বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

গাড়ি নেই তো কী হইছে, দুই পা'ই ভরসা হাকিম মিয়ার

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৫ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:২১ পিএম

শেয়ার করুন:

গাড়ি নেই তো কী হইছে, দুই পা'ই ভরসা হাকিম মিয়ার

রোববারের ঢাকার সকালটা একটু ভিন্নই ছিল ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য। তাবলিগ জামাতের সবচেয়ে বড় জমায়েত বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের শেষ দিনের কারণে দিনটিতে অন্যরকম এক আবহ কাজ করছিল রাজধানীতে।

শেষে দিন আখেরি মোনাজাত হবে জেনে সকাল থেকেই তুরাগ মুখে ঢল নামে লাখো মুসল্লির। যানবাহনের সংকটের কারণে ভোগান্তি হবে জেনেও অনেকে সকাল থেকে ছুটতে থাকেন টঙ্গীর উদ্দেশে। দল বেঁধে আবালবৃদ্ধবনিতা ইজতেমা মাঠ প্রাঙ্গণের দিকে রওনা হন।


বিজ্ঞাপন


মুসল্লিরা নানা উপায়ে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন। কেউ কেউ হেঁটে রওনা হন, আবার কেউ কেউ পিকআপ কিংবা অটোরিকশা ভাড়া করে ইজতেমা মাঠের উদ্দেশ্যে রওনা হন। তবে বেলা গড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। ভোগান্তি জেনেও ইজতেমার উদ্দেশে রওনা হয় ষাটোর্ধ্ব বয়সী হাকিম মিয়া।

সকাল ৯টায় বনানী এলাকায় কথা হয় তার সঙ্গে। হাকিম মিয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বাবারে, আমি প্রতিবারই যাই ইজতেমায়। একটা বড় অসুখ আইছিল (করোনা) দেশে। তাই মাঝখানে বন্ধ ছিল ইজতেমা। আমি সেই পুরান পল্টন থেকে মগবাজার পর্যন্ত গাড়ি পাইছি এরপর থেকে আরেকটা গাড়িতে মহাখালী পর্যন্ত এসে হেঁটে আসছি যতদূর যেতে পারি, যাবো। গাড়ি থাকলে একটু সুবিধা হতো।’

হাকিম মিয়া আরও বলেন, ‘গাড়ি নেই তো কী হইছে, দুইটা পা আল্লাহ দিছে তো। দুই পা’ই ভরসা আমার। গায়ে এখনো বেশ শক্তি আছে। আমি নিয়মিত ভালোই হাঁটাচলা করি। সামনে কোথাও গাড়ি পেলে উঠবো নয়তো আস্তে আস্তে যেতে থাকব।’

কেউ সঙ্গী আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার প্রতিবেশিরা গেছে সামনে ওরাও হেঁটে যাচ্ছে। আসার সময় একটু দেরি করে আসলেই গাড়ি পাবে। কিন্তু মোনাজাত যদি মিস করি আগামী বছর আমি আর নাও বেঁচে থাকতে পারি। তাই সময় আছে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। ওই সব কষ্ট আমরা বুঝি না, বয়স হইছে হাঁটলে একটু কষ্ট হয় হয় এটা ঠিক তবে মরতে হবে এটাও তো বাবা বলেন তিনি।’


বিজ্ঞাপন


hira-1

ইজতেমার অভিজ্ঞতা নিয়ে ষাটোর্ধ্ব এই নাগরিক বলেন, আমি একসময় গাজীপুর থাকতাম তখন তিনদিন এই ইজতেমায় থাকতাম। ঢাকায় আসার পরও অনেক ইজতেমায় তিনদিন থেকেছি। এখন বাসার সবাই বলে রাতে থাকার দরকার নেই, আমার বয়সী যারা বন্ধু প্রতিবেশি আছে তারাও এখন রাতে থাকে না তাই। সকালে মোনাজাতে অংশ নিতে যাই।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীতে গাড়িও কম এদিন। অনেক স্থানেই  ডাইভারশনের কারণে মুসল্লিরা হেটেই যাচ্ছে। বনানী, কাকলী, মহাখালি এলাকায় ফুটপাত ধরে অনেক মুসল্লি হেটে ইজতেমামুখী যেতে দেখা যায়। যদিও এসব এলাকায় গাড়ি থাকলেও সেটি ছিল খুবই কম। সকাল ১০টায় শুরু হয় প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত। মোনাজাত পরিচালনা করছেন তাবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বি বাংলাদেশের হাফেজ মাওলানা জুবায়ের।

আখেরি মোনাজাতে লাখ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছেন। পাপ থেকে মুক্তি চেয়ে মহান আল্লাহর দরবারে তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন। ইজতেমার ময়দানে জায়গা না পেয়ে অনেকে সড়কে পাটি ও পেপার বিছিয়ে মোনাজাতে অংশ নেন।

মোনাজাত শেষে ফেরার যাত্রাও ছিল হেটে। একযোগে সবাই বিভিন্ন সড়কে ফেরা শুরু করেন। তরুণা একটু দ্রুত হাটতে পারলেও মধ্য বয়সী বা বয়স্ক ব্যক্তিদের ধীরে ধীরে হেঁটে আসতে দেখা যায়। অনেকেই নিজস্ব পরিবহন, সিএনজি, মোটরবাইক নিয়ে গেলেও ফেরার পথে মানুষের ঢলের কারণে তাদেরও ধীরে ধীরে ফিরতে দেখা যায়।

ডব্লিউএইচ/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর