দফায় দফায় আলোচনার পর অবশেষে রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে বিএনপি। তবে রয়েছে শর্তের বেড়াজাল। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি দেওয়ার সময়ে ডিএমপির জুড়ে দেওয়া ২৬ শর্ত এই মাঠেও সমাবেশে মানতে হবে বিএনপিকে। এই শর্ত মেনেই আগামীকাল শনিবার (১০ ডিসেম্বর) গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করতে যাচ্ছে দলটি।
শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে যাত্রাবাড়ীর সায়দাবাদের এই মাঠে সমাবেশের অনুমতি পাওয়ার পর থেকেই দলে দলে বিএনপি নেতাকর্মীরা এই মাঠে আসতে শুরু করেছেন। এমনকি বিকেল গড়াতেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠে রাজধানীর এই মাঠটি। সেই সঙ্গে সমাবেশস্থলে আসতে পেরে বেশ উৎফুল্লও দেখা গেছে নেতাকর্মীদের। এ সময় নানা স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে গোলাপবাগ মাঠ। সবমিলিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যা নাগাদ মাঠে কয়েক হাজার নেতাকর্মীদের জড়ো হতে দেখা গেছে।
বিজ্ঞাপন
এর আগে বিকেলে ডিএমপি সমাবেশের অনুমতি দিলে দলে দলে বিএনপি নেতাকর্মীদের রিকশাযোগে সমাবেশস্থলে আসতে দেখা যায়। আবার অনেকেই হেঁটে হেঁটেও আসছেন সমাবেশস্থলে। তবে এখনও ছোট-বড় নানা দলে নেতাকর্মীদের সমাবেশস্থলে আসা অব্যাহত রয়েছে। জানা গেছে, মাঠের খোলা আকাশের নিচেই রাত্রি যাপন করবেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
সমাবেশে আসা টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান জসিম ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা তিনদিন আগেই ঢাকায় এসেছি। এখানেই রাত থাকব। খাওয়ার ব্যবস্থা এখানেই হবে আশা করছি।
একই উপজেলার স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক জাকির হোসেন প্রিন্স জানান, চারদিন আগে প্রায় দুই হাজার নেতাকর্মীসহ তারা ঢাকায় এসেছেন। পল্টনেও অনেকবার যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। এ সময় আন্দোলন সফল হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
মাঠে ঘুরে দেখা গেছে- নেতাকর্মীরা দলে দলে বিভক্ত হয়ে গ্রুপ করে বসে পড়েছেন ঘাসের ওপর। সেই সঙ্গে নানা ধরনের সরকারবিরোধী স্লোগান ও গান পরিবেশন করতে দেখা গেছে অনেককেই।
এ বিষয়ে কথা হলে সিলেট জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মিনার হোসেন লিটন ঢাকা মেইলকে বলেন, সমাবেশের অনুমতি পাওয়ার পরপরই আমরা গোলাপবাগ মাঠে চলে আসি। তবে মাঠে কোনো লাইটের ব্যবস্থা করা হয়নি। তাই অন্ধকারের মধ্যে আমরা মাঠে বসে আছি। মাঠে বসে সরকারবিরোধী গান ও স্লোগান দিয়ে কর্মীদের উজ্জীবিত করা হচ্ছে।
এদিকে, সমাবেশ ঘিরে নিরাপত্তা নিশ্চিতে মাঠের প্রবেশ মুখ রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়াও র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্যরাও এই এলাকায় টহল দিচ্ছেন।
অন্যদিকে, শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টর দিকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্তও অন্ধকারে রয়েছে গোলাপবাগ মাঠ। সেই সঙ্গে টাঙানো হয়নি কোনো মাইক। পাশাপাশি সময় গড়ার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিতি বাড়ছে নেতাকর্মীদের।
জ্বালানি তেল ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, দলীয় কর্মসূচিতে গুলি করে নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ ছাড়াও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে গত ১২ অক্টোবর থেকে চট্টগ্রামের মাধ্যমে শুরু হয়ে ইতোমধ্যেই বিভাগীয় (দলের সাংগঠনিক বিভাগ) পর্যায়ে সমাবেশ শেষ করছে বিএনপি। আগামীকাল ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বিএনপির পূর্বঘোষিত এই কর্মসূচি।
এরই ধারাবাহিকতায় বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনে যারা শরীক হতে যান তাদের সবাইকে আগামীকালের সমাবেশে আসার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সেই সঙ্গে ঢাকাবাসীকেও সমাবেশে যোগ দেওয়া আহ্বান জানিয়েছে তিনি।
বিএনপির শীর্ষ এই নেতা জানিয়েছেন, আগামীকাল রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ শুরু হবে বেলা ১১টায়। এই সমাবেশ থেকে দলের পক্ষ থেকে ১০ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
কেআর/টিএই/আইএইচ