বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানী জুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিভিন্ন স্থানে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। চালানো হচ্ছে তল্লাশি। এছাড়াও পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাঠে কাজ করছেন।
জানা গেছে, যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় সোয়াট, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে কী হবে, কী হচ্ছে- এমন প্রশ্ন সবার মুখে মুখে। যত সময় ঘনিয়ে আসছে, তত রাজধানীবাসীর মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
শুক্রবার সকালে পল্টন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড়ে ব্যারিকেড দিয়ে নয়াপল্টন এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে পুলিশ। এছাড়াও ওই এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নাইটিঙ্গেল মোড় ও ফকিরাপুল মোড়ে ব্যারিকেড দেওয়ায় কারণে এ সড়কে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের প্রধান ফটক বন্ধ রয়েছে। কার্যালয়ের সামনেও বিপুল সংখ্যক পুলিশ অবস্থান করছে।
শুধু নয় পল্টনই নয়, রাজধানীর বায়তুল মোকাররম, পল্টন মোড়ে, মতিঝিল, কমলাপুর, মালিবাগ, মিরপুর, উত্তরা, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া কারওয়ান বাজার, পান্থপথ, ফার্মগেট এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে।
বিজ্ঞাপন
এদিকে, রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও সড়কে গিয়ে দেখা যায়, রাজধানী স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে উল্টো চিত্র। ফার্মগেটে দৌড়ে বাসে ওঠার তাগিদ নেই কোনো যাত্রীর, নেই দীর্ঘক্ষণ বাসের অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের ভিড়। একই অবস্থা কারওয়ান বাজার, পল্টন ও গুলিস্তানেও। পল্টন মোড়ে অলস সময় পার করছেন রিকশা চালকরা।
আবুল হোসেন নামের এক রিকশা চালক ঢাকা মেইলকে বলেন, ভোরে দিনে বাসা থেকে বের হয়েছি। কিন্তু সকাল ১১টা পর্যন্ত মাত্র ৫০ টাকা ইনকাম করেছি। ভয়ে মানুষ বাসা থেকে বের হচ্ছে না।
মতিঝিল আরামবাগ এলাকার বাসিন্দা মোবারক হেসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, আমার এলাকার লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। জরুরি কাজ ছাড়া কেউ বাসা থেকে বের হচ্ছেন না।
এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন ব্যস্ততম এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে সুনসান নীরবতা। ব্যস্ত এলাকা গুলিস্তান ও জিরো পয়েন্টেও গণপরিবহনের সংখ্যা কমে গেছে। ছিল না কোনো যাত্রীর চাপও।
ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের চালক রহমত উল্লাহ ঢাকা মেইলকে বলেন, সকাল থেকে গণপরিবহনের সংখ্যা কম রয়েছে। একই সাথে যাত্রীও কমে গেছে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে সবার মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো ধরনের নাশকতা না হয়; সে জন্য পুলিশ সর্তক অবস্থানে রয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
র্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সমাবেশ ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় র্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, স্পেশাল ফোর্স, স্পেশাল ডগ স্কোয়াড ও হেলিকপ্টার ইউনিট প্রস্তুত রয়েছে। নাশকতার পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়, সেজন্য সাদা পোশাকে রয়েছে র্যাবের গোয়েন্দা সদস্যরা।
তিনি আরও বলেন, জনগণের নিরাপত্তা ও জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র্যাবের নিয়মিত টহল কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, স্থান ও প্রবেশ পথসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে র্যাবের চেকপোস্টে নিয়মিত তল্লাশি কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া অনলাইনে মিথ্যা তথ্য ও গুজব ছড়ানোর মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা প্রতিহত করতে র্যাবের সার্বক্ষণিক সাইবার নজরদারি অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান র্যাবের ওই কর্মকর্তা।
কেআর/এএস