ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সারাদেশে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে। এরই মধ্যে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে রাজধানীসহ দেশের অনেক অঞ্চলে। দেশের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সোমবার (২৪ অক্টোবর) সকাল থেকে রাজধানীতে মাঝারি ধরনের বৃষ্টির সঙ্গে ছিল হালকা বাতাস। গতকাল রোববারেও দুপুর থেকে ফোটাফোটা বৃষ্টি হতে দেখা যায়। সকালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, বৃষ্টির কারণে ব্যস্ততম সড়কগুলো অনেকটাই ফাঁকা। মানুষও কম বের হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে যারা বের হয়েছেন তারা ছাতা মাথায় অনেকে রেইনকোড গায়ে দিয়ে বের হয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালের খেপুপাড়ায় সর্বোচ্চ ৭১ মিলি মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়াও বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালীতে ৫৫, ভোলায় ৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে সংস্থাটি।
সোমবার (২৪ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশের দিনের তাপমাত্রা (১-৩) ডিগ্রি সে. হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাব পড়তে পারে নদ-নদীগুলোতেও। এর ফলে আকস্মিক বন্যার শঙ্কার কথা জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূইয়া জানিয়েছেন, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীসমূহের পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে আগামী ২৫-২৬ অক্টোবর দেশের উপকূলীয় অঞ্চলসহ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ সংঘটিত হতে পারে।
এই সময়ে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পার্বত্য অববাহিকার কিছু স্থানে আকস্মিক বন্যা দেখা দিতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এই সময়ে দেশের পূর্বাঞ্চলের মুহুরী, গোমতী ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মনু, খোয়াই, সুরমা-কুশিয়ারা নদ-নদীসমূহের পানি সমতল দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে এবং সময় বিশেষে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
বিজ্ঞাপন
তবে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ফসলের খুব একটা ক্ষয় ক্ষতি হবে না বলে জানিয়েছে কৃষি কর্মকর্তারা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন গতবারের ‘ঘূর্ণিঝড় অশনি’র মতো এবার তেমন ক্ষতি হবে না। যদিও এরপরও ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংকে ঘিরে নানা প্রস্তুতি নেওয়াসহ কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে মহাপরিচালক বেনজীর আলম ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা আমাদের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছি প্রস্তুত থাকতে। তবে শুধু আমন ধান ছাড়া অন্য তেমন ক্ষতি হবে না। যদি ঝড় হয় তবে আমাদের আমন ধান যেগুলোয় ফুল এসেছে সেগুলোর ক্ষতি হবে। আমনের পাকা পর্যায়ে আছে ৬ শতাংশ, দুধ পর্যায়ে আছে ১২ শতাংশ এবং ৪৯ শতাংশ ফুল পর্যায়ে। ঝড় হলে এই আমনে কিছু ক্ষতি হবে। এছাড়া আগাম সবজির কিছু ক্ষতি হতে পারে। সেইসঙ্গে যারা রবিশস্যে বীজতলা করছেন সেই ফসলের ক্ষতির আশঙ্কাও করেছেন অনেক কর্মকর্তা। তবে আশঙ্কা থাকলেও সেই ক্ষতি অশনির চেয়ে অনেক কম বলেও জানিয়েছেন তারা।
এদিকে সোমবার (২৪ অক্টোবর) সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৮ নম্বর বিশেষ সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ, অমাবশ্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ০৫-০৮ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। এর ফলে পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর।
আবহাওয়াবিদ খোন্দকার হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৭ (সাত) নম্বর বিপদ সংকেত (পুন:) ৭ (সাত) নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ (সাত) নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারী সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৬ (ছয়) নম্বর বিপদ সংকেত (পুন:) ৬ (ছয়) নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৬ (ছয়) নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
টিএই/এমএ