রোববার, ৫ মে, ২০২৪, ঢাকা

ভবন থেকে বের করা মালামাল নিয়েও বিপত্তি!

ওয়াজেদ হীরা
প্রকাশিত: ০৪ এপ্রিল ২০২৩, ০৫:৫০ পিএম

শেয়ার করুন:

ভবন থেকে বের করা মালামাল নিয়েও বিপত্তি!

রাজধানীর বঙ্গবাজার মার্কেটে লাগা ভয়াবহ আগুন থেকে নিজেদের দোকানের মালামাল অনেকেই বস্তায় ভরে বের করার চেষ্টা করেছেন। বেশ কিছু মালামাল অনেকেই বের করতে পারলেও সেটি নিয়ে এখন বিপত্তি দেখা দিয়েছে। বস্তায় বস্তায় জামা, প্যান্টসহ বিভিন্ন পণ্য রাখা হয়েছে রাস্তায়। চুরির ভয়ে কেউ দিচ্ছেন পাহাড়া। অনেকেই চিন্তিত এসব মালামাল কোথায় রাখবেন সেটি নিয়ে। কেউ নিজেদের বাসায়, আবার কেউ অন্যত্র গোডাউনে পাঠাচ্ছেন।

মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) সকালে বঙ্গবাজার মার্কেটে আগুন লাগলে প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণ আসে বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিটের আপ্রাণ চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। 


বিজ্ঞাপন


দুপুরের পর সরেজমিনে বঙ্গবাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এনেক্সকো ভবনের উল্টো পাশে সরকারি কর্মচারি হাসপাতালের সামনে এবং উভয়পাশে ফুটপাতে সড়কে রাখা হয়েছে বড় বড় বস্তায় বিভিন্ন মালামাল। কেউ শাড়ি, কেউ প্যান্ট, কেউ শার্ট, গেঞ্জি রেখেছেন রাস্তায়। কেউ কেউ মালামালগুলো পিকাপে উঠিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছেন। 

bu

শরিফ পরিচয়ে এনেক্সকো ভবনের এক ব্যবসায়ী বলেন, ভাই পাশের যেটা বঙ্গমার্কেট টিনশেডের সেটাতো পুড়ে ভবনসহ ছাই হয়ে গেছে। আমরা যারা এনেক্সকোতে ব্যবসা কি তারা কিছু মালামাল বের করতে পারছি। আমার নিচতলায় দোকান হওয়ায় সুবিধা ছিল। অনেক মাল রয়েও গেছে। 

কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন জানতে চাইলে পাশে থাকা ইব্রাহিম বলেন, আমাদের কদমতলির বাসায় নিয়ে যাব, সেখানেই রাখব। পরে চিন্তা করব কি করা যায়। 


বিজ্ঞাপন


বড় বড় বস্তার উপরে অনেক ব্যবসায়ীদের শুয়ে শুয়ে কাঁদতে দেখা যায়। অনেকেই কোনো কথাই বলতে চান না। কেউ কেউ কিছু বলতে চেয়েও শুধু কেঁদে যান, কি বলবেন সেটিও বুঝতে পারছেন না। কর্মচারি হাসপাতালের উল্টোপাশে ৭টি বস্তা পাহাড়া দিচ্ছেন সৌরভ। মামার দোকানের মালামাল উল্লেখ করে তিনি বলেন,  দেখছেনইতো ধোয়া উঠছে এখনও। কিছু মাল আছে মামাসহ আরও লোকজন আনছে। পাহাড়া না থাকলে চুরি হয়ে যাবে। 

মালামাল গাড়িতে উঠাতে থাকা একজন গাড়ি চালককের কাছে মালামাল কোথায় যাচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মালগুলো মাতুয়াইল নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে মালিকের গোডাউন রয়েছে। 

bu

হারুন রশিদ নামে একজন বলেন, অনেকেই নিয়ে যাচ্ছে। আমরা কি করব এখনও ঠিক করিনি। আমার ভাই দোকান করতেন। ৭ হাজার পিস বের করতে পেরেছিলাম। অনেক বের করা যায়নি। 

অনেকেই ভেজা মালামাল বের করে শুকানোর জন্য দিয়েছেন সেটিও দেখা যায়। একের পর এক পিকাপ এনে বের করা মালামাল লোড করে পাঠিয়ে দিতে দেখা যায়। আর যারা কি করবেন এখনও সিদ্ধান্ত নেননি তারা অপেক্ষা করছেন।

এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি করেছে ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন জানান, আগুন লাগার কারণ এবং ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণের জন্য ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যদের কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কেন এত সময় লেগেছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগুনের তীব্রতা এমনিতেই বেশি ছিল। তার ওপর উৎসুক জনতার কারণে ভালোভাবে কাজ করা যাচ্ছে না। সেইসঙ্গে পানির স্বল্পতা তো আছেই। আজ বিপরীত দিক থেকে বাতাসও বেশি। এ কারণেই আগুন ছড়িয়েছে দ্রুত। আর এসব কারণেই আগুন নিয়ন্ত্রণে এত বেশি সময় লেগেছে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) ভোর ৬টার দিকে গুলিস্তানের বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এর পাশেই ফায়ার সার্ভিসের সদর দফতর হওয়ায় সকাল ৬টা ১০ মিনিটের দিকে আগুনের খবর পেয়ে দুই মিনিটের মাথায় ৬টা ১২ মিনিটের দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় প্রথম ইউনিট। পরে পানির সংকট ও তীব্র বাতাসের ফলে তীব্রতা বাড়ায় আগুন নেভাতে বেশ বেগ পেতে হয়।

সবশেষ প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণ আসে। ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিটের আপ্রাণ চেষ্টায় দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিটের দিকে নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন। ততক্ষণে অনেক ব্যবসায়ীর স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সারাজীবনের সঞ্চয়ও শেষ অনেকের।

ডব্লিউএইচ/এমএইচএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর