রোববার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

তুরাগ তীরে লাখো মুসল্লি

আবুল হাসান
প্রকাশিত: ১২ জানুয়ারি ২০২৩, ০৬:৫৮ পিএম

শেয়ার করুন:

তুরাগ তীরে লাখো মুসল্লি

কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) ফজরের নামাজের পর আম বয়ানের মাধ্যমে শুরু হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা প্রথম পর্বের আনুষ্ঠানিকতা। দুপুরে অনুষ্ঠিত হবে বৃহত্তম জুমার নামাজ। ঘন কুয়াশা, কনকনে শীত আর শৈত্যপ্রবাহ উপেক্ষা করে লাখ লাখ মুসল্লির পদভারে পরিপূর্ণ তুরাগ তীর। ময়দানের নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান নিয়েছেন তারা। বৃহস্পতিবার তাদের জন্য হেদায়াতি বয়ান করা হয়। নসিহতপূর্ণ বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আব্দুর রহমান। বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা আব্দুল মতিন। 

সরেজমিনে ইজতেমা ময়দান ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কারে চড়ে শতাধিক দেশের বিদেশি মুসল্লিরা এসেছেন। ময়দানের উত্তর-পশ্চিম পাশে বিদেশি মেহমানদের জন্য নির্ধারিত নিবাসে অবস্থান নিয়েছেন তারা। 


বিজ্ঞাপন


এছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত মুসল্লিদের সমাগমে মুখর তুরাগ তীর। বাস, ট্রাক, ট্রেনের চড়ে, অনেকে পায়ে হেঁটে গাজীপুরের টঙ্গীতে আসছেন ইজতেমায় যোগ দিতে। রোববার আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত এ আগমন ধারা অব্যাহত থাকবে বলে জানান আয়োজকরা। 

ijtema

৬৪ জেলার মুসল্লিদের অবস্থানের জন্য পুরো ময়দানকে ৯১টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। জেলাওয়ারি খিত্তায় অবস্থান নিয়ে ধর্মীয় নানা আলোচনায় অংশ নিয়েছেন মুসল্লিরা। রোববার আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত চলবে তাবলীগের ছয় উসুলের এ বয়ান। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের আলেমরা মূল বয়ান করবেন। মূল বয়ান বাংলাসহ বিভিন্ন ভাষাভাষিদের জন্য তাৎক্ষণিক তরজমা করে শোনানো হবে।

আয়োজক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী মো. মাহফুজ জানান, মহামারীর কারণে গত দুবছর বিশ্ব ইজতেমা না হওয়ায় এবার আগেভাগেই মানুষ আসছে। শুক্রবার মূল পর্ব শুরুর কথা থাকলেও তাবলীগ জামাতের অনুসারী এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বুধবার থেকেই দলে দলে ইজতেমা ময়দানে এসে অবস্থান নিচ্ছেন। লাখো মানুষের উপস্থিতিতে ইজতেমা ময়দান প্রায় পূর্ণ হয়ে গেছে।


বিজ্ঞাপন


বৃহত্তম জুমার নামাজ
শুক্রবার দুপুরে অনুষ্ঠিত হবে বৃহত্তম জুমার নামাজ। নামাজে অংশ নিতে জেলার আশেপাশের এলাকায় মানুষ অংশ নেবেন। কাকরাইল মসজিদের মাওলানা জোবায়েরের ইমামতিতে কয়েক লাখ মানুষ এই জামাতে নামাজ পড়বেন । রাজধানী ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন উপজেলা এবং আশপাশের জেলা থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ সেই জামাতে যোগ দিতে আসবেন। ইজতেমা ময়দান ছাপিয়ে কামারপাড়া, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ আশেপাশের অলি-গলিতেও কাতারবদ্ধ হয় জুমার নামাজে অংশ নিতে দেখা যাবে অনেককে।

ijtema

ইজতেমা মাঠের মুরুব্বিরা জানান, তাবলীগ জামাতের উদ্যোগে প্রতিবছর বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। মাঠের সব কাজ করা হচ্ছে পরামর্শের মাধ্যমে। এখানে বিদ্যুৎ, পানি, প্যান্ডেল তৈরি, গ্যাস সরবরাহ প্রতিটি কাজই আলাদা আলাদা গ্রুপের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। বিশ্বের প্রায় সব মুসলিম দেশ থেকেই তাবলীগ জামাতের অনুসারী মুসলমানরা অংশ নেন। তারা এখানে তাবলীগ জামাতের শীর্ষ আলেমদের বয়ান শোনেন এবং ইসলামের দাওয়াতী কাজ বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দেওয়ার জন্য জামাতবদ্ধ হয়ে বেরিয়ে যান।

নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও ময়দানের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ১০ হাজার সদস্য ইজতেমা ময়দান ছাড়াও আশপাশের এলাকার নিরাপত্তা বিধান করবেন। অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে এবার সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যুক্ত করেছে।

ইজতেমায় পার্কিং
বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লিদের নিরাপদ যাতায়াত এবং সুষ্ঠুভাবে যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে পুলিশ বিভাগ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ- কমিশনার মো. আলমগীর হোসেন জানান, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু রাখতে এবার নজরদারী তিনগুণ বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। সঙ্গে থাকছে আইপি ক্যামেরাও। ট্রাফিক পুলিশ তিন শিফটে দিনে ও রাতে ২৪ ঘণ্টা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করবেন। শুক্রবার থেকে ভোগড়া বাইপাস থেকে আব্দুল্লাহপুর, কামাড়পাড়া ও মীরের বাজার এলাকায় গাড়ি ডাইভারশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুধুমাত্র গণপরিবহন, যাত্রীবাহী বাস ইজতেমা এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে। পণ্যবাহী গাড়ি, ট্রাক ইজতেমা এলাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।

মুসল্লিদের সুবিধার্থে জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, স্বাস্থ্য বিভাগসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও অধিদফতর নিয়েছে নানা উদ্যোগ ।

পুরো ময়দান এলাকায় থাকছে গাজীপুর জেলা প্রশাসন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন, পুলিশ ও র‌্যাবের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। বুধবার সকালে ইজতেমা ময়দানে দুটি গভীর নলকূপের উদ্বোধন করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল।

ijtema

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসন বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক কর্মকাণ্ড সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বিভাগের কাজের সমন্বয় করে থাকে। বিদেশি মেহমানদের আবাসস্থল নির্মাণের নিমিত্তে টিন সরবরাহ, বিভিন্ন দফতরের কন্ট্রোল রুমের স্থান নির্ধারণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকার পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা বিভাগীয় প্রশাসনের দিক নির্দেশনায় বিভিন্ন কার্যাদি তদারকি করে থাকে। এবারের ইজতেমায় জেলা প্রশাসনের ৩০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট টঙ্গী জুড়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করবে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর মিয়া জানান, এখানে ৩১টি টয়লেট বিল্ডিং করা হয়েছে। এক সঙ্গে নয় হাজার মানুষ তা ব্যবহার করতে পারবেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর
প্রস্তুত ইজতেমা ময়দান, আসছেন দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লি

বিআরটিসি ও রেলওয়ে ইজতেমায় আসা-যাওয়ার জন্য বিশেষ সার্ভিসের পদক্ষেপ নিয়েছে। ময়দানের পশ্চিম পাশে তুরাগ নদীর উপর সেনাবাহিনী পাঁচটি ভাসমান সেতু নির্মাণ করেছে।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম জানান, ময়দান ও আশপাশে ১৪টি নিয়ন্ত্রণকক্ষ রয়েছে পুলিশের। র্যাবের হেলিকপ্টারে টহল থাকবে। এ ছাড়া ডগ স্কোয়াড টিম, মোবাইল পেট্রোল টিম, বোম ডিসপোজল টিম থাকবে।

শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন ইজতেমায় আসা মানুষকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দিতে পাঁচটি ক্যাম্প স্থাপনের কাজ চলছে। এখান থেকে ২৪ ঘণ্টাই ওষুধ ও সেবা পাওয়া যাবে। হাসপাতালের সাতটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল এখানে মোতায়েন থাকবে।

ইজতেমা ময়দানে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প উদ্বোধন
টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ (ওয়াকৃফ) বাংলাদেশের উদ্যোগে টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প উদ্বোধন করা হয়েছে। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এ ক্যাম্পের উদ্বোধন করেন। 

দুপুরে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পের অনুষ্ঠানে হামদর্দ বাংলাদেশের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাকিম মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন রাসেলের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, হামদর্দ বাংলাদেশের পরিচালক লে. কর্নেল (অব.) মাহবুবুল আলম চৌধুরী। 

ijteman

প্রতিমন্ত্রী ফিতা কেটে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের উদ্বোধন করেন। পরে তিনি আগত মুসল্লিদের মধ্যে ওষুধপত্র বিতরণ করেন।

ইজতেমায় এবার বাড়তি মুসল্লিদের সমাগমের কথা মাথায় রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে জানিয়ে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেন, এবারের ইজতেমায় বিদেশী মেহমানদের নিরাপত্তা ও তাদের সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। ইনশাল্লাহ সফলভাবে ইজতেমা সম্পন্ন হবে।

দুই মুসল্লির মৃত্যু 
ইজতেমায় আগত দুই মুসল্লি বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছেন। গাজীপুরের বাসিন্দা একজনের নাম আবু তালেব (৯০) জানা গেলেও অপর মুসল্লির বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি। দুপুরে ইজতেমা ময়দানে তাদের নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রোববার (১৫ জানুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে মাওলানা জোবায়ের অনুসারী মুসল্লিদের ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা। চারদিন বিরতির পর শুরু হবে দ্বিতীয় পর্ব। এই পর্বে অংশ নেবেন মাওলানা সাদের অনুসারী মুসল্লিরা।

প্রতিনিধি/এইচই

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর