‘আমি দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে ইজতেমার ময়দানে আসা মুসল্লিদের পানি সরবরাহ করে থাকি। পানি দিয়ে মুসল্লিরা ওজু করেন। কেউ কেউ গোসলও করেন। এর বিনিময়ে কিছু টাকা নিলেও আমরা এটাকে সেবা মনে করেই করি। এর মাধ্যমে আমরা তৃপ্তি পাই।’ ঢাকা মেইলকে কথাগুলো বলছিলেন সালমা বেগম নামের এক নারী। ষাটোর্ধ্ব ওই নারী রাজধানীর আব্দুল্লাহপুরে তুরাগ নদের তীরে বসবাস করেন।
শনিবার (১৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় পশ্চিম আব্দুল্লাহপুর এলাকায় ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের পানি সরবরাহ করছিলেন সালমা। এ সময় ঢাকা মেইলের এই প্রতিবেদকের সঙ্গে তার কথা হয়।
বিজ্ঞাপন
সালমা বলেন, আমার গ্রামের বাড়ি নরসিংদী। কিন্তু দীর্ঘ ৩৫ বছর থেকে আমি টঙ্গীর তুরাগ তীরে বসবাস করি। এই সুবাধে প্রতি বছর ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের খেদমত করতে পারি। প্রতিবারের মতো এবারও মুসল্লিদের জন্য পানি সরবরাহ করেছি।
এই বৃদ্ধা বলেন, প্রতি বছর সারাদেশে থেকে লাখ লাখ মানুষ ইজতেমায় আসেন। তাদের পানির সমস্যা দেখা দেয়। তাই বাসা থেকে পানি নিয়ে রাস্তায় চলে আসি। রাস্তায় বাঁশ দিয়ে তৈরি করি অস্থায়ী ওজুখানা, বাথরুম ও গোসলখানা। তাই মুসল্লিরা এখানে এসে কেউ কেউ ওজু করেন। আবার কেউ কেউ গোসলও করেন। তবে এর বিনিময়ে প্রতিজনের কাছ থেকে ১০টাকা করে নেন বলে জানান সালমা।
এই নারী বলেন, এবার আমার পাঁচ মেয়ে ও একমাত্র ছেলেও আমার সাথে রয়েছে। আমরা সাতজন মিলে মুসল্লিদের পানি সরবরাহের কাজ করছি।
পানি কোথা থেকে আনা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা যে বাসায় থাকি সেই বাসার মালিক অনেক ভালো লোক। তাই বাসা থেকে পানি নিয়ে আসি।
বিজ্ঞাপন
শুধু সালমাই নন, ইজতেমা এলাকায় রাস্তার উপর আরও অনেককেই মুসল্লিদের জন্য পানি সরবরাহ করতে দেখা গেছে। এটাকে তারা সেবা হিসেবে করেন। কিছু টাকা লাগলেও এটাকে মুসল্লিরা বড় উপকার হিসেবে দেখেন।
আব্দুর রহিম নামের এক ব্যক্তি ঢাকা মেইলকে বলেন, ইজতেমায় পানি সমস্যা থাকে। তাই স্থানীয় বাসিন্দারা সেখানে পানি সরবরাহ করে থাকেন। এর বিনিময়ে কেউ কেউ ১০ থেকে ২০ টাকা করে মুসল্লিদের কাছে থেকে নেন।
আবিদুর রহমান নামে একজন এসেছেন ওজু করতে। উত্তরবঙ্গের এই বৃদ্ধ লোক জানান, ইজতেমা ময়দানে পানির অনেক সংকট। তারা কিছু টাকা নিলেও আমরা এতে খুশি।
১৯৬৭ সাল থেকে প্রতি বছর রাজধানী ঢাকার উপকণ্ঠে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে মুসলমানদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় সমাবেশ ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। আগামীকাল সোমবার (১৫ জানুয়ারি) প্রথম প্রহরে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমা শেষ হবে। চার দিন বিরতির পর আগামী ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা শুরু হবে। আগামী ২২ জানুয়ারি প্রথম প্রহরে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমার সমাপ্তি হবে।
এবার ইজতেমার মাঠকে ৯১টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। বিভিন্ন জেলার মুসল্লিরা তাদের নিজ নিজ জেলার খিত্তায় অবস্থান নিচ্ছেন। ১৬০ একর খোলা ময়দানে বাঁশের খুঁটির ওপর পাটের চট দিয়ে টানানো হয়েছে বিশাল প্যান্ডেল। তবে বিদেশি মেহমানদের জন্য টিন দিয়ে করা হয়েছে আবাসস্থল।
কেআর/জেবি