রোববার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

প্রস্তুত ইজতেমা ময়দান, আসছেন দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লি 

আবুল হাসান
প্রকাশিত: ১১ জানুয়ারি ২০২৩, ০৩:৩৬ পিএম

শেয়ার করুন:

প্রস্তুত ইজতেমা ময়দান, আসছেন দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লি 
ছবি : ঢাকা মেইল

আগামী শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) শুরু হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা প্রথম পর্বের আনুষ্ঠানিকতা। কহরদরিয়া খ্যাত টঙ্গীর তুরাগ তীরে ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত ময়দান। ইজতেমায় অংশ নিতে ইতোমধ্যে ময়দানে আসতে শুরু করেছেন দেশ-বিদেশের মুসল্লিরা। 

রোববার (১৫ জানুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে এর আনুষ্ঠানিকতা। চারদিন বিরতির পর শুরু হবে দ্বিতীয় পর্ব। তবে বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে  ইজতেমার আয়োজনের দাবি সাধারণ মুসল্লিদের।


বিজ্ঞাপন


ijtema

ইজতেমার মিডিয়ার সমন্বয়কারী জহির ইবনে মুসলিম বলেন,  ১৬০ একর জায়গার বিশাল ময়দানে শামিয়ানা টানানোর কাজ শেষ। বৈদ্যুতিক বাতি, মাইক, জেনারেটর সংযোগ, পানি সরবরাহ ব্যবস্থাসহ আনুষঙ্গিক কাজও শেষ হয়েছে। শুক্রবার ফজরের নামাজের পর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। তবে বুধবার সকাল থেকেই ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে তাবলিগ জামাতের মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেছেন। অবস্থান নিয়েছেন তাদের নিজ নিজ খিত্তায়। আগত মুসল্লিদের সুবিধার্থে ৫ জোড়া বিশেষ ট্রেন ও বিআরটিসি বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ijtema

ময়দানের পশ্চিম পাশে তুরাগ নদীর পূর্বপাড়ে নামাজের মিম্বার এবং উত্তর-পশ্চিম দিকে বিদেশি মেহমানদের জন্য নির্ধারিত কামরার পাশে মূল বয়ান মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিবছরের মতো এবারও বাংলার পাশাপাশি উর্দু ও হিন্দি ভাষায় বয়ান করা হবে এবং বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মুসল্লিদের সুবিধার্থে বয়ানের সঙ্গে সঙ্গে তরজমা করা হবে। 


বিজ্ঞাপন


ইজতেমার সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মুসল্লিরা। তারা বলছেন, কনকনে শীত উপেক্ষা করে দলে দলে ময়দানে এসেছেন তারা। এখানে আমল, আখলাক, তাওহীদসহ ইসলামের মূল ভিত্তি নিয়ে আলোচনা করবেন শীর্ষ মুরুব্বিরা। 

বিশেষ ট্রেন

বিশ্ব ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে ৫ জোড়া বিশেষ ট্রেন সার্ভিসের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ইজতেমার প্রথম পর্বে শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) থেকে আখেরি মোনাজাত ও দ্বিতীয় পর্বে শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) থেকে আখেরি মোনাজাত পর্যন্ত বিভিন্ন গন্তব্যে এ সেবা চালু হবে।

ijtema
বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট (পূর্ব) মো. শহিদুল ইসলাম জানান, ইজতেমার দুই পর্বে ঢাকা থেকে পাঁচ জোড়া স্পেশাল ট্রেন চলবে। এছাড়া জামালপুর থেকে স্পেশাল ট্রেন চলবে এবং ময়মনসিংহে আখেরি মোনাজাতের দিন দুটি স্পেশাল ট্রেন যাবে। 

চিকিৎসকদের ছুটি বাতিল
ইজতেমা উপলক্ষে গাজীপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। গাজীপুরের সিভিল সার্জন মো. খায়রুজ্জামান বলেন, বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পাঁচটি ক্যাম্প স্থাপনের কাজ চলমান। সার্বক্ষণিক ১৪টি অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হবে।

গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন জানান, অগ্নিনির্বাপণের জন্য প্রতিখিত্তায় দুটি করে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র রাখা হবে। ফায়ার সার্ভিসের ৪টি অগ্নিনির্বাপণ গাড়ি ও ৫টি অ্যাম্বুলেন্স দায়িত্ব পালন করবে। 

গাজীপুর সিটির ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান বলেন, ইজতেমা উপলক্ষে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার অস্থায়ী টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১২টি নলকূপে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হবে। 

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, দুই পর্বের ইজতেমা সফল করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।

নিরাপত্তা জোরদার
মুসল্লিদের নিরাপত্তায় পুরো ময়দানে প্রায় ৩০০ ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এ ছাড়াও সাইবার নিরাপত্তা দেয়া হবে। ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও মুসল্লিদের সঙ্গে কথা বলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ।

এসময় তিনি বলেন, আমরা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদসহ যেকোনও আইনশৃঙ্খলাজনিত চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবিলা করেছি। এর ফলে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করতে পেরেছি। আস্থার জায়গাটা ধরে রাখার জন্য প্রস্তুত আছি।

ijtema

বুধবার সাড়ে ১১টায় গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে দুই পর্বের বিশ্ব ইজতেমার সর্বশেষ প্রস্তুতি পরিদর্শনে এসে কামারপাড়া সেতু সংলগ্ন বিদেশি খিত্তার পাশে তিনি এসব কথা বলেন।

আইজিপি বলেন, ‘আমরা সবসময় বলে থাকি পুলিশ লাইফ ইট ইজ অ্যা চ্যালেঞ্জিং লাইফ, এভরিডে ইজ ইউ ডে, কোন দিন কোন চ্যালেঞ্জ থাকবে, অর্থাৎ প্রতিদিনের চ্যালেঞ্জ আমাদের জানা থাকে। এরপরও প্রতিদিনের চ্যালেঞ্জ মেকাবিলা করে থাকি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিজনিত যেকোনও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মতো সক্ষমতা, দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ রয়েছে। এটা দিয়ে আমরা আগামী দিনের যেকোনও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবো বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এবং দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই।’

আগামী ১৩, ১৪ ও ১৫ জানুয়ারি ইজতেমার প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হবে এবং ২০, ২১ ও ২২ জানুয়ারি দ্বিতীয় পর্ব হবে। মাওলানা যোবায়ের প্রথম পর্বে এবং মাওলানা সাদ কান্ধালভীর অনুসারীরা দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেবেন।

চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা উভয়পক্ষের সঙ্গে বসে কথা বলেছি। তাদের মধ্যে যে মতবিরোধ আছে সেটা নিরসনের জন্য আমরা আহ্বান জানিয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি, তারা সবাই মিলে আমাদের কথা দিয়েছে, এই অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে পালনে যথাযথভাবে এক পক্ষ অপর পক্ষকে সহযোগিতা করবে।

তিনি আরও বলেন, ‘বিদেশি নাগরিক যারা আসে তাদের জন্য বিমানবন্দরে ইজতেমা কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি থাকে, তারা তাদের সহযোগিতা করে নিয়ে আসে। তারা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে আসতে পারেন, আমাদের ইমিগ্রেশন থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে, তারা যাতে আমাদের দেশে সুন্দরভাবে আসতে পারেন এবং ইমিগ্রেশনে যেন কোনও ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে না পারে। পাশাপাশি ট্রাফিক ব্যবস্থা যেন সুগম হয়, সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া সাধারণ মানুষ যারা রয়েছে তাদের ম্যাপ করে দেওয়া হয়েছে। তারা কীভাবে ইজতেমা মাঠে আসবেন বিভিন্ন পয়েন্টে তাদের জন্য নির্দেশনা টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ডিএমপি পয়েন্টেও গাড়ি রাখার জন্য বিস্তারিত রাস্তায় প্যানা ফ্লেক্সের মাধ্যমে টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পকেটমার ও ছিনতাইকারীদের উৎপাত যেন না হয়; এ ধরনের ছোট ছোট প্রেট্রোল পার্টি থাকবে, টুরিস্ট পুলিশ থাকবে যাতে পর্যটক বা বিদেশি অতিথি যারা আসেন তাদের যেন কোনও ধরনের সমস্যা না হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশেষ শাখার অতিরিক্ত মহা পুলিশ পরিদর্শক (এডিশনাল অইজিপি) মনিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক (এডিশনাল অইজিপি) টুরিস্ট পুলিশের প্রধান হাবিবুর রহমান, পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক (এডিশনাল অইজিপি) আতিকুল ইসলাম, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম প্রমুখ।

প্রতিনিধি/এইচই

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর