দেশ-বিদেশের সবার চোখ রাজধানী ঢাকার দিকে। কারণ শনিবার (১০ ডিসেম্বর) রাজধানীতে বিএনপি ঢাকার বিভাগীয় মহাসমাবেশ করতে যাচ্ছে। এছাড়াও আওয়ামী লীগও রাজধানীজুড়ে সর্তক অবস্থানে থাকার ঘোঘণা দিয়েছে। দেশের সর্ববৃহৎ এ দুটি দলের এমন অবস্থানের কারণে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে রাজধানী ঢাকা।
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে বিভাগীয় শহরগুলোর বাসিন্দারা জানতে চাচ্ছেন; কি হচ্ছে ১০ ডিসেম্বর? শুধু তাই নয়, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে কী হবে, কী হচ্ছে- এমন প্রশ্ন বিদেশিদের মুখে মুখেও রয়েছে। অপরদিকে যত সময় ঘনিয়ে আসছে, তত রাজধানীবাসীর মধ্যেও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।
বিজ্ঞাপন
দলীয় সূত্রে জানা যায়, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ নানা দাবিতে দেশের নয়টি বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করার উদ্যোগ নেয় বিএনপি। গত ২৬ সেপ্টেম্বর বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঘোষণা অনুযায়ী গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামে, ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ, ২২ অক্টোবর খুলনা, ২৯ অক্টোবর রংপুর, ৫ নভেম্বর বরিশাল, ১২ নভেম্বর ফরিদপুর, ১৯ নভেম্বর সিলেট, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লায়, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে করেছে বিএনপি। সবশেষ আজ শনিবার (১০ ডিসেম্বর) ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ।
তবে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঘটে গেছে নানা ঘটনা। বিশেষ করে বুধবার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার ও স্থান নির্ধারণে নানা জটিলতায় সমাবেশ হবে কি না; এ নিয়েও দেখা দিয়েছিল অশ্চিয়তা। অবশেষে পুলিশের সাথে দফায় দফায় বৈঠকের পর রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশের অনুমতি পায় বিএনপি। সমাপ্তি ঘটে সকল জল্পনা-কল্পনার।
তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি দেওয়ার সময়ে ডিএমপির জুড়ে দেওয়া ২৬ শর্ত এই মাঠেও সমাবেশে মানতে হবে বিএনপিকে। এই শর্ত মেনেই আজ শনিবার গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করতে যাচ্ছে দলটি।
বিজ্ঞাপন
অপরদিকে, ১০ ডিসেম্বর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও রাজধানীতে সর্তক অবস্থানে থাকবে। ভোর থেকে পাড়ায়-মহল্লায় পাহারায় থাকবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। সেজন্য প্রস্তুতিও নিয়েছে দলটি। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, সমাবেশের নামে কোনো ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করলে বিএনপিকে সমীচীন জবাব দেওয়া হবে। এজন্য শনিবার ভোর থেকেই রাজধানীতে পাহারায় থাকবেন তারা। তাই সবার দৃষ্টি এখন রাজধানীর ঢাকায়।
শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) রাতে যুক্তরাজ্য থেকে সুলেমা বেগম নামের ৫০ ঊর্ধ্ব এক নারী এই প্রতিবেদকের কাছে ফোন দিয়ে ঢাকার সর্বশেষ পরিস্থিতির কথা জানতে চান। এ সময় ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে কি হচ্ছে? এমন প্রশ্নের উত্তরও খোঁজার চেষ্টা করেন তিনি।
এক পর্যায়ে তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ১০ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মধ্যেও অনেক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা রয়েছে। প্রবাসীদের নজর এখন ঢাকার দিকেও বলে জানান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বসবাসরত মওদুদ আহমেদ নামের এক ব্যক্তিও একই ঢাকার সর্বশেষ অবস্থা জানতে ফোন দেন এই প্রতিবেদনকে। এ সময় তিনিও ঢাকা মেইলকে বলেন, নিউইয়র্কে বসবাসকারী বাংলাদেশিরাও ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় কি হবে, কি হচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন।
১০ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে শুধু প্রবাসীরাই নয়, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাসিন্দাদের দৃষ্টিও রাজধানী ঢাকার দিকে।
মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার কটারকোনা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রউফ। শুক্রবার রাতে তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেও ১০ ডিসেম্বর নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। বিশেষ করে গ্রামের বাজারগুলোতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ চায়ের দোকানে বসে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তুলছেন।
সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার স্থানীয় সাংবাদিক আব্দুল মতিন ঢাকা মেইলকে বলেন, তাদের এলাকায়ও ১০ ডিসেম্বর নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।
চট্টগ্রামের বাসিন্দা লাবিবা নিসা ঢাকা মেইলকে বলেন, তাদের এলাকায়ও ১০ ডিসেম্বর নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। এমনকি ১০ ডিসেম্বর কি হচ্ছে; এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে সবার দৃস্টি এখন ঢাকায় রয়েছে।
এদিকে, বিএনপি গোলাপবাগ মাঠে তাদের ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ ভালোভাবেই করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠ পরিদর্শনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, বিএনপি সকালে গোলাপবাগ মাঠ চেয়েছিল। আমরা তো অনুমতি দিয়েছি। এখানে তো আর জটিলতা থাকার কিছু নেই।
পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আশা করি, বিএনপি এখানে সমাবেশ ভালোভাবেই করতে পারবে। মাঠের সার্বিক সিকিউরিটি প্ল্যানটা যেন আমরা দিতে পারি, সে কারণেই মাঠ পরিদর্শনে আসা। আমাদের বাহিনীর লোকজন কোথায় কোথায় অবস্থান নেবে তা দেখতে এসেছি।
কেআর/এএস