শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করেছিল ‘অশনি’, এবার শঙ্কা কম

ওয়াজেদ হীরা
প্রকাশিত: ২৩ অক্টোবর ২০২২, ০৭:৪৯ পিএম

শেয়ার করুন:

ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করেছিল ‘অশনি’, এবার শঙ্কা কম
ফাইল ছবি

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে রূপ নিয়ে দেশের উপকূলে আছড়ে পড়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছে আবহাওয়া অধিদফতর। এ জন্য ইতোমধ্যেই নানা প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়টি কক্সবাজার থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত ১৯টি জেলার ৭৩০ কিলোমিটার উপকূলজুড়ে আঘাত হানতে পারে বলে জানা গেছে। সেই সঙ্গে আশঙ্কা রয়েছে নানা ধরনের ক্ষয়ক্ষতিরও।

তবে গতবারের ‘ঘূর্ণিঝড় অশনি’র মতো এবার তেমন ক্ষতি হবে না বলে মনে করছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। যদিও এর পরও ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংকে ঘিরে নানা প্রস্তুতি নেওয়াসহ কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।


বিজ্ঞাপন


গত মে মাসে চোখ রাঙিয়ে উপকূলে ধেয়ে আসে ঘূর্ণিঝড় অশনি। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এই ঘূর্ণিঝড় গত ১১ মে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের মছিলিপত্তনম ও নারসাপুরমের মধ্যবর্তী স্থান থেকে সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশেও আঘাত হানতে পারে এমন শঙ্কায় ব্যাপক প্রস্তুতিও ছিল। তবে উপকূলে না আসলেও এর প্রভাবে সে সময় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। ওই সময় ঘূর্ণিঝড় অশনি স্রেফ চোখ রাঙিয়ে বিদায় নিলেও বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। অনেক জায়গায় কেটে রাখা ফসল পানিতে ভেসে যায়।

Cycloneসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে ক্ষতি এড়াতে সে সময় কৃষকদের দ্রুত ফসল তোলার পরামর্শ দিয়েছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। অনেকেই আধপাকা ধানও কেটে ঘরে তুলেছিলেন। এরপরও অনেক ফসলের ক্ষতি হয়েছিল। চার মাস আগের সেই ঘূর্ণিঝড়ে বরগুনা, ঝালকাঠি, বরিশাল, ভোলার মতো উপকূলীয় জেলার বাইরেও অনেক জেলায় বোরো ধান ও রবি ফসলের ক্ষেত তলিয়ে যায়। অনেকের কেটে রাখা পাকা ধান পানিতে ভেসে যায়। আবার শ্রমিক সংকটে সে সময় বোরো ধান উঠাতে রীতিমতো হিমসিম খেতে হয় কৃষকদের। ফলে পানিতে অনেক ফসলই তলিয়ে যায়।

ওই সময় শুধু আমতলী (বরগুনা) উপজেলার অন্তত সাত হাজার কৃষকের রবি ফসলের অন্তত পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। অনেকের তরমুজ, মুগ, মরিচ ভেসে যায় জলে। এছাড়া ভোলায়ও ১০ হাজার ২৩৪ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়। পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় অশনি’র প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও বন্দর নগরী চট্টগ্রামে তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। এমনকি এর প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে লক্ষ্মীপুরে সয়াবিন ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছিল।

সবশেষ ওই ঘূর্ণিঝড়ের মতো এবারও ফসলের তেমন ক্ষতি হবে কি-না এমন শঙ্কা কৃষকদের মাঝে। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে- উদ্বেগের কারণ নেই। সংস্থাটির একাধিক কর্মকর্তা ঢাকা মেইলকে জানিয়েছেন, এবার ঘূর্ণিঝড় অশনির মতো আশঙ্কা নেই। সেই সময় বোরো পাকা ধানসহ মাঠে অনেক ফসল ছিল। এবার কিন্তু সেটি নেই।

বিষয়টিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে মহাপরিচালক বেনজীর আলম ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা আমাদের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছি প্রস্তুত থাকতে। তবে শুধু আমন ধান ছাড়া অন্য তেমন ক্ষতি হবে না। যদি ঝড় হয় তবে আমাদের আমন ধান যেগুলোয় ফুল এসেছে সেগুলোর ক্ষতি হবে। আমনের পাকা পর্যায়ে আছে ৬ শতাংশ, দুধ পর্যায়ে আছে ১২ শতাংশ এবং ৪৯ শতাংশ ফুল পর্যায়ে। ঝড় হলে এই আমনে কিছু ক্ষতি হবে। এছাড়া আগাম সবজির কিছু ক্ষতি হতে পারে। সেই সঙ্গে যারা রবিশস্যে বীজতলা করছেন সেই ফসলের ক্ষতির আশঙ্কাও করেছেন অনেক কর্মকর্তা। তবে আশঙ্কা থাকলেও সেই ক্ষতি অশনির চেয়ে অনেক কম বলেও জানিয়েছেন তারা।

Cycloneএদিকে, বাংলাদেশ কৃষি আবহাওয়া তথ্য পোর্টালে বিশেষ কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ হিসেবে এক বিজ্ঞপ্তিতে পরিপক্ব সবজি, আমন ধান ৮০ শতাংশ পরিপক্ব হলে কেটে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে আপাতত জমিতে সেচ, সার-কীটনাশক দেওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় বীজতলা ও চারা ভেসে যেতে পারে, তাই বীজ বপন ও চারা রোপণ থেকে বিরত থাকার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি আবহাওয়া তথ্য পোর্টালে।

অন্যদিকে, ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আবহাওয়া অধিদফতরের সবশেষ বুলেটিনে জানানো হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি রোববার মধ্যরাতে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এটি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে আঘাত হানবে বলেই মনে করা হচ্ছে। এই শঙ্কার কথা জানিয়েছেন খোদ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানও। সেই সঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের ফলে উপকূলীয় এলাকায় তিন থেকে পাঁচ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলেও জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।

ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, গত তিন বছরে যে ঘূর্ণিঝড় হয়েছে তারমধ্যে এর কভারেজ এলাকা সবচেয়ে বেশি। এটি মোকাবিলায় আমাদের সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ সময় সোমবার (২৪ অক্টোবর) দিবাগত রাত থেকে মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) সন্ধ্যার মধ্যে এটি আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।

উল্লেখ্য, সিত্রাংয়ের প্রভাবে ইতোমধ্যেই রাজধানীসহ উপকূলের বিভিন্ন জেলায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে।

ডব্লিউএইচ/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর