শহীদুল ইসলাম। বয়স ১৪। পড়ালেখার পাশাপাশি পিয়ন হিসেবে কাজ করতেন বিএম ডিপোতে। শনিবার (৪ জুন) রাত সাড়ে ৮টার দিকেও অগ্নিকাণ্ডের সময় ছিলেন ওই ডিপোতেই।
ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকেই বাসা থেকে বের হয়ে কর্মস্থলে আসেন শহীদুল। কিন্তু পরে আর বাড়ি ফেরেননি। এমনকি দুর্ঘটনার দীর্ঘসময় অতিবাহিত হলেও মিলছে না তার সন্ধান।
বিজ্ঞাপন
নিখোঁজ শহীদুলের ছোট ভাই দিদারুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, আমার ভাই সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে কর্মস্থলে যান। এরপর থেকে তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ।
দিদারুল ইসলাম জানান, আগুন লাগার খবর শোনার পর থেকেই মা আয়েশা বেগমকে নিয়ে বড় ভাই শহীদুলের সন্ধানে বিএম ডিপোর গেটেই রয়েছেন। মাঝখানে খোঁজ নিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজেও। কিন্তু কোনো জায়গাতেই শহীদুলকে পাওয়া যাচ্ছে না।
সন্তান নিখোঁজের ঘটনায় বিলাপ করতে করতে শহীদুলের মা আয়েশা বেগম ঢাকা মেইলকে বলেন, আমার ছেলে দশম শ্রেণিতে পড়ে। সংসারে টানাপোড়েন থাকার কারণে বিএম ডিপোতে পিয়নের কাজ করে।
বিজ্ঞাপন
বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাতাসে এখন শুধু পোড়া লাশের গন্ধ। সময়ের ব্যবধানে দীর্ঘ হচ্ছে লাশের মিছিল। এরই মধ্যে ৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে বিস্ফোরণস্থলে কর্মরত ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী ছাড়াও স্বেচ্ছাসেবকরা। এরমধ্যে নয়জনই ফায়ার সার্ভিসের কর্মী। তবে এ ঘটনায় আরও অসংখ্য লাশ পাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভয়াবহ এই দুর্ঘটনা কেবল কনটেইনার ডিপোতেই প্রথম নয়, বরং পুরো চট্টগ্রামেই এমন বড় কোনো দুর্ঘটনা এবারই প্রথম দেখল চট্টগ্রামবাসী। এখানে এর আগে এমন বড় দুর্ঘটনা ঘটেছিল ২০১১ সালে। ওই বছরের ১১ জুলাই চট্টগ্রামের মিরসরাই স্টেডিয়াম থেকে ফুটবল টুর্নামেন্টের খেলা শেষে ট্রাকে করে বাড়ি ফেরার পথে দুর্ঘটনায় ৪৪ জন স্কুলছাত্র নিহত হয়েছিল। একই দিনে ছেলের মৃত্যু শোকে মারা যান এক বাবাও।
সে সময় ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনার পর স্থানীয়দের সঙ্গে উদ্ধার তৎপরতায় যোগ দেয় সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিসসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। ওইদিন আবু তোরাব হাইস্কুল মাঠে ছিল শুধু লাশের মিছিল। স্কুলজুড়েই ছিল সহপাঠী বন্ধুদের বুক ভাঙ্গা কান্না। এক সঙ্গে এত শিশু শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে আজও কাঁদে সেখানকার মানুষ।
উল্লেখ্য, শনিবার (৪ জুন) রাত ১১টার দিকে উপজেলার সোনাইছড়ী ইউনিয়নে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আমদানিকৃত একটি কন্টেইনার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে সেখানে থাকা একটি কনটেইনারে ‘হাইড্রোজেন পারক্সাইড’ রাসায়নিকের মজুত থাকায় দফায় দফায় বিস্ফোরণ ঘটে। এতে সবমিলিয়ে অন্তত ৪ শতাধিক মানুষ দগ্ধ ও আহত হয়েছেন। তারা চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
/আইএইচ