সোমবার, ৬ মে, ২০২৪, ঢাকা

অগ্নি প্রতিরোধ আইনের শিথিলতায় বিপর্যয় আরও বাড়বে

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮ এপ্রিল ২০২৩, ০৫:৫৪ পিএম

শেয়ার করুন:

অগ্নি প্রতিরোধ আইনের শিথিলতায় বিপর্যয় আরও বাড়বে
ভয়াবহ আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় বঙ্গবাজার। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর বঙ্গবাজার মার্কেটের অগ্নিকাণ্ডের বিশালতা ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির প্রেক্ষিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন নগর এলাকার সেমিফর্মাল তথা উপানুষ্ঠানিক মার্কেটগুলোর অগ্নিঝুঁকিসহ সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে অগ্রাধিকারের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এজন্য বিদ্যমান অগ্নিনির্বাপণ আইন, বিল্ডিং কোড ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালার যথাযথ বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছেন তারা। এসব ক্ষেত্রে শিথিলতা দেখালে বিপর্যয় আরও বাড়বে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

পাশাপাশি উপানুষ্ঠানিক মার্কেটগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও সেগুলোর ডিজাইন স্ট্যান্ডার্ড প্রণয়ন করা জরুরি বলে মনে করেন তারা। একই সাথে অগ্নিঝুঁকিতে থাকা বিপণি বিতানগুলোর অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথাযথ নির্দেশনার পাশাপাশি সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা প্রণয়ন দরকার বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।


বিজ্ঞাপন


শনিবার (৮ এপ্রিল) অনলাইনে আয়োজিত ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) ‘বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ড এবং উপ-আনুষ্ঠানিক মার্কেটের অগ্নিঝুঁকি: আইপিডির পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব বিষয় উঠে আসে।

আলোচকরা বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটগুলোকে যথাযথ নোটিশ দেওয়ার পাশাপাশি অগ্নিনির্বাপণ আইন অনুসারে ফায়ার সার্ভিস ও সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য সংস্থাগুলোকে আইন ও বিধিধারা নির্ধারিত ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করতে হবে। পাশাপাশি বিপণি বিতানের মালিক, ব্যবসায়ী ও ব্যবহারকারীদের সরকারি সংস্থাসমূহ ও সংশ্লিষ্ট আইনের নির্দেশনা যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে হবে। নগর উন্নয়ন পরিকল্পনায় যথাযথ ভূমি ব্যবস্থাপনা, ভবনের অনুমোদিত ব্যবহার ও দুর্যোগ প্রতিরোধে পুকুর-জলাশয়-জলাধার সংরক্ষণ করা দরকার। নগর এলাকায় অগ্নিনির্বাপণের জন্য ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপনের আশু উদ্যোগ নিতে হবে।

আইপিডির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, বঙ্গবাজার মার্কেট অগ্নিকাণ্ডের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হওয়া সত্ত্বেও শুধু নোটিশ দিয়েই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো তথা সিটি করপোরেশন ও ফায়ার সার্ভিস দায়মুক্ত হয়েছে। জনগণের জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে মার্কেটের স্বত্বাধিকারী হিসেবে সিটি করপোরশনের দায়িত্ব ছিল মার্কেটের অগ্নিনিরাপত্তার পরিপূর্ণ ব্যবস্থা নেওয়া। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের অসহযোগিতা এবং উদাসীনতারও দায় আছে, যা দোকান মালিক সমিতি ও ব্যবসায়ীরা কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। ফায়ার সার্ভিস ও সিটি করপোরশনের পক্ষ থেকে ২০১৭ সাল থেকে দশবারের মতো নোটিশ দেওয়ার পরও এই মার্কেটে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধের যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশের নগর ব্যবস্থাপনা ও আইনের শাসনের ভঙ্গুর ও ক্ষয়িষ্ণু বাস্তবতার পরিচয় বহন করে। এই অবস্থার লাগাম টানা না গেলে আগামী দিনগুলোতে নগর এলাকার মার্কেট-বিপণিবিতান কিংবা বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডসহ এই ধরনের বিপর্যয় আরও বাড়তে থাকবে। 

আইপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়, ফুলবাড়িয়া খেলার মাঠকে মার্কেটে রূপান্তর করা ছিল ঐতিহাসিক ভুল। নগর এলাকায় এভাবে অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে মাঠ কিংবা জলাশয় কোনো কিছুকেই রক্ষা করা যাচ্ছে না। সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে উসমানী উদ্যানের জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে শুকিয়ে ফেলা হয়েছে, পুরান ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন নগর এলাকায় পুকুর-জলাশয় নির্বিচারে ভরাট চলছে, যা নগর দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে ফেলছে।


বিজ্ঞাপন


fire2

অনুষ্ঠানে আইপিডি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের উপানুষ্ঠানিক মার্কেটের বিশদ জরিপের মাধ্যমে ফায়ার কোড ও বিল্ডিং কোড অনুযায়ী অগ্নিঝুঁকি নিরসনে করণীয়সমূহ সুনির্দিষ্ট করতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মার্কেটসমূহ অগ্নি সুরক্ষার জন্য তদানুযায়ী ব্যবস্থা নিতে না পারলে আইন ও বিধি অনুযায়ী রাষ্ট্রকে কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। ক্রেতারা সুলভে পণ্য কিনতে পারেন বিধায় দেশের আর্থসামাজিক বাস্তবতায় উপানুষ্ঠানিক মার্কেটের প্রয়োজনীয়তা আছে। যথাযথ ব্যবস্থা নিলে এ ধরনের মার্কেটের অগ্নিঝুঁকি অনেকটা কমানো সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে মার্কেটের মালিক, ব্যবসায়ী ও ব্যবহারকারীদের আন্তরিক ভূমিকা পালন করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

পরিকল্পনাবিদ আবু তাহের বলেন, এ ধরনের মার্কেটের জন্য ইলেকট্রিক্যাল সেফটি অডিটিংয়ের পাশাপাশি অগ্নি প্রতিরোধ ও ফায়ার ডিটেকশন সিস্টেমকে উন্নত করা প্রয়োজন। একইসাথে প্রতিটি মার্কেটে ফায়ার কন্ট্রোল রুম স্থাপনের পাশাপাশি ফায়ার সেফটি প্ল্যান ও জরুরি নির্গমন প্ল্যান থাকা জরুরি।

নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফরহাদুর রেজা বলেন, প্রতিটি বিপণি বিতানের ফায়ার ও ডিজাস্টার ভালনারেবিলিটি এসেসমেন্ট করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।

উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ রেদওয়ানুর রহমান বলেন, নগরের বিপণি বিতানসমূহকে অগ্নিঝুঁকি অনুযায়ী শ্রেণিবিন্যাস করে সাধারণ মানুষকে যথাযথভাবে অবগত করার মাধ্যমে সামাজিকভাবে সচেতনতা বৃদ্ধিও জরুরি।

উপানুষ্ঠানিক মার্কেটগুলোর অগ্নিঝুঁকি কমাতে ও সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইপিডির পক্ষ থেকে কয়েকটি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- মার্কেট ও বিপণিবিতানের অভ্যন্তরীণ অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা শক্তিশালী করা; ফায়ার সার্ভিসকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা; ঘনবসতিপূর্ণ, সংকীর্ণ রাস্তা ও অপরিকল্পিত নগর এলাকার জন্য ফায়ার সার্ভিসের বিশেষায়িত ও আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা; অগ্নিনিরাপত্তাকর্মীদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা; মার্কেটর ফায়ার ও দুর্যোগ স্বেচ্ছাসেবী তৈরি এবং ফায়ার সেফটি কমিটি ও ফায়ার সেফটি প্ল্যান তৈরি; নিয়মিত ফায়ার ড্রিল বা মহড়া আয়োজন প্রভৃতি।

ব্যবসায়ী ও নগর সংস্থাসমূহের মধ্যে আস্থা, বিশ্বাস ও দায়িত্ববোধের জায়গা তৈরি হলে উপানুষ্ঠানিক মার্কেটসমূহকে নিরাপদ করে অর্থনীতিতে তাদের কার্যকর অবদান নিশ্চিত করা সম্ভব বলে মনে করে আইপিডি।

ডিএইচডি/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর