শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

বিএম ডিপোর দুঃসহ স্মৃতি তাজা করল অক্সিজেন প্ল্যান্টের বিস্ফোরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪ মার্চ ২০২৩, ১১:০১ পিএম

শেয়ার করুন:

বিএম ডিপোর দুঃসহ স্মৃতি তাজা করল অক্সিজেন প্ল্যান্টের বিস্ফোরণ

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় একটি অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণে ছয়জন নিহত এবং আরও অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। উপজেলার কদমরসুল এলাকায় সীমা অক্সিজেন নামক অক্সিজেন প্ল্যান্টে শনিবার (৪ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এই বিস্ফোরণের ঘটনা প্রায় নয় মাস আগে একই এলাকায় ঘটে যাওয়া বিএম ডিপোর ভয়াবহ বিস্ফোরণের দুঃসহ স্মৃতি নতুন করে সামনে এনে দিল। ওই বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছিলেন অর্ধশত মানুষ। দগ্ধ হওয়া শতাধিক মানুষ এখনও সেই ক্ষত নিয়ে বেঁচে আছেন।

স্থানীয়রা জানান, বিকেলে সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকায় সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের ভেতরে হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এর পরপরই সেখানে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। অল্পক্ষণের মধ্যেই সীতাকুণ্ড ও কুমিরা ফায়ার স্টেশনের নয়টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বিস্ফোরণে ও আগুনে আহতদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।


বিজ্ঞাপন


ফায়ার সার্ভিসের সীতাকুণ্ড ইউনিট সূত্র জানায়, বিস্ফোরণে ও আগুনে নিহত পাঁচজনের মধ্যে দুইজনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন শামসুল আলম ও ফরিদ আহমদ। বাকিদের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।

dm

বিস্ফোরণের সময় শামসুল আলম প্ল্যান্ট থেকে অল্প কিছু দূরে তার কাঠের দোকানে ছিলেন। বিস্ফোরণে প্ল্যান্টের একটি বড় লোহার টুকরা এসে তার গায়ে পড়লে তার মৃত্যু হয়। ফরিদ আহমদও মারা যান উড়ন্ত লোহার প্লেটের আঘাতে। তিনি একটি গাড়িতে বসে ছিলেন।

এদিকে, আগুন নিয়ন্ত্রণের পরপরই পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা নিহত ও আহতদের উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করেন। পরে সেনাবাহিনী উদ্ধার কাজে যোগ দেয়।


বিজ্ঞাপন


বিস্ফোরণের কারণ সম্পর্কে সুস্পষ্ট করে এখনও কিছু জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। তবে স্থানীয়রা মালিক পক্ষের গাফিলতিকে দায়ী করেছেন। বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন।

ctg

বিস্ফোরণে আহতদের চিকিৎসার খরচ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। আহতদের বেশিরভাগকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাদের চিকিৎসার খবর নিতে সন্ধ্যায় সেখানে যান জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর মো. তৌহিদুল ইসলাম। তিনি সাবাদিকদের বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। আহতদের চিকিৎসার সব খরচ ও ওষুধ দেওয়া হবে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক নুরুল আলম আশেক জানিয়েছেন, আহত ৩০ জনকে উদ্ধার করে চমেকে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৭ জনকে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।

dm

প্রাথমিকভাবে আহত ১১ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন, মো. নূর হোসেন (৩০), মো. আরাফাত (২২). মোতালেব (৫২), ফেনসি (৩০), মো. জসিম উদ্দিন (৪৫), নারায়ণ (৬০), মো. ফোরকান (৩৫), শাহরিয়ার (২৬), মো. জাহিদ হাসান (২৬), মো. আলমগীর হোসেন (৩৪) ও মো. সেলিম (৩৬)।  

এদিকে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসানকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাও থাকবেন।

কেমিক্যালের কারণে এক যুগে তিন শতাধিক প্রাণহানি

গত বছরের ৪ জুন রাত সাড়ে নয়টার দিকে চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরের সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকায় বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। পরে কনটেইনারে থাকা রাসায়নিক পদার্থের কারণে দফায় দফায় বিস্ফোরণে বাড়ে আগুনের ভয়াবহতা। ফায়ার সার্ভিস ছাড়াও বিভিন্ন বাহিনীর সহায়তায় ৮৬ ঘণ্টা পর আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে। ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় ৫০ মারা যান। দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন শতাধিক মানুষ।

sita

খবরে প্রকাশ, স্মার্ট গ্রুপের বিএম কনটেইনার নামক কোম্পানির দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে ঘোষণা ছাড়াই মজুদ করার কারণে আগুনে হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ফায়ার সার্ভিসের কাছে মজুদ করা রাসায়নিক পদার্থগুলোর প্রয়োজনীয় তথ্য না থাকায় অনেক উদ্ধারকর্মী নিহত এবং আহত হন।

সীতাকুণ্ডের দুটি ঘটনাসহ গত এক যুগে তিন শতাধিক মানুষের প্রাণ গেছে কেমিক্যালের কারণে। ঢাকার চুড়িহাট্টা ও নিমতলীর ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে নানা সুপারিশ করা হয়েছিল। তবে দীর্ঘ সময়েও এই সুপারিশগুলোর কোনোটাই বাস্তবায়ন হয়নি। এ কারণেই অগ্নিদুর্ঘটনা বাড়ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

chittagong-containar-blast

২০১০ সালের ৩ জুন বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার থেকে প্রথমে আগুনের সূত্রপাত হয় পুরান ঢাকার নিমতলীতে। পরে পাশে থাকা একটি প্লাস্টিক কারখানায় আগুন ছড়িয়ে পড়লে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ওই মুহূর্তেই পুরো এলাকায় আগুন ছেয়ে যায়। কিছু বোঝার উঠার আগেই প্রাণ চলে যায় ১২৪ জনের।

ভয়াবহ ওই ট্র্যাজেডির পর দাবি উঠেছিল পুরান ঢাকা থেকে কেমিক্যালের কারখানা ও ব্যবসা তুলে দেওয়ার জন্য। কিন্তু এর বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে কয়েক বছর পর (২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি) একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টা এলাকায়। সেখানে প্রথমে গ্যাস সিলিন্ডার থেকে বিস্ফোরণ হলে পাশে থাকা ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভবনেই মজুদ করা হয়েছিল বিভিন্ন কেমিক্যাল জাতীয় পদার্থ। সেই সঙ্গে ভবনের আশপাশ ছড়িয়ে ছিল কেমিক্যালের দোকান ও গোডাউনে। এই আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয় ৭০ জন মানুষ।

chittagong-containar-blast

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুর্ঘটনার পর সবার টনক নড়ে। তার আগে সবাই অচেতন অবস্থায় থাকে। দুর্ঘটনা ঘটলেই সামনে আসে নানা প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতার কথা। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বিভিন্ন সময় নানা সুপারিশ করা হলেও তা বাস্তবায়ন ও মেনে চলার মনোভাব খুব কম। এ কারণে বারবার ঘটছে এমন ঘটনা।

জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর