রাজধানীতে দিনের পর দিন অবাধে চলছে শ্রীহীন গণপরিবহন। কোনোটা লক্কর ঝক্কর, কোনোটার আবার গায়ে রঙয়ের ছোঁয়াও নেই। কোনো পরিবহনের বাসের জানালার গ্লাস নেই, কোনোটা ছুটছে কালো ধোঁয়ায় চারিদিক আচ্ছন্ন করে। কিন্তু এসব দেখার যেন কেউ নেই। তাই বলে ঝড়-বৃষ্টিতে নাকাল নগরবাসীকে বাসের মধ্যেও ভিজতে হবে তাও কি মানা যায়? তবে তেমন ঘটনাই দেখা গেল সোমবার (২৪ অক্টোবর)।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সকাল থেকে অঝোর ধারায় পড়ছে বৃষ্টি। সকাল থেকে ঘরের বাইরে বের হওয়া রাজধানীবাসীর বেশিরভাগে গন্তব্যে যাচ্ছেন গণপরিবহনে। কিন্তু এদের মধ্যে বাসে উঠেও কাউকে কাউকে ভিজতে হয়েছে বৃষ্টির পানিতে। কারণ বাসের জানালার গ্লাস না থাকায় বাধ্য হয়ে ভেজার হাত থেকে বাঁচতে হাতে থাকা ছাতা খুলে ধরেছেন অনেকে৷
বিজ্ঞাপন
এদের একজন মো. আবীর। ট্রাফিক এলার্ট নামের একটি ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপে তিনি একাধিক ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, আমরা জনগণ এবং আমাদের পরিবহন। বাসের ভেতরেও ছাতা খুলে বসতে হয়।
একই গ্রুপে সোমবার সকালে বাসের মধ্যে ছাতা ধরে বসা থাকা একাধিক যাত্রীর ছবি পোস্ট করেন এস কে ফরহাদ। তার ছবির নিচে অনেকে নানা ধরনের মন্তব্য করেন। কেউ আবার পরিবহন সেক্টরের অনিয়ম নিয়ে ব্যঙ্গ করেও কথা বলেন।
একজন লিখেছেন, শুনেছি হোটেল ছালাদিয়া, এবার দেখি বাস ছাতাদিয়া। এইসব বাসের ভাড়া না দেওয়া উচিত।
ছবির নিচে আরেকজন মন্তব্য করেন এটা আসলে বিআরটিএর দেখার কথা। কিন্তু তারা এসব দেখে না। ঘুমিয়ে আছে।
বিজ্ঞাপন
লক্কর ঝক্কর বাসের কথা সেতুমন্ত্রীর কণ্ঠেও
এদিকে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সরকারের নীতিনির্ধারকদের কণ্ঠেও এমন বাস নিয়ে আক্ষেপ শোনা যায়। সম্প্রতি রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে পরিবহন মালিকদের উদ্দেশে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ঢাকা শহরে যে বাসগুলো চলে, সেগুলোর দিকে কি তাকানো যায়? গাড়িগুলোর দিকে তাকালে বাংলাদেশকে গরিব গরিব লাগে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘লক্কড়-ঝক্কড় বাস চলছে, একটু রং-টং তো করে দিতে পারেন। গাড়ির গায়ে লেখা থাকে আল্লাহর নামে চলিলাম, ঠিক আল্লাহর নামেই গাড়ি চলছে। ঢাকার বাইরে যে গাড়ি চলে, সেগুলো তো ভালোই চলছে। তাহলে ঢাকার বাসের এই অবস্থা কেন?’
জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন আইন নিয়েও কথা বলেন মন্ত্রী।
কী করছে বিআরটিএ?
সম্প্রতি এই ধরনের ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এ অবস্থায় ফিটনেসবিহীন, রংচটা, জরাজীর্ণ, জানালা/দরজার কাঁচ ভাঙা পরিবহনের মালিকদের আগামী ৩০ নভেম্বর মধ্যে ঠিক করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিআরটিএ।
গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংশ্লিষ্টদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, গণপরিবহনের সৌন্দর্যের ওপর নগরের সৌন্দর্য ও দেশের ভাবমূর্তি অনেকাংশে নির্ভর করে। লক্ষ্য করা যাচ্ছে কিছু বাস/মিনিবাসের রংচটা, লক্কর-ঝক্কর, জরাজীর্ণ, জানালা/দরজার কাঁচ ভাঙা, সামনে/পেছনের লাইট ভাঙা।
কোনো কোনো বাস থেকে কালো ধোঁয়াও নির্গমন হচ্ছে। এছাড়া কিছু বাস/মিনিবাসে ভেতরে ফ্যান থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা ভাঙা ও অচল দেখা যায়। সিটের কভারও অপরিষ্কার। অস্বাস্থ্যকর ও ত্রুটিযুক্ত যানবাহনে যাত্রীদের চলাচলে নানাবিধ ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।
এতে আরও বলা হয়, সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ এর ধারা-২৫ অনুযায়ী ত্রুটিমুক্ত যানবাহন চলাচলের বাধ্যবাধকতা এবং এর ব্যত্যয়ে আইনের ধারা ৭৫ অনুযায়ী কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। এ অবস্থায়, সংশ্লিষ্ট মোটরযান মালিকদের আগামী ৩০ নভেম্বর মধ্যে রংচটা, জরাজীর্ণ, জানালা/দরজার কাঁচ ভাঙা, সামনে/পেছনের লাইট ভাঙা, কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী ত্রুটিপূর্ণ বাস/মিনিবাসগুলো ত্রুটিমুক্ত করতে অনুরোধ করা যাচ্ছে।
অন্যথায়, আগামী ৩০ নভেম্বরের পর মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
বিইউ/জেবি











































































































































































