‘পোলাডা গাড়িখান নিয়া বের হতি পারলে পুঁড়তো না। কিন্তু গেটের লোক তাকে বের হতি দেয় নাই। গেটখান খুলি দিলি দগ্ধ হইতো না।’
কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণে দগ্ধ কাভার্ডভ্যান চালক মুহিবুল্লাহর মা মমেনা বেগম। ছেলের দগ্ধ হওয়ার খবরে যশোরের বাগারপাড়া থেকে ছুটে এসেছেন ঢাকায়। সোমবার দুপুরে তার সাথে কথা হচ্ছিল শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারী ইনস্টিটিউটের পঞ্চম তলায়।
বিজ্ঞাপন
মুহিবুল্লাহ ঢাকা থেকে কার্ভাডভ্যান নিয়ে সেই ডিপোতে মাল আনলোড করতে গিয়েছিলেন। ঘটনার সময় আগুন লাগলে তিনি বিষয়টি তার গাড়ির মালিককে জানিয়েছিলেন। পরের ঘটনা তুলে ধরে তার মা বলছিলেন, ‘আমার মণি যখন ফোন দেছে (গাড়ির মালিককে), তখন মালিক বোলে ছোটমনি তুই গাড়ি নিয়া চইলা বের হইয়া আয়। তখন মনি কইছে, কাকা গাড়ি নিয়া তো বের হতি দিতে চায় না এরা। কী করব? গাড়ি তো ভিতরে ঢুকাই ফেলছি আমি এটুকুই শুনেছি।
তার পরিবার জানিয়েছে, মুহিবুল্লাহর বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন। তিনি চার ভাইয়ের মধ্যে তৃতীয়। তার স্ত্রী ও আটমাসের ছেলে সন্তান নিয়ে সুখের সংসার। কিন্তু সেই সংসারে এখন নেমে এসেছে শোক।
মমেনা বেগম বলেন, ‘আট মাসের বাচ্চা ওই বাপেরে ভিডিও কলে দ্যাখে আব্বু আব্বু করে, মোবাইল হাতে দিলে কাছে নিয়া চুমু খায়। তায় আইজ দুইদিন থাইক্যা দেখবার পারতিছে না। তার ছেলের জ্বর হইছে। ছেলে সারারাত কান্নাকাটি কইরতেছে। ঘুমোচ্ছে না। এই দৃশ্য দেইখ্যা বৌমা (মুহিবুল্লার স্ত্রী) কাইন্দা মইরা যাচ্ছে। মনির (মুহিবুল্লাহ) কষ্টে ছেলেটা জ্বরে পইড়া গ্যাছে। আব্বু, আব্বু কইরতেছে। আট মাস বয়স বুঝে না! এ জন্যি তো কাইনতেছে। ’
নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা এই যে প্রাইভেটে (প্রাইভেট কার) আসিলাম। আমাগো কি এমনি নিয়া আইছে। আমার তো স্বামী নাই। আমি কই টাকা পাব বাবা। যখন যে ছেলে ডাক দেয় তার সংসারে খাই। দিন আনে দিন খায়। ইনকাম করলে খায়, না করলে খায় না। তার জাগা জমি কিছু নাই। তার যে খরচ জোগাবে সেই সামর্থও নাই।’
বিজ্ঞাপন
মুহিবুল্লাহর মামা মাহফুজুর রহমান জানালেন, গেল রজমানের ঈদের কয়েক দিন পর বাড়ি থেকে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে আসেন মুহিবুল্লাহ। এর মাঝে আর বাড়ি ফেরেননি। তখন থেকে নানা জায়গায় যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিল।
তিনি জানান, ঘটনার পর সীতাকুণ্ডে কদমতলী এলাকায় থাকা তার বড় ছেলে আয়াতুল্লাহ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পরে দেখতে পান তার ভাই গাড়ির সামনে চালকের সিটে পড়ে আছে। এরপর তিনি তাকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে বিস্ফোরণের আগে মুহিবুল্লাহ ডিপোর ভেতরে থাকা একটি বাথরুমে গিয়েছিলেন। বের হয়ে আসার সময় বিস্ফোরণের কবলে পড়েন। ওই সময় প্রায় ১০টির মতো কনটেইনার বিস্ফোরিত হয়েছিল। পরে আহত অবস্থায় গাড়িতে ওঠে বসেন। সেখানেই অজ্ঞান অবস্থায় পড়েছিলেন। একদিন চট্টগ্রামে চিকিৎসাধীন থাকার পর তাকে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।

মুহিবুল্লাহ’র ৭০ শতাংশ শরীর পুড়ে গেছে। এখন তিনি শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারী ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এখানে চিকিৎসাধীন ১৫ জনের মধ্যে ১০ জনের অবস্থায় ক্রিটিক্যাল। এর মধ্যে চারজনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে।
৫ জুন রাতে বিএম ডিপোতে প্রথমে একটি কনটেইনারে আগুনের সূত্রপাত হয়। সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ শুরু করেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। এর ৪০ মিনিট পর সেখানে বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটে। সেই বিস্ফোরণে কয়েকজন ফায়ার-ফাইটারসহ আশপাশে কয়েকশত মানুষ গুরুতর আতহ হন। শেষ খবর পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রায় কয়েক শতাধিক দগ্ধ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এমআইকে/একেবি/আইএইচ

















































































































