‘লাশঘরে গেছি আব্বার লাশ খুঁজার লাগি। কিন্তু কাউরেই চিনতে পারতাছি না। আগুনে পুইড়া চেহারা চিনার কোনো উপায় নাই কারো। তাই, আব্বার লাশটাও খুঁজে পাই না।’
বাবার লাশ খুঁজে না পেয়ে কান্না বিজড়িত কণ্ঠে এভাবেই কষ্টের কথা জানাচ্ছিলেন ফাতেমা আক্তার।
বিজ্ঞাপন
সীতাকুণ্ড থেকে প্রতিটা মেডিকেলে খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে নিখোঁজ বাবা মো. ফারুক খোঁজে শেষ ভরসা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে এসেছেন তিনি।
চার সন্তানের বাবা মো. ফারুক (৫০) থাকতেন চট্টগ্রাম ইপিজেড এলাকায়। বাড়ি রবিশালের মটবাড়িয়ায়। তিনি সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়িতে অবস্থিত বিএম কনটেইনার ডিপোতে কাজ করতেন। গতকাল কনটেইনার বিস্ফোরণের পর থেকেই নিখোঁজ তিনি। গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে সর্বশেষ কথা হয়েছিলো। এরপর আর কথা হয়নি তার।
ফাতেমা আক্তার বলেন, ‘কাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে সর্বশেষ কথা হয়েছিলো। এরপর আর কথা হয়নি। কনটেইনারে আগুন লাগার পর থেকে আব্বাকে আর খুঁজে পাচ্ছি না। ফোনও বন্ধ। একের পর এক মেডিকেলে খুঁজতেছি, কিন্তু কোথাও কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। তার লাশটাও খুঁজে পাচ্ছি না।’
অন্যদিকে, রোববার (৫ জুন) সকাল থেকেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে স্বজনদের খোঁজে ভিড় করছেন অনেকেই। এর মধ্যে কারো খোঁজ মিলছে হাসপাতালের কোনো ওয়ার্ডে, কেউ কেউ স্বজনকে শনাক্ত করে নাম লেখাচ্ছেন মেডিকেলের নিরাপত্তা দপ্তরে, আবার শুধু লাশটি খুঁজে পাবার আহাজারিতে মাটিতে লুটে পড়ছেন অনেকেই।
বিজ্ঞাপন
উল্লেখ্য, শনিবার (৪ জুন) রাত সাড়ে ৯টার দিকে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি এলাকার বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত হয়েছেন প্রায় ৩২ জন। নিহতদের মধ্যে ১ জন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ও ৫ জন ফায়ার সার্ভিসের সদস্য রয়েছে। এছাড়াও, হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ১৮৫ জনেরও ওপরে।
ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে ইউনিট আরও বাড়ানো হয়। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিটের মোট ১৮৩ জন কর্মী আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করছেন। এছাড়া নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকেও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ করছেন।
টিবি