রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় মতিঝিল থানায় আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলায় ২৮ জনের নাম উল্লেখ ছাড়াও শতাধিক ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এ নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুটি মামলা হলো। এরমধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে করা আগের মামলাটি পল্টন থানায় করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) বিকেলে মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার (এসি) এনামুল হক মিঠু দ্বিতীয় মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞাপন
পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় মতিঝিল থানায় ২৮ জনের নাম উল্লেখ করে এই মামলা করা হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে পল্টন থানায় একটি মামলা দায়ে করে। বিস্ফোরক আইন ও পুলিশের ওপর হামলায় দায়ের করা ওই মামলায় প্রায় দুই হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পল্টন মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাহউদ্দীন মিয়া বলেন, বুধবারের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। মামলায় ৪৭৩ জনকে এজাহারনামীয় আসামি ছাড়াও ১৫০০-২০০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। পুলিশের ওপর হামলা ও বিস্ফোরক আইনে এ মামলা করা হয়েছে।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আগামী ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিভাগীয় সমাবেশ করতে চায় বিএনপি। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে দলটিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যদিও বিএনপি সেখানে সমাবেশ করবে না বলে জানিয়েছে। তৃতীয় কোনো ভেন্যুর বিষয়ে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। পুরান ঢাকার ধূপখোলা মাঠের কথাও আলোচনায় রয়েছে। এর মধ্যেই বুধবার (৭ ডিসেম্বর) সকাল থেকে নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনে জড়ো হতে থাকেন। পরে বিকেলের দিকে সেখানে বাধা দিতে গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
বিজ্ঞাপন
ওই সময় নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে রায়টকার দিয়ে মুহুর্মুহু টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। নেতাকর্মীরাও পাল্টা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ আরও জোরালো হয়। এতে পুরো এলাকা যেন রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। এ সময় স্লোগান দিয়ে পুলিশের দিকে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে নয়াপল্টন থেকে ফকিরাপুল মোড় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরে পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেডে ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে পড়ে দলীয় কার্যালয় ও এর আশপাশের এলাকা। সেই সঙ্গে কার্যালয়ের মধ্যে আটকা পড়েন রুহুল কবির রিজভীসহ আরও অনেক নেতাকর্মী।
বুধবার বিকেলের ওই সংঘর্ষের পর নয়াপল্টন কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে পুলিশ। পরে অভিযান চালিয়ে একে একে অবরুদ্ধ নেতাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ বিএনপির। দলটির পক্ষ থেকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ছাড়াও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিসহ শতাধিক নেতাকর্মীকে আটকের অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে, সংঘর্ষের ঘটনায় আহতদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মকবুল হোসেন (৪০) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া অন্যরা ঢামেকে চিকিৎসাধীন।
অন্যদিকে, সংঘর্ষের পর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ১৫টির মতো ককটেল ছাড়াও ১৬০ বস্তা চাল, নগদ টাকা ও বিপুল পরিমাণ পানি উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবারও কার্যালয়ের সামনে সিআইডির বোমা ডিসপোজাল ইউনিটকে অবস্থান করতে দেখা গেছে। সেই সঙ্গে বিএনপি কার্যালয়ের চতুর্দিক হলুদ রশি দিয়ে ঘেরাও করে রেখেছেন তারা।
এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে কাকরাইল নাইটেঙ্গেল মোড়ে আসেন মির্জা ফখরুল। কিন্তু পুলিশের বাঁধায় নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যেতে পারেননি তিনি। অবশ্য গতকালও সংঘর্ষের পর পুলিশি অভিযানে কার্যালয়ে ঢুকতে চাইলে সে সময়ও বিএনপির শীর্ষ এই নেতাকে নয়াপল্টন কার্যালয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরে রাত অবধি ফুটপাতের রাস্তায় বসে থাকার পর একপর্যায়ে ফিরে যান বিএনপি মহাসচিব।
কেআর/আইএইচ