শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ধেয়ে আসছে সিত্রাং, উপকূলজুড়ে প্রস্তুতি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৩ অক্টোবর ২০২২, ০৭:৪৩ পিএম

শেয়ার করুন:

ধেয়ে আসছে সিত্রাং, উপকূলজুড়ে প্রস্তুতি
মাছ ধরার ট্রলারকে সমুদ্রে যেতে বারণ করা হয়েছে। ছবি: ঢাকা মেইল

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সিত্রাং নামের ঘূর্ণিঝড়টির আঘাতের শঙ্কায় উপকূলীয় এলাকায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের গতিবিধি লক্ষ্য করে প্রয়োজনীয় উপকূলীয় এলাকার মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতিও রয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের।

রোববার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, লঘুচাপ সৃষ্টির পর থেকেই আমাদের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পূর্বাভাস কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখছি। ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোকে আগাম প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে আমাদের ভার্চুয়ালি মিটিং হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


প্রতিমন্ত্রী বলেন, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির মিটিং হয়েছে। সিপিপিকে (ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি) প্রস্তুতি গ্রহণ ও সতর্কবার্তা প্রচারের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেলা পর্যায়ে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো আমরা প্রস্তুত রাখতে বলেছি। আশ্রয় কেন্দ্রগুলো পরিষ্কার করা হয়েছে।

enamul
সিত্রাং নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী। ছবি: সংগৃহীত

এনামুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হলে এর নাম হবে- সিত্রাং। এটি আরও এগিয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে মোড় নিতে পারে। উত্তর-পূর্ব দিকে মোড় নিলে এটি কক্সবাজার থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত প্রতিটি জেলাতেই আঘাত হানবে। সমুদ্রবন্দরগুলোতে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত জারি করা হয়েছে।

উপকূলীয় এলাকায় প্রস্তুতি


বিজ্ঞাপন


ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের সম্ভাব্য আঘাতের কথা চিন্তা করে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সঙ্গে সবধরনের নৌ-যোগাযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। রোববার (২৩ অক্টোবর) বিকেল ৩টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এটি কার্যকর থাকবে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সেলিম হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নদী উত্তাল থাকায় জনগণের যানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে হাতিয়ার সঙ্গে সারা দেশের নৌ-চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত মোকাবেলায় প্রস্তুতি শুরু হয়েছে কক্সবাজারে। কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন সমুদ্রপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। রোববার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান ঢাকা মেইলকে জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেন্টমার্টিন নৌ-পথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকবে। জাহাজ যেটি গিয়েছিল, সেটি ফেরত আসছে। এটি আর কাল (সোমবার) থেকে যাবে না। যতক্ষণ না সংকেত নামবে ততক্ষণ এটি বন্ধ থাকবে।

সাগরে নিম্নচাপের কারণে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। উপকূল রক্ষা বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ অংশ মেরামতসহ জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দিয়েছে প্রশাসন।

bagerhat
নিম্নচাপের প্রভাবে বাগেরহাটে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। ছবি: ঢাকা মেইল

রোববার (২৩ অক্টোবর) সকাল থেকে উপকূলবর্তী বিভিন্ন অংশে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হওয়ার পাশাপাশি সমগ্র এলাকাজুড়ে গুমোট আবহাওয়ার তৈরি হয়েছে। এদিকে শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালীনি, কৈখালী ও গাবুরা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নিম্নচাপের কারণে উপকূলীয় এলাকার মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা ভর করেছে।

সিত্রাংয়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে গুঁড়ি-গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। রোববার (২৩ অক্টোবর) সকাল থেকে এ বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সময় বাড়ার সাথে সাথে বৃষ্টি ও বাতাসের গতি আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। নিম্নচাপটি মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৭৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণে রয়েছে। যার ফলে মোংলা সমুদ্রবন্দকে তিন নম্বর সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। তবে মোংলা বন্দরের পণ্য খালাস ও বোঝাই স্বাভাবিক রয়েছে।

সাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি রোববার (২৩ অক্টোবর) রাতে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, এটি আরও ঘনীভূত ও ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে প্রাথমিকভাবে দিক পরিবর্তন করে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে বলে।

এর প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ০৩-০৫ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা পরবর্তীতে আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর