বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং ইতোমধ্যে উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানতে শুরু করেছে। এর প্রভাব পড়েছে রাজধানী ঢাকায়ও। সোমবার (২৪ অক্টোবর) সকাল থেকে অনবরত বৃষ্টি হচ্ছে। সন্ধ্যা থেকে ভারী বর্ষণ, সঙ্গে ঝড়োহাওয়া বইছে। ঢাকায় ১২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা চলতি বছরে রাজধানীতে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
এর আগে গত কয়েক বছরে যে কয়টি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে সেগুলোর খুব বেশি প্রভাব রাজধানীতে লক্ষ্য করা যায়নি। তবে এবারের ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব অনেকটাই পড়েছে রাজধানী। দিনভর বৃষ্টিতে রাজধানীর জনজীবনে স্থবিরতা এসেছে। বিভিন্ন রাস্তায় পানি জমে চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। দিনভর খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া নগরবাসী ঘরের বাইরে বের হননি।
বিজ্ঞাপন
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জলাবদ্ধতার দৃশ্য দেখা গেছে। মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিং এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পাশের রামচন্দ্রপুর খালের পানি এসে পড়েছে সড়কের ওপর। এছাড়া মিরপুর ১১ নম্বরের বেশকিছু এলাকাসহ পল্লবী ও কালশি মোড়েও সড়কের ওপর পানি জমতে দেখা গেছে। সেই সঙ্গে রামপুরা এলাকায়ও বেশকিছু জায়গায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। তবে বৃষ্টির কারণে কোথাও কোথাও হাঁটু পানি জমলেও দ্রুতই তা সরে যাচ্ছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় সর্বোচ্চ ২৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া বরিশাল বিভাগে ২৬০, পটুয়াখালীতে ২৫৩, ভোলায় ২৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে সংস্থাটি।
সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাতে ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
বিজ্ঞাপন
আবহাওয়া অধিদফতরের ১০ নম্বর বিশেষ সতর্কবার্তায় জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে। ইতোমধ্যেই মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এছাড়া উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। সেই সঙ্গে এসব এলাকায় ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৮৮ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তার স্থলে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম ও এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। সেই সঙ্গে এসব এলাকায় ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৮৮ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। সেই সঙ্গে এসব এলাকায় ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৭৫ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
এছাড়া সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ফরিদপুর, ঢাকা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নদী বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর নৌ-বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
টিএই/জেবি