সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতাল ভাঙচুর, পুলিশ-সেনাবাহিনী মোতায়েন

জেলা প্রতিনিধি, লক্ষ্মীপুর
প্রকাশিত: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ১০:২১ এএম

শেয়ার করুন:

প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতাল ভাঙচুর, পুলিশ-সেনাবাহিনী মোতায়েন

লক্ষ্মীপুরে কর্তব্যরত ভিজিটরের অবহেলায় একটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাহিদা বেগম (৩২) নামে এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হয়। নিহতের স্বজন ও গ্রামবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভাঙচুর চালায়। অবরুদ্ধ করে রাখা হয় ভিজিটর আকলিমাকে।

খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) রাত ৮টার দিকে চন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে অবরুদ্ধ ভিজিটরকে (ধার্ত্রী) উদ্ধার করে।


বিজ্ঞাপন


পুলিশ নিহতের স্বামীর আবেদনের প্রেক্ষিতে নিহতের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন।

ঘটনাটি ঘটেছে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে।

thumbnail_1000138733

জানা যায়, বুধবার বিকেলে পশ্চিম চৌপল্লী গ্রামের কাঠ ব্যবসায়ী মহসিন তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী শাহিদা বেগমের বেগমের প্রসব বেদনা দেখা দিলে তাকে নিকটস্থ উত্তর জয়পুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের নিরাপদ প্রসব সেন্টারে নিয়ে আসেন। কর্তব্যরত ভিজিটর আকলিমা বেগমের সহায়তায় রাতে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে শাহিদা একটি কন্যা সন্তান জন্ম দেয়। বাচ্চা প্রসবের পর থেকে শাহিদা বেগমের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হয়। প্রিয়তমা স্ত্রীর ব্যথা যন্ত্রণা সহ্য না করতে পেরে স্বামী মহসিন বারবার স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভিজিটরকে অনুরোধ করছেন তার স্ত্রীকে উন্নত চিকিৎসা করার জন্য জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু ভিজিটর আকলিমা রোগী শাহিদাকে তার স্বামীকে অন্য হাসপাতালে নিতে দেননি। নিজেই ডাক্তার সেজে শাহিদা বেগমকে চিকিৎসা দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে ভোর রাতে সাহিদা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। শাহিদার মৃত্যুর বিষয়টি গোপন করে ডিজিটাল আকলিমা সাহিদার স্বামীকে পার্শ্ববর্তী শামসুল হুদা জেনারেল হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেন। শাহিদার স্বামী তার স্ত্রীকে শামসুল হুদা জেনারেল হসপিটালে নিয়ে গেলে তারা উক্ত রোগী গ্রহণ করতে রাজি হয়নি।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন

মার্কেটের ছাদ থেকে পড়ে প্রাণ গেল কলেজছাত্রের

পরবর্তীতে নোয়াখালীর প্রাইভেট হসপিটালে নিয়ে গেলে হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক জানান রাতেই শাহিদার মৃত্যু হয়েছে। পরবর্তীতে নিহতের স্বজনরা শাহিদার লাশ নিয়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মিছিল করে। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা হাসপাতালে ভাঙচুর করে।

খবর পেয়ে স্থানীয় দত্তপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে চন্দ্রগঞ্জ থানা ওসির নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও লক্ষ্মীপুর সেনা ক্যাম্প থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে রাত রাত ৮টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

thumbnail_1000138736

অবরুদ্ধ ইউনিয়ন পরিবার-পরিকল্পনার পরিদর্শক আকলিমা আক্তারসহ অন্য নারী নার্সদের সেনাবাহিনী ক্যাম্পে নিয়ে যায়।

চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়জুল আজিম নোমান সাংবাদিকদের জানান, নিহতের লাশ পরিবার নিয়ে গেছে। অবরুদ্ধ ভিজিটরসহ অন্যদের সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। মামলা অথবা লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমানে পরিবেশ শান্ত রয়েছে।

লক্ষ্মীপুর পরিবার-পরিকল্পনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক নাজমুল হাসান মুঠোফোনে ঢাকা মেইলকে জানান, প্রসূতি মা শাহিদা ডেলিভারি ব্যথা নিয়ে যখন এসেছে, তখন তার প্রচুর জ্বর ছিল। আমাদের স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দায়িত্বরত ভিজিটর (ধার্ত্রী) আকলিমা রোগীর স্বজনদের বলছে আপনারা লক্ষ্মীপুর নিয়ে যান। তারা বলছে আপনারা চেষ্টা করেন। কারণ এ রোগীর আগের দুই সন্তান এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে হয়েছে। সেখানে থেকে ওই অঞ্চলের নারীদের আস্থার সেবা কেন্দ্র। প্রতি মাসে প্রায় ৪০টি ডেলিভারি হয় এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। রোগীর বাচ্চা নরমালে হয়েছে। কিন্তু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ দেখা দিলে সকালে প্রসূতি মাকে স্বজনরা নোয়াখালী নিয়ে যায়। এরপর তারা লাশ নিয়ে এসে হাসপাতালে ভাঙচুর করে। ভিজিটরকে অবরুদ্ধ করে রাখে, পুলিশ, সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে উদ্ধার করে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর