বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার জন্য দায়ী কে?

মহিউদ্দিন আহমেদ
প্রকাশিত: ০৮ মার্চ ২০২৩, ০৩:২২ পিএম

শেয়ার করুন:

অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার জন্য দায়ী কে?

প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। এখন কোনো নাগরিক ঘরে থেকে হোক, তার কর্মস্থলেই হোক আর পথে ফুটপাতে যেখানেই হোক, সে কি তাকে নিরাপদ বলতে পারে? ধরে নিই আপনি বা আমি ফুটপাত দিয়ে হেঁটে চলেছি, হঠাৎ বিকট এক শব্দ মাথার উপর আছড়ে পড়ল একটি ভারী ধাতব বস্তু। ব্যস সেখানেই সমাপ্তি ঘটল আপনার আমার জীবনের, মুমূর্ষু পরিবার অসহায় হয়ে পড়ল মুহূর্তের মধ্যে। জাতি নির্বাক হয়ে তাকিয়ে দেখল। আবার ধরা যাক, আপনি আপনার কর্মস্থলে কাজ করছেন, হঠাৎ বিকট এক শব্দে প্রকম্পিত হলো ভবনটি। নিমিষেই ঝরে গেল কতগুলো প্রাণ।

আমরা চট্টগ্রামের অক্সিজেন প্লান্টে বিস্ফোরণে লক্ষ্য করলাম প্রায় এক দেড় কিলোমিটার দূরে থাকা ব্যক্তিও প্রাণ হারিয়েছেন। গত বছর আমার ভাগ্নে মো. আলী রনি ব্যাংক থেকে ছুটির পর বাসায় ফিরছিলেন। ভালো মানের দই পাওয়া যায় নাকি মগবাজারে, কেনার জন্য রিকশা দিয়ে ওই পথেই ফিরছিলেন। হঠাৎ মগবাজারে বিস্ফোরণ অনেক দূরে রিকশায় আসছিলেন রনি। ওর মাথা এবং শরীরের কিছু অংশ কেটে যায়। ওই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় ছয়জন।


বিজ্ঞাপন


রাজধানী ঢাকা ,চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জে গত দুই বছরে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গতকাল গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারের দুর্ঘটনা নিহত ১৭ জন, আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে শতাধিক। এর আগে গত ৪ তারিখে চট্টগ্রামের সীমা অক্সিজেন প্লান্টে দুর্ঘটনায় নিহত হয় ছয়জন, আহত প্রায় ২০-২৫ জন। এরপর গত বছর সীতাকুণ্ডে কন্টেইনার ডিপোতে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ৫১ জনের মৃত্যু হয়।

পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের তথ্য মতে, ২০২২ সালের ১০৪টি গ্যাস বিস্ফোরণের অগ্নিকাণ্ড ঘটে। তার মধ্যে তিতাসের লাইনের ত্রুটিতে বিস্ফোরণ ঘটেছে ৬৯টি। রান্নাঘরে গ্যাস সিলিন্ডার, বয়লার ও এসি বিস্ফোরণ ঘটেছে ৩৪টি। এসব ঘটনায় নারী-শিশুসহ প্রাণ হারিয়েছে ১৮ জন। দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও অন্তত ২৫ জন।

২০২১ সালে ১১৪টি গ্যাস বিস্ফোরণের অগ্নিকাণ্ড ঘটে। তার মধ্যে তিতাসের লাইনের ত্রুটিতে বিস্ফোরণ ঘটেছে ৯৬টি। রান্নাঘরে গ্যাস সিলিন্ডার, বয়লার ও এসি বিস্ফোরণ ঘটেছে ১৮টি। এসব ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২০ জন। দগ্ধ হয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ। ২০২০ সালে ১০৬টি গ্যাস বিস্ফোরণে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় দুই শতাধিক।

৫ মার্চ সীমা অক্সিজেন প্লান্টে দুর্ঘটনার পর দিন ঢাকার সাইন্সল্যাবে নিহত হয় তিনজন, আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ৩০ জন। ২০২০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার মসজিদে বিস্ফোরণে নিহত ৩৭ জন আহত হয় শতাধিক। গতকাল রাতে নাটোরের বড়াই গ্রামে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নিহত হন তিনজন মা এবং তার দুই সন্তান আহত হন তার স্বামী। এর পূর্বে ঢাকা চট্টগ্রাম মা সড়কের বাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে (মতলব এক্সপ্রেস) দুইজন নিহত আহত ২০ জন। গত বছর রাজধানীর শনির আখড়ায় এক্সিম ব্যাংকের এসি বিস্ফোরণে দেয়াল ধসে নিহত একজন এবং আহত পাঁচজন। এর কয়েক দিন পূর্বেই দনিয়াতে বাথরুমে অগ্নিকাণ্ডে একজন নিহত হয়।


বিজ্ঞাপন


RR

এসব দুর্ঘটনার সঠিক তদন্ত এখন পর্যন্ত জনসমক্ষে উপস্থাপন করা হয়নি। কেবল জমে থাকা গ্যাস কিংবা সিলিন্ডার ত্রুটি, এসি এবং বৈদ্যুতিক শর্ট-সার্কিট ত্রুটিকে দোষারোপ করা হচ্ছে। আমরা এর সঠিক তদন্ত এবং নাগরিকদের নিরাপত্তা চাই। কারণ নাগরিক জীবন এখন হুমকির মুখে ঘরে থাকা কিংবা পথে থাকা বা বাসে যাতায়াত করা কোনোটাই আর নিরাপদ বলা যায় না।

বর্তমানে দুর্ঘটনার স্থল থেকে এক কিলোমিটার দূরে থাকা ব্যক্তিও দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে। তাহলে নাগরিক জীবনের নিরাপত্তা কোথায়? সরকারের কাছে আমাদের দাবি থাকবে, ঢাকার প্রতিটি ভবনের ত্রুটি চিহ্নিত করা। রাজউকের দায়িত্বে অবহেলাকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সেই সাথে দুর্ঘটনায় পতিত সকল নিহত ব্যক্তির যথাযোগ্য ক্ষতিপূরণ প্রদান করা এবং চিকিৎসার সকল দায় দায়িত্ব নেওয়া। এখন পর্যন্ত এসব ঘটনার তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। অসংখ্য কালক্ষেপণ হয়েছে। কোথাও কোথাও মিথেন গ্যাস, সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, জমে থাকা তিতাসের গ্যাস, অনেক ক্ষেত্রে আবার জঙ্গি হামলার আশঙ্কা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সত্য ঘটনা কী? একজন নাগরিক হিসেবে আমরা কি সেটা জানার অধিকার রাখি না?

রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে যুক্ত অনেক সংস্থা রয়েছে, তারা সবাই ঘটনা চলে যায়, হয় তদন্ত কমিটি। কিন্তু মানসম্পন্ন তদন্ত বা গবেষণার হয় কতটুকু? আমরা চাই আমাদের জীবনের নিরাপত্তা। আমরা চাই আমাদের দেশ এগিয়ে যাক নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে। আগামী দিনের প্রজন্ম পাক একটি নিরাপদ রাষ্ট্র।

লেখক: আহ্বায়ক, সাধারণ নাগরিক সমাজ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর