আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’। ক্রমশ এটি এগিয়ে আসছে বঙ্গোপসাগর থেকে উত্তর-পশ্চিম উপকূলের দিকে। আবহাওয়া অধিদফতরের সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে অনুযায়ী, উপকূলীয় ১৩ জেলা এবং মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেওয়া হয়েছে।
অনেকের আগ্রহ এই ঘূর্ণিঝড়ের নামটি নিয়ে। এর নাম কেন সিত্রাং হলো? কারা এই নাম দিয়েছে? এর অর্থই বা কী? প্রশ্নগুলোর উত্তর বিস্তারিত জানুন-
বিজ্ঞাপন
সিত্রাং নামটি থাইল্যান্ডের দেওয়া। এবার ঘূর্ণিঝড়ের আনুষ্ঠানিক নামকরণের দায়িত্ব ছিল থাইল্যান্ডের। ভিয়েতনামিজ ভাষায় শব্দটির অর্থ ‘পাতা’।
ঝড়ের এমন অদ্ভুত নামকরণের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। বেশ কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হচ্ছে। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা ট্রপিক্যাল সাইক্লোনের ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের ১১টি সতর্কতা কেন্দ্র এই নামগুলো দেয়।
চূড়ান্ত নাম অনুমোদনের জন্য এই সংস্থার আঞ্চলিক ট্রপিক্যাল সাইক্লোন কমিটির কাছে সব নাম জমা দেওয়া হয়। সেখান থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বাছাই শেষে চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করা হয়। ঝড়ের ফলে বেশি মাত্রায় মৃত্যু অথবা সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি না হলে এই চূড়ান্ত নাম পরিবর্তন করা হয়।
>> আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং: কোন সংকেতে কী বোঝায়?
বিজ্ঞাপন
শুরুর দিকে আবহাওয়াবিদরা মেয়েদের নামে ঝড়গুলোর নামকরণ করতেন। ১৯৫৩ সালে ইউএস ওয়েদার সার্ভিস আনুষ্ঠানিকভাবে Q, U, X, Y, Z ব্যতীত A থেকে W পর্যন্ত আদ্যাক্ষরে মেয়েদের নামে ঝড়ের নামকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। নারী ব্যাপারটিকে অপমানের মনে করেন। ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে তাদের প্রতিবাদের পর ১৯৭৮ সালে ছেলেদের নামেও ঝড়ের নামকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বছরের প্রথম ঝড়ের নাম রাখা হতো A আদ্যাক্ষর দিয়ে। দ্বিতীয় ঝড়ের নাম রাখা হতো B আদ্যাক্ষর দিয়ে। এভাবে ক্রমান্বয়ে চলতে থাকত। ঝড়ের নাম ছেলে নাকি মেয়ের নামে হবে সেটিও হিসাব করা হতো জোড়-বিজোড় মেনে। জোড় সালের বিজোড় ঝড়গুলোর নাম রাখা হতো পুরুষের নামে আর বিজোড় সালের বিজোড় ঝড়গুলোর নাম রাখা হতো নারীদের নামে।
এক বছরে যদি ২১টির বেশি হারিকেন উৎপন্ন হতো, তাহলে গ্রিক বর্ণমালা অনুযায়ী নামকরণ করা হয় হারিকেন আলফা, বিটা ইত্যাদি।
>> আরও পড়ুন: বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রলয়ঙ্করী ৫ ঘূর্ণিঝড়
বর্তমানে বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে ঝড়ের নামের তালিকা গ্রহণ করে ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন। এসব প্রস্তাবিত নামগুলো থেকে বেছে নেওয়া হয় একটি। ভারত মহাসাগরের উত্তরাঞ্চলে উদ্ভূত ট্রপিক্যাল সাইক্লোনের নামের তালিকা আঞ্চলিক কমিটির কাছে পাঠানোর দায়িত্ব রয়েছে ভারত, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, ইরান, কাতার, সৌদি আরব, ইয়েমেন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
বাংলাদেশের দেওয়া সর্বশেষ নির্বাচিত হওয়া ঝড়ের নাম ‘ফণী’। এরপর পাকিস্তানের ‘তিতলি’, মালদ্বীপের ‘আইলা’, থাইল্যান্ডের ‘আম্ফান’ এসেছিল। এবারের সাইক্লোনটির নামকরণও করেছে থাইল্যান্ড।
সিত্রাংয়ের পরবর্তী ঝড়ের নামও আগে থেকে ঠিক করা রয়েছে। এরপর যে ঘূর্ণিঝড় হবে তার নাম হবে ‘মন্দোস’। এই নামকরণ করেছে সৌদি আরব। তারপরের ঘূর্ণিঝড়টির নাম হবে ‘মোচা’। সেই নামটি ইয়েমেনের দেওয়া।
এনএম