রোববার, ৫ মে, ২০২৪, ঢাকা

এ ক্ষতি কি পূরণ হবে?

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ০৬ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৪৬ পিএম

শেয়ার করুন:

এ ক্ষতি কি পূরণ হবে?

কাপড় ব্যবসায়ী দ্বীন মোহাম্মদ (৩০)। রাজধানীর বঙ্গবাজার মার্কেটে ব্যবসা করতেন। কিন্তু সেই গল্প এখন অতীত। কারণ দুইদিন আগে তার সব পুঁড়ে ছাঁই হয়ে গেছে। তিনি এখন নিঃস্ব মানুষের মিছিলের সহযাত্রী। তবে উঠে দাঁড়াতে চান দ্বীন মোহাম্মদ। তাইতো বুধবার সকাল আটটায় যাত্রাবাড়ী থেকে এসেছেন নিজের নাম তালিকায় তোলার জন্য। এই তালিকা কোনো রিলিফ বা ত্রাণ দেওয়ার জন্য নয়, মঙ্গলবারের আগুনে ভাগ্য পুঁড়ে যাওয়া দোকান মালিকদের তালিকা।

বুধবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে ফুলবাড়িয়া ফ্লাইওভারের নিচে তপ্ত দুপুরে সারি সারি হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন শত শত মানুষ। সবার হাতে ছিল নিজেদের দোকানের ভিজিটিং কার্ড। সারির সামনে দুজন করে টেবিলে বসে খাতায় নাম তুলছেন। এরই ফাঁকে কথা হচ্ছিল দ্বীন মোহাম্মদের সঙ্গে। 


বিজ্ঞাপন


fire

তিনি বলছিলেন, সব শেষ হইয়্যা গেল। আইজ শূণ্য হাত নিয়া লাইনে দাঁড়াইছি। যদি কিচ্চু হয়। 

কথাগুলো যখন দ্বীন মোহাম্মদ বলছিলেন তার পেছনে আরও কয়েক শতাধিক মানুষ। সকলে এক বুক আশা নিয়ে বুধবার হাজির হয়েছিলেন পুঁড়ে যাওয়ার মার্কেটের পাশের সড়কে। যেখানে চলছিল ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের নামের তালিকা প্রণয়নের কাজ। 

তিনি জানালেন, তারা প্রত্যেক ব্যবসায়ী প্রতি মাসে দোকান ভাড়া বাবদ ১০ হাজার করে টাকা দিতেন। এছাড়াও অন্যান্য সার্ভিস চার্জ তো ছিলই। তার দোকানে যা যা ছিল সব পুঁড়ে গেছে। এখন সেই দোকনের চিহ্নটুকুও নেই। তিনি দোকান ফেরত পেতে চান। যদিও সেটি কার মাধ্যমে কিভাবে পাবেন সেই তথ্য অবশ্য তার জানা নেই। তবে মার্কেট সমিতির নেতারা নাকি তাদের আশ্বাস দিয়েছেন।


বিজ্ঞাপন


বঙ্গমার্কেটের দ্বিতীয় তলায় এক্সপোর্ট কোয়ালিটির গেঞ্জি ও সোয়েটার বিক্রি করতেন এম আর গার্মেন্টসের মালিক জুয়েল রানা। এই দোকানই ছিল তার আয়ের উৎস। কিন্তু মঙ্গলবার থেকে স্বাচ্ছন্দের গতিতে চলা সংসারে নেমে এসেছে স্থিতিবস্থা। কি হবে তিনি জানেন না। সামনেই ঈদ। কিভাবে পরিবার চলবে আর পরিজনদের নিয়ে ঈদ করবেন তার উত্তর জানা নেই। তবে তিনি আশাবাদী সরকার তাদের কিছু সহযোগিতা করলে তারা উঠে দাঁড়াতে পারবেন। সেই আশায় বুক বেধে তিনিও আজ অন্যদের মতো ছুটে এসেছেন তার ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানের নাম তালিকায় তোলার জন্য। 

এম এস আলম ছিলেন বঙ্গমার্কেটের এলিট ফ্যাশন হাউজের মালিক। তার দোকানে কয়েকজন কর্মচারীও খাটতেন। বঙ্গমার্কেটে একদিন আগেও তার কোটি টাকার ব্যবসা ছিল। কিন্তু আজ তার হাত শূন্য। বুধবার সকালে মার্কেটে ভাড়া নেওয়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তখন অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে আছেন তিনিও। প্রায় দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে তখনো সামনে যেতে পারেননি। 

fire

আলম বলছিলেন, যে ক্ষতি হয়েছে তা তো পূরণ হওয়ার নয়। সরকার এখন আমাদের কিছু করে টাকা-পয়সা দিলে হয়তো আমরা চলতে পারব। কিন্তু আগের মতো তো আর দিন কাটবে না। আর ব্যবসাপাতি নিয়ে আগের মতো দাঁড়াতে পারব কিনা তাও জানি না। 

এই ব্যবসায়ীর সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল তাদের চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ। তারা আদৌ জানেন না দোকান পাবেন কিনা। যে তালিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে তা কতটুকু বাস্তবায়ন হবে তা নিয়েও সন্দেহ আছে তাদের। কারণ হিসেবে তারা বলছিলেন, আগুন লাগার আগে সিটি করেপােরেশনের পক্ষ থেকে মার্কেট ভেঙ্গে নতুন মার্কেট করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তখন তারা রাজি হননি। আদালতে স্থগিতাদেশ নিয়ে চলছিল সেই মার্কেট। এখন পুড়ে গেছে।  সে স্থানে নতুন মার্কেট হলে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানীরা দোকান কেনার মত সামর্থ্য রাখেন কিনা সেটাও অনেকের প্রশ্ন।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা করছিলেন নাজমুল আলম। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল তিনি কার নির্দেশে এই তালিকা করছেন। তার উত্তর ছিল মার্কেট সমিতির নেতাদের নির্দেশে। এসময় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য তার কাছে ফোন নাম্বার চাইলে তিনি বলেন- নেতারা দেশের বাহিরে। বিদেশ থেকে আসলে মার্কেট নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। 

বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ফুলবাড়িয়া বঙ্গমার্কেটের দক্ষিণ দিকের সড়কে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছিল। অন্যদিকে পুড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তূপে তখন অনেকেই বিভিন্ন দোকানের পুড়ে যাওয়া মালামাল কুড়াতে ব্যস্ত।  কেউ কেউ পুড়ে যাওয়া দোকানের সামনে নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন। 

এমআইকে/এমএইচএম 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর