টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হয়েছে শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি)। কুয়াশা, কনকনে শীত উপেক্ষা করেই লাখ লাখ মুসল্লি পাড়ি জমিয়েছেন সেখানে। আজ রোববার (১৫ জানুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রখম পর্বের ইজতেমা। আর এবারের আখেরি মোনাজাতে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ অংশ নিতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ কথা চিন্তা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও প্রস্তুতি নিয়েছেন।
ইজতেমাস্থল ৯১টি খিত্তায় বিভক্ত। খিত্তাভিক্তিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গাজীপুর মহানগর পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর পুলিশ, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, সিআইডি, নৌপুলিশ, অ্যান্টিটেরিজম ইউনিট, রেলওয়ে পুলিশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব পালন করছে। ইজতেমা ময়দান ও তার আশেপাশের এলাকায় ১০ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করবে বলে জানা গেছে।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, ইজতেমাকে কেন্দ্র করে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও গাজীপুর মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। গাজীপুরের টঙ্গীতে তুরাগ নদীর তীরে ইজতেমা ময়দানের অলিম্পিয়া স্কুল মাঠের পাশে কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম করা হয়েছে। সেখান থেকে সিসিটিভির মাধ্যমে মনিটরিং করা হচ্ছে। অপরদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে আব্দুল্লাহপুরে পুলিশ কন্ট্রোল রুম রয়েছে। সেখান থেকেও সিসিটিভির মাধ্যমে মনিটরিং করছে পুলিশ।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, তাবলিগ জামাতের অনুসারীদের মতবিরোধের কারণে এবারও বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে আলাদাভাবে দুই পর্বে। প্রথম পর্ব সমাপ্তির পর ৫ দিন বিরতি দিয়ে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা আগামী ২০ জানুয়ারি শুরু হবে। আজ রোববার দুপুরে আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়ে প্রথম পর্বে আগত মুসল্লিরা রাতের মধ্যে ময়দান ত্যাগ করবেন। আগামী ২০ জানুয়ারি শুক্রবার বাদ ফজর থেকে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় অংশ নেবেন।
পুলিশ সদস্যরা জানান, তাবলিগের দুই পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সভায় দুই পক্ষ সুন্দরভাবে পালন করবে বলে আশ্বাস দেয়। এরপর ইজতেমার অনুমতি দেওয়া হয়। তারপরও মুসল্লিদের নিরাপত্তায় পুরো ইজতেমা ময়দান ও আশপাশ এলাকায় লাগানো হয়েছে প্রায় ৩০০ ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। কন্ট্রোল রুম থেকে পুরো এলাকা মনিটরিং করছে পুলিশ।
পুলিশ সদস্যরা আরও জানান, সাধারণ মানুষের ইজতেমা মাঠে প্রবেশের সুবিধার্থে ম্যাপ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। পকেটমারসহ নানা অপরাধমূলক কার্যকলাপ রুখতে পেট্রোল টিম কাজ করছে। ওয়াচ টাওয়ার ও সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি মাঠে রয়েছেন সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরা।
বিজ্ঞাপন
এদিকে, বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাতকে ঘিরে কামারপাড়া, টঙ্গী থেকে গাজীপুর ভোগড়া বাইপাস, আশুলিয়া অর্থাৎ অব্দুল্লাহপুর ব্রিজ থেকে বাইপালের রোড বন্ধ রাখা হয়েছে। সেক্ষেত্রে ভোগড়া থেকে ৩০০ ফিট পর্যন্ত বাইপাস হয়ে চলে যাবে ঢাকাগামী লোকজন। যেসব মুসল্লি বা লোকজন ময়মনসিংহ বা গাজীপুর যাচ্ছেন, তারা বাইপাল থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা হয়ে ময়মনসিংহের দিকে চলে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি এসেছেন। তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে শনিবার দিনগত রাত ১২টার পর থেকে কয়েকটি সড়ক বন্ধ রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রায় ২ হাজারের মতো বিদেশি অতিথি ময়দানে এসেছেন। তিন শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে ইজতেমা মাঠ ঢেকে দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলার বিভিন্ন সংস্থা মিলে ১০ হাজার সদস্য একযোগে কাজ করছি।
কেআর/আরআর