রোববার, ৫ মে, ২০২৪, ঢাকা

নতুন কাপড়ের ঘ্রাণ নয়, বঙ্গবাজারের বাতাসে এখন শুধুই পোড়া গন্ধ

খলিলুর রহমান
প্রকাশিত: ০৫ এপ্রিল ২০২৩, ০৬:২০ পিএম

শেয়ার করুন:

নতুন কাপড়ের ঘ্রাণ নয়, বঙ্গবাজারের বাতাসে এখন শুধুই পোড়া গন্ধ

রাজধানীর পুরান ঢাকার বঙ্গবাজার। প্রতিদিনের মতো গত সোমবার রাতেও দোকান বন্ধ করে বাসায় গিয়েছিলেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। কিন্তু পরদিন ভোর ৬টার দিকে হঠাৎ করেই ওই বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ভয়াবহ এই আগুনে নিঃস্ব হয়ে যান কয়েক হাজার ব্যবসায়ী। যাদের বেশিরভাগই এখন খোলা আকাশের নিচেই অবস্থান করছেন। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের অভিযোগ- পরিকল্পিতভাবে এই অগ্নিকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। যদিও এই অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

আদর্শ হকার্স মার্কেট, মহানগরী ও বঙ্গ গুলিস্তান- এই তিন অংশ মিলেই বঙ্গবাজার মার্কেট। প্রায় ২২ হাজার বর্গফুটের এই মার্কেটে ৫ হাজারের বেশি ছোট-বড় দোকান ছিল। তবে মঙ্গলবারের আগুনে এখানকার সব দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ফলে পুরো বঙ্গবাজার এলাকায় আগে যেখানে নতুন কাপড়ের ঘ্রাণ পাওয়া যেত, সেখানে এখন বাতাসে ভাসছে পোড়া গন্ধ।


বিজ্ঞাপন


Bongo Bazarবুধবার (৫ এপ্রিল) সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, আগুনে সবকিছুই পুড়ে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। এ সময় পুড়ে ছাই হওয়া স্তূপের পাশেই বসে কান্না করতে দেখা যায় অনেককেই। আবার কাউকে কিছু পাওয়ার আশায় ছাইয়ের মধ্যেই হাতড়াতে দেখা যায়। তাদের একজন রায়হান আহমেদ। ঢাকা মেইলকে তিনি জানান, দীর্ঘদিন থেকেই বঙ্গবাজারে বাবার সঙ্গে ব্যবসা করে আসছিলেন। প্রতিদিনের মতো সোমবার রাতে দোকান বন্ধ করে তারা বাসায় ফেরেন। এরপর মঙ্গলবার সকালে আগুনের খবর পান। পরে দ্রুত বঙ্গবাজারে ছুটে আসলেও ভয়াবহ আগুনের হাত থেকে কিছুই রক্ষা করতে পারেননি।

মোজাম্মেল নামে আরেক ব্যবসায়ী ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজের দোকানটি পুড়তে দেখেছি। দোকান থেকে একটা সুতা পরিমাণ জিনিসও বের করতে পারি নাই। খুব অল্প সময়ের মধ্যে মার্কেটটি পুড়ে ছাই হয়।’ ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ড পরিকল্পিত হতে পারে বলেও সন্দেহ পোষণ করেন তিনি।

Bongo Bazarকেঁদে কেঁদে লক্ষ্মীপুরের বাসিন্দা মিজানুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘অনেকদিন থেকে এই মার্কেটে ব্যবসা করছি। কিন্তু আগুনে পুড়ে সব ছাই হয়ে গেছে। আগে দোকানে আসলে নতুন কাপড়ের গন্ধ পাওয়া যেত। আজ পুড়া দোকানে এসে দাঁড়িয়ে আছি। এখন শুধু পুড়া গন্ধ ছাড়া আর কিছুই নেই। এখন আমি কি করব? কোথায় যাব?’


বিজ্ঞাপন


রায়হান-মোজাম্মেল-মিজানুরের মতো বঙ্গবাজারের কয়েক হাজার ব্যবসায়ীর অবস্থা এখন একই। কীভাবে বড় এই ধাক্কা সামলে উঠবেন- এমন অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ব্যবসায়ীদের মাথায়।

Bongo Bazarএদিকে, বুধবার বিকেল ৪টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্তও বঙ্গবাজারে লাগা আগুন নেভেনি। এখনো ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট আগুন নেভানোর জন্য কাজ করছে। পুরোপুরি আগুন না নিভলে কাজ চলমান থাকবে বলেও জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন।

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বলেন, বঙ্গবাজার মার্কেটের উত্তরে থাকা এনেক্সকো ভবন থেকে এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। ভবনটির ৫ ও ৬ তলায় আগুন আছে। আগুন নেভানোর জন্য পানি দিলেও পরে আবারও ধোঁয়া বের হচ্ছে।

Bongo Bazarএর আগে মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) ভোর ৬টার দিকে গুলিস্তানের বঙ্গবাজারে ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এর পাশেই ফায়ার সার্ভিসের সদর দফতর হওয়ায় সকাল ৬টা ১০ মিনিটের দিকে আগুনের খবর পেয়ে দুই মিনিটের মাথায় ৬টা ১২ মিনিটের দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় প্রথম ইউনিট। পরে পানির সংকট ও তীব্র বাতাসের ফলে তীব্রতা বাড়ায় আগুন নেভাতে বেশ বেগ পেতে হয়। একপর্যায়ে ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিটের আপ্রাণ চেষ্টায় ওইদিন দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিটের দিকে (সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর) নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন।

এদিকে, ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে ফায়ার সার্ভিস। তদন্ত কমিটির সভাপতি করা হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেনেন্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে। এছাড়া তদন্ত কমিটির বাকি চার সদস্যরা হলেন- ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের উপ-পরিচালক দিনমনি শর্মা, সিদ্দিকবাজার ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. শাহিন আলম, ওয়ারহাউজ ইন্সপেক্টর অধীর চন্দ্র ও কমিটির সদস্য সচিব এবং ঢাকা জোন-১ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. বজলুর রশিদ। আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কেআর/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর