ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে কক্সবাজারের নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। বিধ্বস্ত হয়েছে প্রায় তিন হাজার বসতবাড়ি। পাঁচ শতাধিক চিংড়ি ঘেরের বাঁধ ভেঙে কোটি কোটি টাকার মাছ সাগরের পানিতে ভেসে গেছে। বিশেষ করে মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, কক্সবাজার সদর ও টেকনাফের সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপ উচ্চ জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেন্টমার্টিনে দুই শতাধিক বসতবাড়িতে ঢুকে পড়েছে পানি। শাহপরীর দ্বীপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৮০ পরিবার। কক্সবাজার সদরের লামারপাড়া, গোদারপাড়া, নাজিরারটেক, সমিতি পাড়া, খুরুশকূল, চৌফলদণ্ডী ও পোকখালী ইউনিয়নের ৮৫০ কাঁচা ঘরবাড়ি উচ্চ জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া, ঘটিভাঙ্গা, তাজিয়াকাটা, বড়দিয়া, অমাবশ্যাখালী, কালিগঞ্জ মৌজা, পশ্চিম ঝাপুয়া, মাইজপাড়া, মাতারবাড়ী ইউনিয়নের জালিয়াপাড়, সাইরার ডেইল, হংস মিয়াজির পাড়া ও ঘলঘাটা ইউনিয়নের সাইটপাড়া, কেরুনতলী, শরইতলা, সুতুরিয়া, বেগুনবনিয়া, পন্ডিতের ডেইল ও ঘাটপাড়াসহ দুই হাজার পরিবার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়।
এদিকে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কুতুবদিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল, আলী আকবর ডেইল, খুদিয়ারটেক ও উত্তর ধুরুম এলাকার দেড় হাজার পরিবার।
কুতুবদিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপংকর তঞ্চঙ্গ্যা জানান, কুতুবদিয়ায় সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ৮০০ ঘরবাড়ি। সাধুপানির ৪৫ পুকুর নোনাজলে প্লাবিত হয়েছে। উত্তর ধুরুম ও দক্ষিণ ধুরুম এলাকার প্রায় ৪০ একর ধানি জমি লবণ জলে প্লাবিত হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এছাড়া, পেকুয়া উপজেলার মগনামা, রাজাখালী, টৈটং ও উজানটিয়া এলাকার প্রায় সাড়ে পাঁচশো বসতবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। চকরিয়া উপজেলার বদরখালী, পশ্চিম বড় ভেওলা, কোনাখালী, চিরিংগা, ডুলাহাজারা ও খুটাখালী ইউনিয়নের সহস্রাধিক বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। এর বাইরে কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকার ৫০০ এর অধিক চিংড়ি ঘেরের মাছ উচ্চ জলোচ্ছ্বাসে সাগরে ভেসে গেছে।
সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণে জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদের নেতৃত্বে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে।
এদিকে, উচ্চ জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত উপকূলীয় নিম্নাঞ্চল থেকে পানি সরে যাচ্ছে। তবে বাড়ছে জনদুর্ভোগ। রাতে উপকূলের ৫ শতাধিক আশ্রয় কেন্দ্রের তিন শতাধিক আশ্রয় কেন্দ্রের মধ্যে প্রায় ২ লক্ষাধিক লোক আশ্রয় নিয়েছিলেন।
ধলঘাটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুল হাসান জানান, ধলঘাটায় ৬ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে, সেই সঙ্গে ৪টি চিংড়ি প্রজেক্ট সাগরের পানিতে ভেসে গেছে। রাতে আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছিল প্রায় ১০ হাজার মানুষ।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মামুনুর রশীদ জানান, দুর্যোগ কেটে গেছে আপাতত। সারারাত উপকূলে নজর ছিল। গভীর রাত পর্যন্ত আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হয়েছিল লোকজনদের। তবে বড় কোনো দুর্ঘটনা বা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এখন পানি নেমে যাচ্ছে। ক্ষতের চিহ্ন ভেসে উঠছে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে জেলায় কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা নিরুপনের চেষ্টা চলছে। খুব শিগগিরই এসব বিষয় জানানো হবে।
টিবি