ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে গাইবান্ধার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ঝড়-বৃষ্টি। এর কবলে পড়ে কৃষকের রোপা আমন ধান, শাক-সবজি ও কলাবাগানসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এসব ফসল ঘরে তোলার সম্ভাবনায় মুহূর্তে অপূরণীয় ক্ষতিতে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন কৃষক।
মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) সরেজমিনে গাইবান্ধার বিভিন্ন মাঠপর্যায়ে দেখা গেছে, কৃষকের ক্ষয়ক্ষতির দৃশ্য। কীভাবে এই ক্ষতি পুষিয়ে নেবেন এ নিয়ে চরম হতাশায় পড়ছে তারা। কৃষকদের এমন ক্ষতি হলেও মাঠে নেই কৃষি কর্মকর্তারা।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, কৃষি নির্ভরশীল গাইবান্ধায় চলতি রবি মৌসুমে আমন ধান, কলাবাগান ও শাক-সবজিসহ প্রায় ২ লক্ষাধিক হেক্টর জমিতে এসব চাষাবাদ করা হয়েছে। আর কিছুদিন পরেই মাঠের ফসল ঘরে তুলে দিনবদলের স্বপ্ন দেখছিলেন কৃষকরা। এরই মধ্যে সোমবার উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের সৃষ্টি হয়। আর এই প্রভাব পড়ে গাইবান্ধায়। দিন-রাত প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে থেমে থেমে ঝড় ও বৃষ্টিপাত হয়। বৈরী এই আবহাওয়ায় পানির ওপর নুয়ে পড়ে কৃষকের আধাপাকা ধান। শুধু ধানই নয়, কলাবাগানসহ শাক-সবিজরও ক্ষতি হয়। সংসারের মৌলিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ধার-দেনায় আবাদ করা এসব ক্ষেতে ফসল নষ্ট হওয়ায় মাথায় বাজ পড়েছে কৃষকের। আর দুই সপ্তাহ পর যেসব ফসল ঘরে উঠত কিন্তু হঠাৎ ঝড়-বৃষ্টিতে কৃষকের বুকভরা স্বপ্ন এক নিমেশেই ভেঙে যায়। তাদের বহুদিনের দিনে কাঙ্খিত এই স্বপ্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে মুহূর্তে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। কৃষকরা ধারণা করছে, গাইবান্ধার সাত উপজেলায় প্রায় ৪ হাজার হেক্টর ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে, কৃষকের মাঠে এমন ক্ষয়ক্ষতি হলেও মাঠে দেখা নেই কৃষি কর্মকর্তাদের। মঙ্গলবার দিনব্যাপী ট্রেনিংয়ে ব্যস্ত রয়েছেন গাইবান্ধা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক বেলাল উদ্দিন। মাঠ দেখা তো দূরের কথা ট্রেনিংয়ের ব্যস্ততায় সংবাদকর্মীদের তথ্য দেওয়ারও সময় নেই এই কর্মকর্তার।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক জহির উদ্দিন জানান, ৫ বিঘা জমিতে রোপা আমন ধান আবাদ করছেন। গতকালের দুর্যোগে এক বিঘা জমির আধাপাকা ধান নুয়ে পড়েছে পানির ওপরে। হঠাৎ এই ক্ষতি হওয়ায় দুশ্চিতায় ভুগছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
কলাচাষি সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি আড়াই বিঘা জমিতে কলা চারা রোপণ করছিলাম। ফলনও হয়েছিল ভালো। প্রায় ৩ লাখ টাকা লাভের আশা করছিলাম। এরই মধ্যে দমকা হাওয়া পুরো কলাবাগান তছনছ হয়ে গেছে। এখন কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবো তার কিনো কূলকিনারা খুঁজে পারছি না।
নজরুল ইসলাম নামের আরেক কৃষক ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘আমি শীতের আগাম সবজিসহ ধান আবাদ করছিলাম। গতকালের ঝড়-বৃষ্টিতে এসব ক্ষেতে ক্ষয়ক্ষতি হলেও কৃষি বিভাগের কেউও আসেনি আমাকে পরামর্শ দিতে।’
এ বিষয়ে গাইবান্ধা কৃষি বিভাগের উপপরিচালক বেলাল উদ্দিনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে ট্রেনিংয়ে আছি। পরে কথা হবে।
টিবি