সোমবার, ৬ মে, ২০২৪, ঢাকা

ধ্বংসস্তুপের পাশে হাউমাউ করে কাঁদছেন ব্যবসায়ীরা

মাহফুজ উল্লাহ হিমু
প্রকাশিত: ০৪ এপ্রিল ২০২৩, ০৫:২৮ পিএম

শেয়ার করুন:

ধ্বংসস্তুপের পাশে হাউমাউ করে কাঁদছেন ব্যবসায়ীরা

রাজধানীর বঙ্গবাজারে মার্কেটে আগুন লাগার পর আট ঘণ্টার বেশি সময় পার হয়েছে। এখনো জ্বলছে আগুনের লেলিহান শিখা। ধ্বংসস্তূপের মাঝ থেকে কুণ্ডলী পাকিয়ে উঠছে ধোঁয়া, মাঝেমাঝেই ধপ করে জ্বলে উঠছে আগুন। ফায়ার সার্ভিস ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবকরা প্রাণপণে লড়ে যাচ্ছেন আগুনের বিরুদ্ধ। তবে কোনো কিছুতেই যেন হার মানতে রাজি নয় সর্বগ্রাসী আগুন।

মার্কেটের ঠিক সামনেই এই ঘটনার সাক্ষী হতে ভিড় করেছে দায়িত্ব পালনরত পুলিশ, র‍্যাব, গণমাধ্যমকর্মীসহ নানা শ্রেণি-পেশার উৎসুক জনতা। তবে এর মধ্যেও এক ভিন্ন শ্রেণির মানুষ রয়েছে। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে অশ্রুসজল চোখে বসে আছেন তারা। কেউ কেউ আবার কখনও হাউমাউ করে কেঁদে উঠছেন। নানা অভিযোগ করছেন ফায়ার সার্ভিসের বিরুদ্ধে। কোটি কোটি টাকার সম্পদ, জীবনের সব সঞ্চয় হারিয়েছেন তারা। এই হতভাগ্য মানুষেরা হলেন এই মার্কেটের ব্যবসায়ী।


বিজ্ঞাপন


মার্কেট সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, বঙ্গবাজারের আগুন লাগা মার্কেটগুলোতে পাঁচ থেকে সাত হাজার দোকান ও গুদাম ছিল। আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ক্যাশ ও ঋণের কোটি কোটি টাকার মালামাল স্টোর করেছিলেন তারা। অনেকে আবার দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়েছিলেন আগাম অর্ডার। তবে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানেই নিঃস্ব হয়ে গেছেন তারা।

trade2

তেমনই একজন মোক্তার হোসেন। আগুনের সূচনাস্থল আদর্শ মার্কেটে তার একটি দোকান ও গুদামঘর ছিল। অশ্রুভেজা চোখে বসে থাকা এ ব্যবসায়ীর ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমার দোকানে এক কোটি টাকার সম্পদ ছিল। ঈদ উপলক্ষে নতুন মাল তুলেছিলাম, গুদামও পরিপূর্ণ ছিল। এর কিছু ক্যাশ টাকায় কিছু বাকিতে আনা। অন্তত ৬০ লাখ টাকার মাল ঋণে এনেছিলাম। আমার তো সব গেল। আমি এখন একদম নিঃস্ব হয়ে গেছি।’

আল মক্কা গার্মেন্টেসের আব্দুল আহাদ আহাজরি করে নিজের হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে দেখিয়ে বলছিলেন, আজ ছয় লাখ টাকার মাল ডেলিভারি দেবার কথা ছিল। একের পর এক কাস্টমার মেসেজ দিচ্ছে, কল দিচ্ছে। তাদের কী বলব? তাদের কী মাল দেব। আমার নিজেরই তো সব শেষ হয়ে গেছে।


বিজ্ঞাপন


আহাদের বাবা, চাচা ও ভাইদের মিলে চারটি দোকান ও তিনটি গোডাউন ছিল এই মার্কেটগুলোতে। যার একটি দেখাশোনা করতেন তিনি। দোকান ও গোডাউন মিলে ৭-৮ কোটি টাকার মালামাল ছিল বলে দাবি তার। সকল পণ্যই ছিল পোশক, যা ঈদ উপলক্ষে আনা হয়েছিল।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, আমার বাড়ি বঙ্গবাজার মার্কেটের পাশেই। সাধারণ সময় আটটার পর মার্কেটে আসি। ঈদের সময় অনেক মাল ডেলিভারি দিতে হবে তাই আগে আসার পরিকল্পনা ছিল। সে জন্য সকাল সাড়ে সাতটায় এলার্ম দেওয়া ছিল। কিন্তু সাড়ে ছয়টার সময়ই চিল্লাচিল্লিতে ঘুম ভাঙে। জানালায় তাকিয়ে দেখি ধোঁয়া উড়তেছে। তাড়াতাড়ি মার্কেটে আসি। তখনও আমার আমার এক দোকানে পুরোপুরি আগুন লাগেনি। আমি দৌড় দিয়া দোকানে যাই, ক্যাশ বাক্স আনার জন্য। কিন্তু দোকানের কাছে যাওয়ার পর উপরের তালার একটা এসি বিস্ফোরণ হয়। আমার হাতে, পিঠে আগুনের ছ্যাকা লাগে। পরে চাচারা বাইরে বের করে আনে।

trad3

মহানগরী মার্কেটের ব্যবসায়ী বিপ্লব ঢাকা মেইলকে বলেন, তিনি গত ১০-১২ বছর যাবত এই মার্কেটে ব্যবসা করছেন। তার ব্যবসায়ী জীবনে এমন ঘটনা ঘটেনি। এর আগেও হয়েছে, তবে সবকটি মার্কেট একসাথে পুড়ে যাওয়ার মতো ভয়ানক ঘটনা ঘটেনি। তার প্যান্টের দোকানে ৫০-৬০ লাখ টাকার মালামাল ছিল। যা মূলত বিভিন্ন ধরনের জিন্স ও গ্যাবাডিন প্যান্ট।

ইনসুরেন্স ও ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ক্যাশ টাকার মাল, বেচবো নতুন আনবো এই হিসেবে ব্যবসা করি। ৫০-৬০ লাখ টাকার মাল ছিল। গতকালও ৫-৬ লাখ টাকার মাল তুলেছি। এখন আমি নিঃস্ব, আমার কোনো ইনসুরেন্সও নাই।’

এ সময় আগুন নেভানোকে কেন্দ্র করে ফায়ার সার্ভিসের অবহেলার অভিযোগ করেন এই ব্যবসায়ী।

এমএইচ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর