রোববার, ৫ মে, ২০২৪, ঢাকা

ছাইয়ের স্তুপে ‘স্বপ্ন’ খুঁজে বেড়াচ্ছেন তারা

খলিলুর রহমান
প্রকাশিত: ০৪ এপ্রিল ২০২৩, ০৬:৫৮ পিএম

শেয়ার করুন:

ছাইয়ের স্তুপে ‘স্বপ্ন’ খুঁজে বেড়াচ্ছেন তারা

‘গতকাল দোকানের জন্য তিন লাখ টাকার নতুন মাল কিনেছিলাম। মালগুলো সব বস্তাবন্দি ছিল। আজ দোকানে এসে মালগুলো সাজানোর কথা ছিল। সেহেরির সময়ও কর্মচারীকে ফোন দিয়ে বলছিলাম- আজ দোকানে তাড়াতাড়ি আসতে। কিন্তু দোকানে আসার আগেই আগুনে পুড়ে সব ছাই হয়ে গেছে।’

হাউমাউ কান্নারত অবস্থায় ঢাকা মেইলকে কথাগুলো বলছিলেন মাসুদ নামের বঙ্গবাজারের এক ব্যবসায়ী। তিনি জানান, তার দোকানের সব কাজ ছিল মেয়েদের থ্রি পিস। প্রতিটি পিসের দাম ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। তিনি পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা।


বিজ্ঞাপন


মাসুদ বলেন, আমার দোকানে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকার কাপড় ছিল। গতকাল ঈদের জন্য নতুন আরও ২০ লাখ টাকার কাপড় কিনেছিলাম।

শুধু মাসুদই নন, বঙ্গবাজারে তার মতো কয়েক হাজার ব্যবসায়ীর দোকান পুড়ে ছাই হয়েছে। মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) সকালে আগুন লাগার পর থেকে তাদের দোকান থেকে মালগুলো সরানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।  আগুন লাগার পরপরই অনেক ব্যবসায়ী দোকানের মালামাল বের করে সামনের সড়কে রাখেন। এক দিকে আগুন অন্য দিকে মালামাল বের করার কারণে সামনের রাস্তায় মালামাল স্তুপ করতে থাকেন ব্যবসায়ীরা। প্রায় ঘণ্টাখানেক জ্বলার পর সকাল সাতটার দিকে বঙ্গবাজারের একাংশ ধসে পড়ে। এ সময় রাস্তায় স্তুপ করে রাখা কাপড়ে আগুন লাগে। স্তুপ করা কাপড়গুলো পাশের ইসলামিয়া মার্কেটের সিঁড়িতেও ছিল। এতে ওই মার্কেটেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

f1

এছাড়া পাশের মহানগর ও এনেক্সকো টাওয়ারে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। অনেক ব্যবসায়ী দোকান থেকে কাপড় বের করলেও পোড়া থেকে কাপড় রক্ষা করতে পারেননি।


বিজ্ঞাপন


জামিল আহমেদ নামের এক ব্যবসায়ী ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি দোকান থেকে প্রায় সব কাপড় বের করেদিলাম। কাপড়গুলো বের করে রাস্তায় রাখি। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, এক পর্যায়ে আগুন লাগা ভবনের একটি অংশ রাস্তায় ধসে পড়ে। এতে রাস্তায় রাখা কাপড়গুলোতে আগুন ধরে যায়। সেখানেই কাপড়গুলো পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

এদিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর রাস্তায় আগুনে পুড়ে ছাই হওয়া স্তুপে অনেকেই তাদের কাপড়ের সন্ধান চালাতে দেখা গেছে। অনেকেই ছাইয়ের স্তুপের নিচে তাদের কাপড় ভালো আছে কি না তা দেখার চেষ্টা করছেন। চোখের সামনে এভাবে স্বপ্ন ছাই হয়ে যাওয়া তারা মেনে নিতে পারছেন না।

ব্যবাসয়ীরা জানান, আদর্শ হকার্স মার্কেট, মহানগরী ও বঙ্গ গুলিস্তান- এই তিন অংশ মিলেই বঙ্গবাজার। প্রায় ২২ হাজার বর্গফুটের এই মার্কেটে পাঁচ হাজারের বেশি ছোট-বড় দোকান রয়েছে। ইতোমধ্যে সব দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

f3

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, বঙ্গবাজারের মার্কেটগুলোতে পাঁচ হাজারের বেশি দোকান ছিল। সব পুড়ে শেষ। কেউ কিছুই বের করতে পারেনি।

এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, আমরা এখন কী করব, আমাদের ব্যবসায়ীরা এখন কোথায় যাবে, কীভাবে ঈদ করবে। মাত্র ব্যবসা জমতে শুরু করেছিল। আর তখনই এই ঘটনা ঘটল।

মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) ভোর ৬টার দিকে গুলিস্তানের বঙ্গবাজারে এই অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এর পাশেই ফায়ার সার্ভিসের সদর দফতর হওয়ায় সকাল ৬টা ১০ মিনিটের দিকে আগুনের খবর পেয়ে দুই মিনিটের মাথায় ৬টা ১২ মিনিটের দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় প্রথম ইউনিট। একে একে যোগ দেয় ৪৮টি ইউনিট। পানির সংকট ও তীব্র বাতাসের ফলে আগুন নেভাতে বেশ বেগ পেতে হয়। প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও এখনো পুরোপুরে নেভেনি।

কেআর/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর