শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

একের পর এক বিস্ফোরণ, আতঙ্কে রাজধানীবাসী

খলিলুর রহমান
প্রকাশিত: ০৮ মার্চ ২০২৩, ০৮:০৫ এএম

শেয়ার করুন:

একের পর এক বিস্ফোরণ, আতঙ্কে রাজধানীবাসী

রাজধানীতে একের পর এক ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। সঙ্গে হচ্ছে বড় ধরনের প্রাণহানি। কখন কোন এলাকায় কোন ভবনে বিস্ফোরণ ঘটবে তা নিয়ে এখন কিছুটা আতঙ্কিত রাজধানীবাসী। বিশেষ করে গত রোববার সায়েন্সল্যাব এলাকার ভবনে বিস্ফোরণের দুই দিনের মাথায় মঙ্গলবার রাজধানীর গুলিস্তানে বিস্ফোরণে ব্যাপক প্রাণহানিতে আতঙ্কের মাত্রা বেড়ে গেছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

মঙ্গলবার (৭ মার্চ) বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে গুলিস্তানে বিআরটিসির বাস কাউন্টারের কাছে সিদ্দিকবাজারে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে পাশাপাশি দুটি বহুতল ভবন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একটি ভবন সাততলা এবং আরেকটি পাঁচতলা। এর মধ্যে সাততলা ভবনের বেসমেন্ট, প্রথম ও দ্বিতীয়তলা বিধ্বস্ত হয়েছে। আর পাঁচতলা ভবনের নিচতলা বিধ্বস্ত হয়েছে। এই ভবনের দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত ব্র্যাক ব্যাংকের কার্যালয়।


বিজ্ঞাপন


ex

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক লোক। বিস্ফোরণের পর উদ্ধার কাজে অংশ নিচ্ছে ফায়ার সার্ভিস, র‌্যাব, পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও। এ ঘটনার পর থেকেই পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

পুরান ঢাকার বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম মিয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, কয়েকদিন পরপরই পুরান ঢাকায় আগুন বা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে সবসময় আমাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করে।

পুরান ঢাকার বাসিন্দা সাংবাদিক ইকবাল হাসান নান্টু। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, সম্প্রতি রাজধানীতে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সাধারণ বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।


বিজ্ঞাপন


ex

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আউয়াল হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনায় জনগণের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তবে পুরান ঢাকায় কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে আমরা সবাই মিলে একে অপরের পাশে দাঁড়াই।

এর আগে গত রোববার (৫ মার্চ) বেলা পৌনে ১১টার দিকে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকার শিরিন ভবনের তৃতীয় তলায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে তিনজন নিহত হন। আহত হন ১৫ জন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল গনি সাবু ঢাকা মেইলকে বলেন, এ ঘটনার পর একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছিল। পরবর্তীতে এটিকে অপমৃত্যুর মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। বিস্ফোরণের ঘটনায় অবহেলা আছে কি না এখনও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনে এটিকে নিয়মিত মামলা হিসেবে নেওয়া হবে।

ex

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তদন্ত কর্মকর্তা জানান, সায়েন্স ল্যাবরেটরির শিরিন ভবনের পুরোনো ও অব্যহৃত গ্যাসের লাইনের ছিদ্র থেকে বা পয়োনালা থেকে শৌচাগারের পাইপ দিয়ে নির্গত গ্যাস কুণ্ডলী হয়ে তৃতীয় তলার কোনো একটা ছোট স্থানে জমা হয়েছিল। সেই গ্যাসের কুণ্ডলী কোনো ধরনের স্ফুলিঙ্গের (স্পার্কিং) সংস্পর্শে এসে বিস্ফোরণ ঘটে। 

এছাড়া গত শনিবার রাজধানীর গুলশানের নিকেতনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রে (এসি) বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে গোপাল মল্লিক নামের একজন নিহত হয়েছেন।

এর আগে গত ২৪ জানুয়ারি মগবাজারের একটি পরিত্যক্ত ময়লার ড্রামে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে পথচারীসহ পাঁচজন আহত হয়েছিলেন।

ex

২০২১ সালের ২৭ জুন রাজধানীর মগবাজারের একটি ভবনে বড় ধরনের বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ১২ জন। এ ঘটনায় রমনা মডেল থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে। তবে কি কারণে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে তা এখনও উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। যার ফলে মামলার অজ্ঞাত আসামিরাও অধরাই রয়ে গেছেন।

যদিও মামলার অভিযোগে ভবন মালিকের বিভিন্ন অবহেলার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, ভবন মালিকের অব্যবস্থাপনা, অতি পুরাতন বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইন, ত্রুটিপূর্ণ গ্যাস ব্যবস্থাপনা অথবা ভাড়াটিয়া দোকানদার শর্মা হাউজের অননুমোদিত গ্যাস ও বৈদ্যুতিক সামগ্রীর ব্যবহার ও অবহেলা অথবা বেঙ্গল মিটের অননুমোদিত গ্যাস ও বৈদ্যুতিক সামগ্রী ব্যবহার ও অবহেলা, অথবা গ্র্যান্ড কনফেকশনারির অননুমোদিত গ্যাস ও বৈদ্যুতিক সামগ্রী ব্যবহার ও অবহেলা অথবা দ্বিতীয় তলায় সিঙ্গার ইলেকট্রনিক্সের অননুমোদিত বৈদ্যুতিক সামগ্রী মজুদ রাখা ও অবহেলা অথবা তিতাস গ্যাস কোম্পানির অবহেলাজনিত গ্যাস সরবরাহ অথবা বিদ্যুৎ সঞ্চালন কোম্পানির ত্রুটিপূর্ণ সংযোগ অথবা উক্ত ঘটনাস্থলের সামনে সিটি করপোরেশনের অপরিকল্পিত ও গাফিলতিপূর্ণ ড্রেন খননপূর্বক খনন কাজের জন্য এ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

কেআর/এমএইচএম/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর