শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

কেমন আছে ‘মৃত্যুপুরী’ সিদ্দিকবাজার?

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ১২ মার্চ ২০২৩, ১১:১০ এএম

শেয়ার করুন:

কেমন আছে ‘মৃত্যুপুরী’ সিদ্দিকবাজার?
ছবি: ঢাকা মেইল

এক বিস্ফোরণে ২৪টি তাজা প্রাণ কেড়ে নেওয়ার পরও হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন অনেকে। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও আছেন কয়েকজন। গত মঙ্গলবার (৭ মার্চ) বিকেলের ওই বিস্ফোরণের ক্ষতচিহ্ন এখনো রয়ে গেছে রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে।

যেই ভবনে বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেটি নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি। বর্তমানে এর ভেতরে কোনো মানবদেহ না থাকলেও ভবনটি ভাঙা হবে নাকি পুনরায় মেরামত করা হবে- সে বিষয়েও এখনো একাধিক সংস্থার মধ্যে আলোচনা চলছে। তবে মূল সড়কের পাশে হওয়ায় ভবনটিকে ঘিরে যাতে ভবিষ্যতের ঝুঁকি এড়ানো যায়, সে লক্ষ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির ধসে পড়া রুখতে কাজ শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) রাতে।


বিজ্ঞাপন


গতকাল শনিবার (১১ মার্চ) পর্যন্তও এই কাজ চলতে দেখা গেছে। এ দিন ভবনের ক্ষতিগ্রস্ত কলামে স্টিলের পাইপ দিয়ে অস্থায়ী সাপোর্ট দিতে দেখা যায়। যেগুলো ভবনটির সামনের অংশের ক্ষতিগ্রস্ত কলামগুলোর পাশে স্থাপন করা হয়েছে।

এদিকে, বিস্ফোরণের দিনের মতোই এখনো অনেক উৎসুক জনতা ভবনটির হালচাল দেখতে ভিড় করছেন সিদ্দিকবাজারে। সেই সঙ্গে এখনো সার্বিক নিরাপত্তায় কাজ করছেন পুলিশ সদস্যরা।

Explosionগত মঙ্গলবার (৭ মার্চ) বিকেল পৌনে ৫টার দিকে গুলিস্তানের বিআরটিসির বাস কাউন্টারের কাছে সিদ্দিকবাজারে কুইন স্যানিটারি মার্কেট হিসেবে পরিচিত ওই সাততলা ভবনে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ভবনটির বেসমেন্ট, প্রথম ও দ্বিতীয় তলা অনেকটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। সেই সঙ্গে দুই পাশে লাগোয়া দুটি ভবনের কিছু অংশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়াও পাশের ভবনে থাকা ব্র্যাক ব্যাংকের গুলিস্তান শাখাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অবশ্য, দুর্ঘটনার পর শাখার কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও আপৎকালীন সময়ে নবাবপুর শাখায় চলে ব্যাংকের কার্যক্রম।

ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের প্রাথমিক অনুসন্ধানে তথ্য উঠে এসেছে- তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির পরিত্যক্ত লাইনের ছিদ্র থেকে বের হওয়া গ্যাস জমে ভবনের বেসমেন্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে চূড়ান্ত করে এখনো কারণ খুঁজে পাওয়ার খবর জানানো হয়নি কোনো সংস্থার কাছ থেকে।


বিজ্ঞাপন


এদিকে, শনিবার (১১ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে সিদ্দিকবাজারে গিয়ে দেখা যায়, যে ভবনে বিস্ফোরণ ঘটেছে সেটিতে চলছে লোহার পাইপ বসানোর কাজ। সড়কে বসে পাইপগুলো মাপমতো কেটে দিচ্ছেন দুজন। অন্যদিকে বেসমেন্টে জমে থাকা পানি অপসারণে কাজ করছে ওয়াসার ছোট জেনারেটর। লম্বা পাইপ লাগিয়ে সেই পানি অপসারণ করা হচ্ছিল।

Explosionসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যে পাইপগুলো দিয়ে ভবনটিতে সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে তার প্রত্যেকটির আয়তন ৬ ইঞ্চি। আর লম্বায় ২০ ফুট। এগুলোকে মাইল্ড স্টিল বা এমএস পাইপ বলে। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ভেতরের দিকের কলামেও সাপোর্ট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। তবে এখনো ভেতরে গিয়ে কাজ করার অনুমতি মেলেনি। তাই আপাতত বাইরের দিকের কলামে শুধু সাপোর্ট দেওয়ার কাজটি করা হচ্ছে।

এদিকে, রোববার (১২ মার্চ) সকালেও দেখা গেছে, অনেক নারী পুরুষ এসেছেন ভবনটির অবস্থা দেখতে। সেই সঙ্গে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলছেন। কেউ আবার আগে আসা লোকজনের কাছ থেকে সেদিন কি ঘটেছিল- তা জানার চেষ্টা করছেন। যদিও দুইপাশে দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা বারবার এসব উৎসুক জনতাকে সরে যেতে বললেও কেউ সেটি তেমন একটা আমলে নিচ্ছেন না। এ দিনও অনেকেই বাসের জানালা দিয়ে উঁকি মেরে ভবনটির অবস্থা দেখে ছবি তুলেন। কেউ কেউ আবার মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করেন।

কেরানীগঞ্জ থেকে আসা শহিদুল ইসলাম নামে একজন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘কয়দিন ব্যস্ত ছিলাম তাই আসা হয় নাই। এতগুলো মানুষ মরে গেল। খবরে দেখেছি। নিজের চোখে দেখার জন্য আসলাম।’

Explosionএই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর দাবি, যারা মারা গেছেন বা আহত হয়েছেন সবাইকে যেন আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

এদিকে, শোক কাটিয়ে ধীরে ধীরে সিদ্দিকবাজার ও আশপাশের অনেক ব্যবসায়ীরাই দোকানপাট খুলতে শুরু করেছেন। তবে বিধ্বস্ত হওয়া ভবনের দুই পাশের কয়েকটি ভবনের দোকানপাট এখনো বন্ধ রয়েছে।

অন্যদিকে, একসঙ্গে এতগুলো মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় আশপাশের ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সড়কের ডিভাইডারে, ভবনের দেয়ালে একাধিক সাদাকালো ব্যানার চোখে পড়েছে। সেদিনকার বিস্ফোরণে নিহতদের স্মরণ করে এই শোক প্রকাশ করেছে বিভিন্ন সংগঠন।

বিস্ফোরণ নিহত ব্যবসায়ী সুমনের বন্ধু পরিচয় দেওয়া সেলিম রেজা ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘সামনে রোজা। দূরের ব্যবসায়ীরা আগেভাগে মালামাল নিতে চান। আর দোকান বন্ধ রাখলে তো সত্যি বলতে দিন চলবে না। এ জন্য শোকের মধ্যেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে হয়েছে।’

Explosionএদিকে, বিধ্বস্ত ভবনটির পাশেই দুর্ঘটনা এড়াতে সবাইকে নিরাপদে থাকার নির্দেশনাসহ সাবধানে চলার পরামর্শ সম্বলিত নানা ব্যানার-ফেস্টুনও ঝুলে থাকতে দেখা গেছে।

অন্যদিকে পুলিশ সদস্যরা সার্বিক নিরাপত্তায় কাজ করছেন। মোর্শেদ নামের একজন পুলিশ কর্মকর্তা ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এখানে বাই রোটেশনে আমাদের সদস্যরা ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করেন। যতক্ষণ প্রয়োজন মনে করবে কর্তৃপক্ষ ততক্ষণই এভাবে চলবে।’

ভয়াবহ সেই বিস্ফোরণের ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শনিবার সকালে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আহত আজম মৃধা নামের একজন মারা গেছেন। এ নিয়ে ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪ জনে। এছাড়া হাসপাতাল সূত্র বলছে- সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এখনো ২১ জন চিকিৎসাধীন।

বিইউ/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর