শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

বাজেট নিয়ে যা বলছে বিরোধী দলগুলো

মো. ইলিয়াস
প্রকাশিত: ১০ জুন ২০২২, ০২:৫০ এএম

শেয়ার করুন:

বাজেট নিয়ে যা বলছে বিরোধী দলগুলো

২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিরোধী দলগুলোর নেতারা। তাদের দাবি, এই বাজেট জনগণের সাথে উপহাস অনৈতিক এবং এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। এই ঋণ নির্ভর বাজেট জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে না। 

সংসদে বাজেট প্রস্তাবনার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এমনটাই জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা। তাদের অভিযোগ, সাধারণ মানুষ এখানে রাস্তা খুঁজেছেন কিভাবে সে পেট চালাবে, সংসার চালাবে। আর সরকার রাস্তা খুঁজে কিভাবে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে এবং তার সাথে বড় বড় দুর্নীতি সংযুক্ত হবে।


বিজ্ঞাপন


বর্তমান সরকার জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না, তাই এই সরকারের বাজেট দেওয়ার অধিকার নেই এমন মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এটা আসলে লুটপাটের হিসেব তৈরির জন্য প্রস্তাবিত বাজেট। প্রতিবছরই আমরা বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়ার দিয়ে থাকি, এ বছর আর প্রতিক্রিয়া দিতে চাই না। কারণ কোন বাজেটের প্রতিক্রিয়া দেব, কার বাজেটের প্রতিক্রিয়া দেব? কারা এই বাজেট করছে; যারা জনগণের প্রতিনিধি নয়। যাদের বাজেট দেওয়ার কোন অধিকার নেই। যারা এই সমস্ত বাজেট তৈরি করে শুধু নিজেদের লুটপাটের জন্য। তারা কি করে ভবিষ্যতে আরও লুটপাট করবে তার একটি হিসাব তৈরি করে। এবার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছে। ওখান থেকে কত টাকা লুট করবে তার একটা হিসাব বের করছে। এ কারণেই এই বাজেট আমার কাছে এতটুকু গুরুত্ব পায় না। আর এ বিষয় নিয়ে আমি বেশি কিছু বলতে চাচ্ছি না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট জনগণের জন্য নয়। এবারের বাজেট বর্তমান কঠিন সময়ের প্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ একটি বাস্তবতা বর্জিত একটি বাজেট, কেবল সরকারের আশীর্বাদপুষ্টদের জন্যই করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, জন প্রতিনিধিত্ববিহীন এই সরকার দেশের কোটি কোটি দরিদ্র মানুষের কোভিড পরবর্তী চরম মুল্যস্ফীতিজনিত দুঃসহ জীবনযাপন ও দৈনন্দিন সংগ্রামের বিষয়টি সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয়ে এমন একটি বাজেট উপস্থাপন করেছে যা দেশের মুষ্টিমেয় ধনিক শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষায় তৎপর হয়েছে। অবাক হবার কিছু নেই, এতে করে লাভবান হবে সরকার সংশ্লিষ্ট একটি বিশেষ গোষ্ঠী। অন্যদিকে নতুন বাজেটের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আরও চরম অবস্থায় পতিত হবে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী। 


বিজ্ঞাপন


জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, এটা একটা ঋণ নির্ভর বাজেট। ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার যে বাজেট এর মধ্যে ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৩৬.১৪ শতাংশই হচ্ছে নির্ভর। এই ঋণ নির্ভর বাজেটে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে না। অর্থমন্ত্রী এই প্রথম বলেছেন, বিদেশে যে টাকা পাচার হয়েছে তা কর দিয়ে বৈধ করা যাবে। যে টাকা পাচার হয়েছে এটা হচ্ছে জনগণের টাকা এরা (সরকার) এটা পাচার করেছে। সুতরাং কর দিয়ে নয়, এ টাকা ফেরত আনা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কর দিয়ে দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে এই বাজেটে। এটা জনগণের সাথে উপহাস অনৈতিক এবং এটা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। 

তিনি বলেন, কয়েক বছর যাবৎ করমুক্ত আয় তিন লক্ষ টাকা রাখা হয়েছে। গত বছর প্রস্তাবিত বাজেটের চেয়ে এই বছরে প্রস্তাবিত বাজেট ৭৫ হাজার কোটি টাকা বেশি। সেখানে সব খাতেই আয় এবং ব্যয়ের অংক বেড়েছে, কিন্তু মানুষের করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হয়নি। যারা ট্যাক্স দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন তাদের কোনো সুযোগ এখানে রাখা হয়নি। যারা ইনকাম করছেন বৈধভাবে এবং সেই বৈধ টাকা দিয়ে ট্যাক্স দিচ্ছেন তাদের কোনো সুযোগ এই বাজেটে রাখা হয়নি। এটা আমি মনে করি জনগণের সাথে একটি উপহার। কমপক্ষে চার লক্ষ টাকা করমুক্ত আয়সীমা করার দরকার ছিল। এবারও করোনার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গত বছর ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল কিন্তু কিভাবে সেটা ব্যয় হলো; তার কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্য জাতির কাছে পেশ করা হয়নি। এবার ৫ হাজার কোটি টাকা কোথায় ব্যয় হবে এটার কোন নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা আমরা দেখতে পাচ্ছি না। এছাড়া করোনার সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাখাত। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘ সময় বন্ধ ছিল। শুধু টাকা বাড়িয়ে একটি খাতে ডেভেলপ করা যায় না। এর জন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা দরকার ছিল। পিছিয়ে পড়া ছাত্রদের লেখাপড়ার কিভাবে এগিয়ে নেয়া যাবে। সে ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্য বাজেটে রাখা হয়নি। এক কথায় হচ্ছে এটা একটি ঋণনির্ভর বাজেট; জনগণের জন্য এটা কোন কল্যাণ বয়ে আনবে না।

২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম (বীরপ্রতীক) বলেন, মানুষের মাথার উপরে যে বিদেশি ঋণের বোঝা তার সাথে যুক্ত হচ্ছে আভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক চাপ। মুদ্রাস্ফীতি এবং সাধারন পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি; এই মূল্য বৃদ্ধিটা এত পৃষ্ঠার যা সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। সাধারণ মানুষ এখানে রাস্তা খুঁজেছেন কিভাবে সে পেট চালাবে, সংসার চালাবে। আর সরকার রাস্তা খুঁজে কিভাবে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে এবং তার সাথে বড় বড় দুর্নীতি সংযুক্ত হবে। সুতরাং আজকের এই বাজেট সাধারণ মানুষকে আশার আলো দিতে পেরেছে বলে আমি মনে করি না। আমরা সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলবো বাংলাদেশের নাগরিকদের নাবিশ্বাস হয়েছে উচ্চমূল্যের কারণে। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে। সরকার কর্তৃক সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারার ব্যর্থতার কারণে। এভাবে দৈনন্দিন সমস্যা যদি মানুষের জন্য সরকার সমাধান করতে না পারে; তাহলে কত বড় অংকের কত বড় বাজেট আপনি দিলেন তা মানুষের জীবনে কোন প্রভাব ফেলবে না। 

গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, প্রস্তাবিত এই বাজেটের উপর আমার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। কথা হচ্ছে যদি চুরিটা একটু কম করে; ৪০ শতাংশ চুরির হার এটা কমিয়ে যদি ১০ শতাংশ করে তাহলে সব সমস্যা গুলোর সমাধান করা যাবে। এখানে ২ শতাংশ ওখানে ৫ শতাংশ এনিয়ে আমার কোন কথা নেই; এগুলো সব ফালতু আলোচনা।

২০ দলের আরেক শরিক বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, বাজেট নিয়ে আমার আসলে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। এই অবৈধ সরকার একটি বাজেট দেবে এটা গতানুগতিক একটি বাজেট। যেখানে মুড়ির দাম কমেছে এ বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া কি বলবো। এ সরকারকে আমি বৈধ সরকার হিসেবে গণ্য করি না। অবৈধ সরকারের যে বাজেট; এটি অবৈধ বাজেট।

২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, বাংলাদেশের গত ৫০ বছর ধরে একই সমস্যা। গতানুগতিক বাজেট সকলেই করে। সেখানে সাধারণ মানুষের কল্যাণে কিছুই থাকেনা। সবি ধনিক শ্রেণীর কল্যাণের জন্যই হয়, এটাই হচ্ছে মূল বিষয়। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ালেও, তা সঠিকভাবে কাজ করছে না। বরাদ্দ অর্থ লুটপাট হয়ে যাচ্ছে, লুটেরাদের পেটে চলে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে এই বরাদ্দ বাড়িয়ে কি লাভ হবে? এছাড়া পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার বিষয়ের মধ্য দিয়ে সরকার প্রমাণ করেছে অন্যায় করার পর জরিমানা দিয়ে সেটা বৈধ করা যায়। 

এমই/একে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর