বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৪, ঢাকা

বিএনপির গণসমাবেশ থেকে আসতে পারে যেসব কর্মসূচি

মো. ইলিয়াস
প্রকাশিত: ১০ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:১২ এএম

শেয়ার করুন:

বিএনপির গণসমাবেশ থেকে আসতে পারে যেসব কর্মসূচি

নানান ঘাত-প্রতিহত ও রক্তক্ষরণের পর অবশেষে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ হচ্ছে আজ শনিবার (১০ ডিসেম্বর)। রাজধানীর গোলাপবাগ খেলার মাঠে কোনো ধরনের অবকাঠামগত ক্ষয়ক্ষতি হলে তার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার শর্তে বিএনপিকে মাঠ ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সমাবেশ সফল করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। গণসমাবেশে কি ধরনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে তা ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে।

ঢাকার গণসমাবেশ থেকে সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ১০ দফা দাবি তুলে ধরে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দেবে বিএনপি। ‘লংমার্চ’ ও ‘রোডমার্চ’র মতো কর্মসূচিও আলোচনায় রয়েছে। কর্মসূচি ঘোষণার সঙ্গে সরকারকে দাবি মেনে নিতে আলটিমেটামও দেওয়া হতে পারে।


বিজ্ঞাপন


সরকারকে চাপে ফেলতে এবার আটঘাট বেঁধে মাঠে নামছে বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট। ডান, বাম ও মধ্যপন্থী বেশ কটি সমমনা রাজনৈতিক দলও মাঠে থাকবে। এ লক্ষ্যে তারা প্রস্তুতিও নিয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেলেই একযোগে মাঠে নামবেন তারা।

bnp

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিএনপির প্রতি সংহতি প্রকাশ করা এ দলগুলোর প্রত্যাশা- এদিন যুগপৎ আন্দোলনের সূত্রপাত হবে এবং মুষ্টিবদ্ধ আন্দোলনেই সরকারের পতন হবে।

বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, ঢাকার গণসমাবেশ থেকে ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগ, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবি জানাবে বিএনপি। এই দাবিগুলো সমাবেশে উপস্থাপন করবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন। পাশাপাশি তিনি আগামী দিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।

১০ দফা দাবি নিয়ে ইতোমধ্যে বিএনপির সঙ্গে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা হয়েছে। বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এই ১০ দফা দাবি ঠিক করা হয়েছে।

বিএনপির শীর্ষনেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকার গণসমাবেশে ১০ দফার যে দাবি ঘোষণা করা হবে তা হচ্ছে-
১. বর্তমান জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে ক্ষমতাসীন সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।
২. ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮-খ, গ ও ঘ’-এর আলোকে একটি দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার/অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন।
৩. নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ সরকার/অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্ববধায়ক সরকার বর্তমান অবৈধ নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, উক্ত নির্বাচন কমিশন অবাধ নির্বাচনের অনিবার্য পূর্বশর্ত হিসাবে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে আরপিও সংশোধন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল ও পেপার ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা করা এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করা।
৪. খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী, সাংবাদিক এবং আলেমদের সাজা বাতিল, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক কারাবন্দিদের অনতিবিলম্বে মুক্তি, দেশে সভা, সমাবেশ ও মত প্রকাশে কোনো বাধা সৃষ্টি না করা, সব দলকে স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে প্রশাসন ও সরকারি দলের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ বা বাধা সৃষ্টি না করা, স্বৈরাচারী কায়দায় বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে নতুন কোনো মামলা ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার না করা।
৫. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব কালা-কানুন বাতিল করা।
৬. বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস ও পানিসহ জনসেবা খাতের মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল।
৭. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে সিন্ডিকেট মুক্ত করা।
৮. গত ১৫ বছর ধরে বিদেশে অর্থ পাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত ও শেয়ার বাজারসহ রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করতে একটি কমিশন গঠন/দুর্নীতি চিহ্নিত করে অতি দ্রুত যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।
৯. গত ১৫ বছরে গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ভাঙচুর এবং সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করা।
১০. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে সরকারি হস্তক্ষেপ পরিহার করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া।

bnp

সূত্রের দাবি- সরকার হটাতে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই পর্বের সংলাপে প্রাপ্ত প্রস্তাবগুলোর ভিত্তিতে ১০ দফা তৈরি করা হয়েছে। 

বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, সরকারকে শেষ বার্তা দেওয়ার জন্য মাঠে নেমেছি। মামলা হামলা দিয়ে আমাদের ইউনিটি বাড়িয়ে দিয়েছে শেখ হাসিনা। এটাই হচ্ছে আমাদের সফলতা। মামলা হামলা করে বিএনপি দমিয়ে রাখা সম্ভব নয়। আন্দোলন করতে গিয়ে আমাদের যে সকল লাশগুলো পড়েছে, তা আমাদের শক্তিতে রূপান্তরিত করেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া পরিপূর্ণতা দেওয়ার বিষয়ে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে মূল বিষয়ে কোনো দ্বিমত তৈরি হয়নি। এখন এটিকে চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার কাজ চলছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ডিসেম্বরে সমমনা দলগুলো বিএনপির সঙ্গে মাঠে থাকবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকের ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে সরকারের বিদায়ের জন্য কতগুলো দফা ঘোষণা করব। আমাদের সাথে যারা যুগপৎ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত এবং ইতোমধ্যে আমাদের সাথে যাদের আলোচনা হয়েছে, সে সকল দলগুলো যুগপৎভাবে আমাদের ১০ দফা প্রণয়ন করেছি- তা ঘোষণা করবেন। দফাগুলো আদায়ের জন্য, আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য তারা সকলেই অংশগ্রহণ করবেন। যার যার অবস্থান থেকে যুগপৎ আন্দোলন হবে। আগামী দিনে ওই দলগুলো তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবেন, দফাগুলোর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করবেন।

এমই/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর