শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

বিধ্বস্ত ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ, প্রস্তুতি সেরেই অভিযান

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮ মার্চ ২০২৩, ০৩:৪৭ পিএম

শেয়ার করুন:

বিধ্বস্ত ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ, প্রস্তুতি সেরেই অভিযান

রাজধানীর গুলিস্তানের পাশে সিদ্দিকবাজারে গতকাল মঙ্গলবার যে ভবনটিতে বিস্ফোরণ হয়েছে সেটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ। উদ্ধার অভিযান চালাতে গেলে ভবনটি যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে। এজন্য পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়ে পুনরায় উদ্ধার অভিযান শুরু করতে চায় ফায়ার সার্ভিস। ফলে সংস্থাটি রাজউক ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছে। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে একটি বিশেষজ্ঞ টিম গঠন করা হয়েছে। সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে ভবনটিতে ফের অভিযান শুরু হবে। এজন্য দিন গড়িয়ে বিকেল হলেও দ্বিতীয় দিনের উদ্ধার অভিযান শুরু করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।

মঙ্গলবার (৭ মার্চ) বিকেলের ওই বিস্ফোরণে সিদ্দিকবাজারের সাততলা ভবনটি বিধ্বস্ত হয়। এতে পাশের আরেকটি পাঁচতলা ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে সাততলা ভবনের বেজমেন্ট, প্রথম ও দোতলা বিধ্বস্ত হয়। আর পাঁচতলা ভবনের নিচতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ভবনের দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত ব্র্যাক ব্যাংকের কার্যালয়। সেখানে প্রথম দিন উদ্ধারকাজ চালায় ফায়ার সার্ভিসের ১১টি ইউনিট।


বিজ্ঞাপন


দ্বিতীয় দিন বুধবার (৮ মার্চ) সকাল থেকেই উদ্ধার অভিযান শুরুর কথা ছিল। সেই প্রস্তুতি নিয়ে সকাল থেকেই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে আসেন। বিধ্বস্ত ভবনের প্রথম তলায় থাকা দোকানের মালামাল সরানোও হয়। তবে ভবনটির বেজমেন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সংস্থাটির পক্ষ থেকে রাজউক ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চাওয়া হয়। বিভিন্ন সংস্থার বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি টিম করা হয়েছে। এছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভবনটি পরিদর্শনও করেছেন।

jj

পরিদর্শন শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বেজমেন্ট ও নিচতলার যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। ভবনটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ ইমারতে পরিণত হয়েছে। ভবনের উপরে চাপ পড়লে সেটি ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ‌এজন্য স্টেবল অবস্থা তৈরি করে অভিযান শুরু করা হবে। ‌

মন্ত্রী বলেন, কী কারণে ঘটনা ঘটেছে তা তদন্তের পর জানা যাবে। কেউ যেন ইমারতের অনুমোদন না নিয়ে ভবন নির্মাণ না করে। যারা অনুমতি না নিয়ে ভবন নির্মাণ করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ‌‌‌‌‌


বিজ্ঞাপন


অভিযান শুরুর কারণ সম্পর্কে জানাতে গিয়ে পুলিশের লালবাগ জোনের ডিসি জাফর হোসেন বলেন, ফায়ার সার্ভিসের ডিরেক্টরের (অপারেশন্সের) সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি তাদের উদ্ধার কার্যক্রমের পরিকল্পনা জানিয়েছেন। রাজউক, সেনাবাহিনী এবং বিশেষায়িত সংস্থার সমন্বয়ে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যেই বসেছেন। তারা এখানে আসবেন এবং পরবর্তী নির্দেশনা দেবেন।

পুলিশ কর্মকর্তা জাফর হোসেন বলেন, ভবনের বিমগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় গতকালের ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ কমিটির একটি টিম গঠন করা হয়েছে। তাদের মতামত ও সুপারিশের ভিত্তিতে উদ্ধার কার্যক্রম চলবে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে৷

এই কর্মকর্তা বলেন, আপনারা জানেন এখানে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে। ব্র‍্যাক ব্যাংকের দোতলা থেকে চার তলা পর্যন্ত যে শাখা রয়েছে, তাদের টাকা পয়সা ও মূল্যবান কোনো সামগ্রী যদি থাকে, সেগুলো সংরক্ষণের জন্য ফায়ার সার্ভিস এবং উদ্ধারকারী দলের সাথে সমন্বয় করা হয়েছে। তারা তাদের মতো কাজ করছে। তবে, জাতীয় কমিটিতে যারা রয়েছেন সে সদস্য সংখ্যা এবং নাম জানা যায়নি। ইতোমধ্যেই পর্যবেক্ষণ কার্যক্রমে কী কী সরঞ্জাম প্রয়োজন, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষজ্ঞ কমিটি সে বিষয়ে সরেজমিনে ফায়ার সার্ভিসকে নিয়ে কাজ শুরু করবে।

RR2

বিস্ফোরণের কারণ সম্পর্কে জানতে চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস। ‌আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে এই ঘটনায় তদন্ত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। সংস্থাটির পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রধান করে এই কমিটি করা হয়।

এদিকে এই ঘটনার কারণ সম্পর্কে এখনও চূড়ান্ত কিছু জানা যায়নি। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, জমে থাকা গ্যাস থেকে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন।

ভবনটিতে আর কেউ আটকা নেই জানিয়ে সচিব বলেন, এ ঘটনায় র‌্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর বিভিন্ন টিম কাজ করছে। পুরো বিষয়টা তদন্ত শেষেই জানা যাবে। কিন্তু আমাদের প্রাথমিক ধারণা, জমে থাকা গ্যাস থেকে এখানে বিস্ফোরণ হয়েছে।

আবদুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, আমরা যতটুকু জানি ভেতরে কেউ আটকা নেই৷ ইতোমধ্যেই ডগ স্কোয়াড দিয়ে এটা চেক করা হয়েছে। তারপরেও আমরা উদ্ধারকাজ সমাপ্ত করিনি, এখনো পর্যন্ত কাজ চলছে৷

RR3

দুপুরে বিধ্বস্ত ভবনের পাশে থাকা সড়কে র‌্যাবের বোম্ব ডিস্পোজাল ইউনিটের পরিচালক মেজর মশিউর রহমান সাংবাদিকদের জানান, বিস্ফোরণের ঘটনাটি গ্যাস লাইন লিকেজ বা অন্য কোনো কারণে ঘটতে পারে‌‌। তবে বিস্ফোরণের মাত্রাটা অনেক বড় ছিল।

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, আমরা সাবধানতা অবলম্বন করে ভবনটির নিচে ঢুকেছিলাম। তবে এটি কোনো অগ্নিকাণ্ড নয়, এটি একটি বিস্ফোরণ ঘটেছে। এয়ারকন্ডিশনার থেকে এ ধরনের ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা কম। অন্য কোনো কারণ থেকে এই বিস্ফোরণ ঘটে। ডগ স্কোয়াড সদস্যরা ভেতরে কেউ জীবিত বা মৃত আছে কি না শনাক্ত করে তাদের বের করে আনতে সাহায্য করবে।

এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন শতাধিক। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ঢাকা মেডিকেলসহ বিভিন্ন হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা চলছে। 

জেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর