রোববার, ৫ মে, ২০২৪, ঢাকা

‘হেড অফিসের পাশের আগুন নেভাতে এত দেরি কেন’

মাহফুজ উল্লাহ হিমু
প্রকাশিত: ০৪ এপ্রিল ২০২৩, ০৭:৩৭ পিএম

শেয়ার করুন:

‘হেড অফিসের সামনের মার্কেট যদি বাঁচাতে না পারেন, তাহলে দেশের কোথায় পারবেন!’ এভাবেই ফায়ার সর্ভিসের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করছেন রাজধানীর বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা। তদের দাবি- আগুন লাগার সাথে সাথেই ফায়ার সার্ভিস কার্যকর পদক্ষেপ নিলে হয়ত ৪০-৫০টি দোকানেই আগুন সীমাবদ্ধ থাকতো। শুরুতে তাদের অবহেলায় একের পর এক মার্কেটে ছড়িয়েছে আগুন। পুড়েছে পাঁচ থেকে সাত হাজার কাপড়ের দোকান ও গুদাম। এতে নিঃস্ব হয়েছে ঈদের আগে কাপড় মজুদ করা হাজার হাজার ব্যবসায়ী।

মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) দুপুরের দিকে কাজে ধীরগতির অভিযোগ তুলে ফায়ার সার্ভিসের সদর দফতরে হামলা ও ভাঙচুর চালান বিক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা।


বিজ্ঞাপন


ক্ষোভ প্রকাশ করে মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বলেন, এসব মার্কেটে পাঁচ হাজার ব্যবসায়ী রয়েছেন। প্রতিজনের সাথে তিন থেকে পাঁচজন স্টাফ ছিল। এখানে ফায়ার সার্ভিসের অফিস থেকে মার্কেটের দূরত্ব এক মিনিটের। এখানে চার-পাঁচটা মার্কেট ছিল। তারা যদি সত্যিকার অর্থেই কাজ করতেন তাহলে অন্তত একটা মার্কেট রক্ষা করে দেখিয়ে দিতেন যে, কাজ করেছেন। ফায়ার সার্ভিসকে কাজ না দিয়ে এটা ব্যবসায়ীদের দেওয়া হলেও একটা একটা টিন খুলে আগুন আটকে দিতেন বলেও দাবি ব্যবসায়ীদের।

গুলিস্তান মার্কেটের ১৬৬১ নম্বর দোকানের মালিক সিরাজ পাটুয়ারি ও ৬৮৭ নম্বর দোকানে মালিক পারভেজ আলম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘শুরুতে যে ইউনিট এসেছে, তারা এসেই বলছে পানি নাই। মসজিদের হুজুর বলছে পানি দেন, উনারা বলে আমাদের উপর থেকে এখনও নির্দেশ আসেনি।’

fire2

তারা আরও বলেন, ‘আমাদের যদি যাওয়ার সুযোগটা দেওয়া হতো তাহলে অন্তত কিছু মাল রক্ষা করতে পারতাম। তারা গেট বন্ধ করে রেখেছিল। তাদের বললাম গেট খুলে দিতে, তারা বলেছে রিস্ক ছিল। রিস্ক ছিল মানলাম, কিন্তু এতগুলো মার্কেটের একটা রক্ষা করে আপনারা আমাদের দেখাতেন যে, কাজ করছেন। কিন্তু আপনি পারেননি, একটা দোকান, একটা কাপড়ও রক্ষা করতে পারেননি। তাহলে আপনি করেছেনটা কী? তাদের চেষ্টাটাও তো দেখতে পারলাম না। তাদের হেড অফিসের সামনে মার্কেট, এক মাথা থেকে অন্য মাথায় আগুন চলে গেছে। আপনি করেছেনটা কী?’


বিজ্ঞাপন


ফায়ার সার্ভিসের অবহেলাকে দায়ী করে তারা বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ দায়ী করি ফায়ার সার্ভিসকে। তাদের অবহেলার জন্য এই অবস্থা হয়েছে। হেড অফিসের সামনের মার্কেট যদি রক্ষা করতে না পারেন, তাহলে দেশের কোথায় পারবেন?’

ইকবাল নামে ওপর এক ব্যবসায়ী ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এত সুন্দর ফায়ার সার্ভিস থাকার পরেও আমাদের মার্কেটগুলো শেষ হয়ে গেল। ওদের গোল্ড মেডেল দেওয়া উচিত। আমি আগুন লাগার আধ ঘণ্টার মধ্যে এসেছি। আমার বাসা রায়েরবাগ, ওইখান থেকে এখানে চলে আসতে পেরেছি অথচ রাস্তার এপার ওপার তারা আসতে পারেনি। তখন ফায়ার সার্ভিসের এক কি দুইটা ইউনিট ছিল। তারা বাইরে থেকে পানি দিচ্ছিল। ভেতর থেকে যদি পানি দিতো তাহলে হয়তো আগুনটা নিভে যেতো। গাছের গুড়া রেখে আগায় পানি ঢাললে তো হবে না। ওরা হেলাফেলা করেছে বলেই এমন হয়েছে। নয়ত ১০-১২ বা সর্বোচ্চ ৫০টা দোকান পুড়তো। এত দোকান তো পোড়ার কথা না।’

ওপর এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমার ১৪টা দোকানে মোট ২১ জন স্টাফ ছিল। আমার বাসা আনন্দবাজার, আমি ফায়ার সার্ভিসের আওয়াজ শুনে বের হয়েছি। বের হয়ে দেখলাম, মার্কেটে আগুন লেগেছে। তখন আগুনটা এত বড় ছিল না। তারা চেষ্টা করলে নেভাতে পারতো। এখানে চারটা মার্কেট ছিল, আদর্শ, মহানগরী, গুলিস্তান বঙ্গবাজার। মার্কেটের একটা অংশে আগুন লেগেছিল, আমরা মার্কেট কমিটিকে দিয়ে ফায়ার সার্ভিসকে কল দিয়েছি। তারা ভেতরে যায়নি। বাইরে থেকে দাঁড়িয়ে আগুন দেখেছে। রাস্তার ওইপাশে অনেকগুলো মার্কেট ছিল, ওইগুলোতেও আগুন গেছে। এটা তো এত দ্রুত যায়নি। আমাদের দুই চোখের ফাঁকে যতটা জায়গা, ফায়ার সার্ভিস থেকে মার্কেটের দূরত্ব ওতটুকু ছিল। কিন্তু তারা কিছুই করতে পারেনি। চোখের সামনে সব মার্কেটে আগুন লাগতে দেখেছে।’

আগুনের ঘটনার শুরু থেকে বঙ্গবাজারে ছিলেন মার্কেটটির নৈশ প্রহরী শাহ আলম। ঘটনার সূত্রপাতের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘একেকটা দোকানে কোটি টাকার উপরে মাল ছিল। আর ক্যাশ টাকা তো ছিলই। পুরাটাই কাপড়ের মার্কেট ছিল। অনেক গুদামও ছিল। আদর্শ মার্কেটে থেকে আগুন শুরু। ওই দিকে কেউ মালামাল সরাতে পারেনি। অপর দিকটাই কিছুটা সরাতে পেরেছে। যাদের বাড়ি আশে পাশে ছিল তারা কিছুই উদ্ধার করতে পেরেছে। তবে বেশিরভাগ দোকানির বাড়ি রায়েরবাগ, শনির আখড়ার দিকে। তারা কিছুই উদ্ধার করতে পারেনি। ভোর সাড়ে ৫টায় আগুন লেগেছে। প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের একটা গাড়ি এসেছিল। কিছুক্ষণ পানি দেওয়ার পর তা শেষ। কিছুক্ষণ পর আরও গাড়ি আসছে।’

fire3

তবে ব্যবসায়ীদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো ফায়ার সার্ভিসের সদর দফতরে হামলায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন বাহিনীটির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন। একই কথা জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনও।

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বলেন, অগ্নিকাণ্ড কিংবা দুর্ঘটনায় সবার আগে ডাক আসে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যদের। প্রাণপণ চেষ্টা করে অগ্নিনির্বাপণের চেষ্টা করেন বাহিনীর সদস্যরা। উদ্ধার কাজে গিয়ে মারা যাওয়ার ঘটনাও আছে। মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) সকালে বঙ্গবাজারে আগুনের খবর শোনার কয়েক মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছান ফায়ার ফাইটাররা। কিন্তু বিক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা তাদের বিরুদ্ধে ধীরগতির অভিযোগ তুলে আমাদের সদর দফতরে হামলা করেছে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আগুন লাগা মার্কেটটি ও ফায়ার সার্ভিসের অফিস রাস্তার এপাশ-ওপাশ। আমি ফায়ার সার্ভিসের ডিজি হিসেবে বলতে চাই, আমাদের ওপর কেন হামলা হলো? কারা করেছে? এ ঘটনায় তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরে হামলার বিষয়ে পুলিশপ্রধান বলেন, আপনারা দেখেছেন যে, সেখানে হাজার হাজার লোক ছিল। আমরা খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। ফায়ার সার্ভিসসহ আমাদের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে লড়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে যারা ফায়ার সার্ভিসের সদর দফতরে হামলা চালিয়েছে তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

এমএইচ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর