়া হবে। এখন সিটি করপোরেশন সেই এলাকার পোড়া মাটি, ইট সরানোর কাজ করছে। সেগুলো সারিয়ে জায়গা সামান করা হচ্ছে। 
 
গত ৪ এপ্রিল সকালে বঙ্গবাজার মার্কেটে ভয়াবহ আগুন লাগে। মুহূর্তের মধ্যেই আগুনের লেলিহান শিখা পুরো মার্কেটে ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিট পর্যায়ক্রমে আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেয়। শেষ পর্যন্ত ৭৫ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিভে গেলেও কিছু রেখে যায়নি স্মরণকালের ভয়াবহ এই আগুন। সবকিছু পুড়িয়ে ব্যবসায়ীদের নিঃস্ব করে থেমে যায় আগুন। 

Bongobazarব্যবসায়ীরা বলছেন, সবমিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার দোকান পুড়েছে। যাতে কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে, সংশ্লিষ্টদের আশা- আগামীকাল মঙ্গলবারের (১১ এপ্রিল) মধ্যে কাজ শেষ হবে। পরদিন বুধবার সকাল থেকেই ব্যবসায়ীরা দোকান পেতে বসতে পারবেন।

এ বিষয়ে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক শাহাদাত হোসেন জানান, বুধবার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়রের দোকান উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। এরপর থেকে ব্যবসায়ীরা অস্থায়ীভাবে দোকান করার সুযোগ পাবেন।

কেআর/এমএইচএম/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর