কেমিক্যাল ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত কাউকে পাওয়া গেলে সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনারে লাগা আগুন নেভানো সহজ হত বলে দাবি করছে ফায়ার সার্ভিস। আগুন লাগার ২০ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও দেখা যায়নি মালিকপক্ষের কাউকে। এর মধ্যে অজ্ঞাত এক স্থান থেকে ডিপোর পরিচালক মজিবুর রহমান উল্টো আগুনের তীব্রতা বাড়ার জন্য ফায়ার সার্ভিসকে দোষ দিচ্ছেন।
গণমাধ্যমকে মজিবুর রহমান বলেন, 'হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ক্যামিকেল কখনো নিজে থেকে জ্বলে না। অতিরিক্ত হিটে আগুন ধরে ও বিস্ফোরিত হয়। ফায়ার সার্ভিস যদি সঠিক নিয়মে কাজ করত তাহলে এখানে কিছুই হতো না।'
বিজ্ঞাপন
শনিবার রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এখন পর্যন্ত অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন ৪২ জন। আহত হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন কয়েক শ মানুষ।
আগুন নেভাতে বর্তমানে কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের ২৯টি ইউনিট। অন্যদিকে সেনাবাহিনীর একটি প্রশিক্ষিত দলও তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। স্থানীয় সাধারণ মানুষ, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরাও তাদের সঙ্গে কাজ করেছেন। শনিবার রাত থেকে নিরলস কাজ করলেও রোববার বিকাল পর্যন্ত পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি আগুন।
জানা গেছে, ২০১১ সালের মে মাসে বিএম কনটেইনার ডিপো লিমিটেড একটি অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে। ১১ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি রফতানি ও আমদানি কনটেইনারাইজড কার্গো থেকে পণ্য খালাস ও বোঝাইয়ের (স্টাফিং/আনস্টাফিং) কাজ করছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে রফতানি ও আমদানিকৃত পণ্যের কনটেইনার ও খালি কনটেইনার রাখা হয় ডিপোটিতে।
বিএম কনটেইনার ডিপো প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে ডাচ নাগরিক বার্ট প্রঙ্ক কোম্পানিটির চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশি ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।
বিজ্ঞাপন
তাদের যৌথ মালিকানাধীন আবাসন প্রতিষ্ঠান সিটি হোম প্রোপার্টির চেয়ারম্যানও বার্ট প্রঙ্ক। আর তাতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান। মোস্তাফিজুর রহমানের বড় ও ছোট ভাই শফিকুর রহমান ও মুজিবুর রহমান এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের পদে রয়েছেন।
শনিবার সকালে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালকের (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন আগুনের তীব্রতাসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, 'দুঃখজনক বিষয় আমরা এখন পর্যন্ত মালিকপক্ষের কাউকে পাইনি। যারা এই কেমিক্যালের বিষয়গুলো দেখভাল করতেন তারা যদি থাকত তাহলে আমাদের জন্য আগুন নেভানো সহজ হত। কারণ কেমিক্যালের একেকটার একেক ধরণের ন্যাচার। এখন কোনটা কোন জায়গায় আছে সেটা তো তারা ছাড়া কেউ ভালো বলতে পারবে না। '
যদিও বিএম কনটেইনারের পরিচালকের ধারণা রাসায়নিক পদার্থ ও গার্মেন্টস পণ্য থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।
আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত হওয়ায় ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথাও বলেছেন মুজিবুর। তার ভাষ্য, আগুনে ক্ষতি ছাড়িয়ে গেছে হাজার কোটি টাকা।
ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের সময় শতাধিক শ্রমিক কাজ করেছিল বলে দাবি এই পরিচালকের। অথচ ফায়ার সার্ভিসের সদস্যসহ নিহত, আহতের সংখ্যায় ডিপোতে আরও বেশি কর্মী ছিল সেটি অনুমান করা যায়।
বিইউ/এমআর