শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

ভয়াবহ যেসব ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছিল বাংলাদেশে

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৫ অক্টোবর ২০২২, ০৯:০৪ এএম

শেয়ার করুন:

ভয়াবহ যেসব ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছিল বাংলাদেশে

বাংলাদেশ ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের দেশ। ইতিহাসের বিভিন্ন সময় এই ভূখণ্ডে ঘটেছে ভয়ংকরতম কিছু ঘূর্ণিঝড়। ব্যতিক্রমী ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বারংবার বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপে পড়তে হয়েছে এই দেশকে। প্রভাব পড়েছিল জনজীবন ও জীবিকার ওপর। বিগত দশকগুলোতে ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়ের তথ্য তুলে ধরা হলো এখানে। 

সবশেষ সোমবার (২৪ অক্টোবর) বাংলাদেশে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। রীতিমতো তাণ্ডব চালানোর পর দুর্বল হয়ে সিত্রাং নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। ঘূর্ণিঝড়টি বর্তমানে নিম্নচাপ হিসেবে ঢাকা-কুমিল্লা হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও এর আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছে বলেও জানিয়েছে অধিদফতর।


বিজ্ঞাপন


ভোলা ঘূর্ণিঝড়
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ এবং প্রাণঘাতী ঘূর্ণিঝড় এটি। ১৯৭০ সালের ৮ নভেম্বর বঙ্গোপসাগরে এই ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি। ‘ভোলা সাইক্লোন’ নামেও পরিচিত এটি। সেদিন ছিল সিম্পসন স্কেলে ‘ক্যাটাগরি ৩’ মাত্রার ঘূর্ণিঝড়। ধীরে ধীরে এটি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ১১ নভেম্বর এর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার বা ১১৫ মাইল। জলোচ্ছ্বাসের সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল প্রায় ১০ দশমিক ৬ মিটার। এই গতিতেই এটি উপকূলে আঘাত হানে। ঝড়ের কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চল ও দ্বীপগুলো প্লাবিত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় চট্টগ্রাম, বরগুনা, খেপুপাড়া, পটুয়াখালী, চর বোরহানউদ্দিন, চর তজুমদ্দিন, মাইজদী ও হরিণঘাটা। সেসময় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ভোলার তজুমদ্দিনের ১ লাখ ৬৭ হাজার জনসংখ্যার মধ্যে ৭৭ হাজার জন প্রাণ হারায়।

সরকারি হিসাবমতে, সাইক্লোনে মারা যায় প্রায় ৩ লাখ মানুষ। আর বেসরকারি মতে এ সংখ্যা আনুমানিক ৫ লাখ। এছাড়া ভোলা সাইক্লোনে ৩৮ হাজার সমুদ্রনির্ভর মৎস্যজীবী এবং ৭৭ হাজার অভ্যন্তরীণ মৎস্যজীবী মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মোট ২০ হাজারের বেশি মাছ ধরার নৌকা ধ্বংস হয়। ১০ লাখের বেশি গবাদিপশুর মৃত্যু, প্রায় ৪ লাখ ঘরবাড়ি এবং ৩ হাজার ৫০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভয়ানকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

১৫৮২ সালের ঘূর্ণিঝড়
১৫৮২ সালে বাকেরগঞ্জ অঞ্চলে একটি প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হয়েছিল। এর দরুণ প্রবল জলোচ্ছ্বাসে প্রায় দুই লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এর তিনবছরের মাথায় ওই অঞ্চলেই আবারও ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ে।

গ্রেট বাকেরগঞ্জ সাইক্লোন
বর্তমানে বরিশালের একটি উপজেলা হিসেবে পরিচিত হলেও ব্রিটিশ আমলে বাকেরগঞ্জ ছিল একটি জেলা। ১৮৭৬ সালের ৩১ অক্টোবর ও ১ নভেম্বর বাকেরগঞ্জ এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলে সংঘটিত হয়েছিল প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়। মানুষ ও গবাদিপশুর মৃত্যুর হার, ফসল এবং অন্যান্য সম্পদহানির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বিবেচনা করে এই ঝড়কে বলা হয় ‘গ্রেট বাকেরগঞ্জ সাইক্লোন’। এতে প্রায় ২ লাখ মানুষে প্রাণহানি ঘটে। 


বিজ্ঞাপন


১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়
২২ এপ্রিল ১৯৯১। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয় গভীর নিম্নচাপ। ২৪ এপ্রিল নিম্নচাপটি রূপ নেয় ০২বি ঘূর্ণিঝড়ে। আরও শক্তিশালী হয়ে অগ্রসর হতে থাকে উত্তর-পূর্ব দিকে। ২৮ ও ২৯ এপ্রিল বৃদ্ধি পায় এর তীব্রতা। গতিবেগ পৌঁছায় ঘণ্টায় ১৬০ মাইলে। যদিও ২৯ এপ্রিল মধ্যরাতে চট্টগ্রামের উপকূলবর্তী এলাকায় আঘাত হানার সময় এর গতি ছিল ঘণ্টায় ১৫৫ মাইল। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের ১৯টি জেলার ১০২টি উপজেলা। তবে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুতুবদিয়া, খেপুপাড়া, ভোলা ও টেকনাফ। সেদিন প্রাণ হারান ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮৮২ জন। আহতও হয়েছিলেন সমসংখ্যক মানুষ। এছাড়া ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় দেড় বিলিয়ন মার্কিন ডলারে।

১৮২২ সালের ঘূর্ণিঝড়
১৮২২ সালের জুন মাসে বরিশাল-বাকেরগঞ্জ অঞ্চলে সংঘটিত ঘূর্ণিঝড়ে ৫০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ওই ঝড়ে মারা যায় প্রায় ১ লাখ গবাদিপশু। 

এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর