শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দ ১ লাখ সাড়ে ১৩ হাজার কোটি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯ জুন ২০২২, ০৪:৩৩ পিএম

শেয়ার করুন:

সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দ ১ লাখ সাড়ে ১৩ হাজার কোটি
ফাইল ছবি

২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোট ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা মোট বাজেটের ১৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এই তথ্য দেন।


বিজ্ঞাপন


বজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকারের পরিকল্পিত নীতিকৌশল বাস্তবায়নের ফলে কোভিড-১৯ অতিমারির পূর্বে দেশে দারিদ্র্যের হার ২০.৫ শতাংশে এবং অতি দারিদ্র্যের হার ১০.৫ শতাংশে নেমে আসে। যদিও অতিমারির কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় আমাদের অগ্রগতি কিছুটা হোঁচট খেয়েছিল, কিন্তু সরকারের দ্রুত সাহসী পদক্ষেপে অল্পদিনেই বাংলাদেশ আবার উন্নয়নের গতিধারায় ফিরে আসতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের এপ্রিল ২০২২-এ প্রকাশিত 'Bangladesh Development Update' শীর্ষক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, শক্তিশালী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পরিপ্রেক্ষিতে দেশে দারিদ্র্য ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ১১.৯ শতাংশে নেমে এসেছে।

কোভিড-১৯ এর সংকট কাটিয়ে মানুষের জীবন, জীবিকা ও দেশের উন্নয়নের গতিধারাকে এগিয়ে নিতে চলতি বাজেটে স্বাস্থ্য, বিনিয়োগ, উৎপাদন, কর্মসংস্থান, মানবসম্পদ উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি জোরদার করার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। একদিকে সরকার অর্থনীতির কাঠামোগত রূপান্তরের লক্ষ্যে নানামুখী উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করছে, অন্যদিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য দারিদ্র্য ও বৈষম্য হ্রাসে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি করা হচ্ছে। বৃহৎ উন্নয়ন কর্মসূচির পাশাপাশি একযোগে পরিচালিত হচ্ছে সমাজের পিছিয়ে পড়া দুঃস্থ, অসহায় এবং ছিন্নমূল মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে নানামুখী কর্মসূচি।

এছাড়াও শহর এলাকায় ‘শহর সমাজসেবা কার্যক্রম’ এবং ‘এসিড দগ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পুনর্বাসন কার্যক্রম’ নামে মোট ৪টি সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এসব ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ প্রদান ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, দুঃস্থ প্রবীণ ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষায় ব্যাপক পরিসরে বয়স্ক ভাতা প্রদান করা হচ্ছে এবং বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতার ক্ষেত্রে প্রবীণ নারীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। ২০২১-২০২২ অর্থবছর থেকে জনপ্রতি মাসিক ৫০০ টাকা হারে ৫৭.০১ লাখ ভাতাভোগীর জন্য বয়স্ক ভাতা খাতে ৩ হাজার ৪৪৪.৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, যা চলমান থাকবে। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ২০ লাখ ৮ হাজার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে মাসিক ৭৫০/- টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হয়েছে। উপকারভোগীর সংখ্যা আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৩.৫৭ লাখ বৃদ্ধি করে ২০.৮ লাখের স্থলে ২৩.৬৫ লাখে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ সময় মাসিক ভাতার হার ৭৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা বৃদ্ধি করে ৮৫০ টাকা করা হবে।


বিজ্ঞাপন


২০২২-২০২৩ অর্থবছরে প্রতিবন্ধী ভাতা বাবদ ২ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করছি। ভাতা কর্মসূচির বাইরেও সরকার প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি চালু করেছে, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে যার উপকারভোগীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ এবং বার্ষিক বরাদ্দ ছিল ৯৫ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকা।

মুস্তফা কামাল আরও বলেন, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতাভুক্ত বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা ও প্রতিবন্ধী উপবৃত্তি কার্যক্রমে এবং দারিদ্র্য নিরসন কর্মসূচির আওতায় পল্লী ও শহর সমাজসেবা কার্যক্রম, এসিডদগ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পুনর্বাসনে শতকরা ৫০ ভাগ নারী এবং বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা দুঃস্থ মহিলা ভাতা এবং পল্লী মাতৃকেন্দ্র কার্যক্রমে শতকরা ১০০ ভাগ নারী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণের কার্যক্রমসমূহে নারীর অন্তর্ভুক্তি বাধ্যতামূলক থাকায় এগুলো বার্ষিক গড়ে ১.২০ লাখ নারীর ক্ষমতায়ন, সামাজিক সুরক্ষা বৃদ্ধি, আত্মকর্মসংস্থান, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রাপ্তি, আয়বর্ধক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, নিজস্ব পুঁজি এবং সরকারি সম্পদ ও সেবা লাভের সুযোগ সৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখছে।


মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ কার্যক্রম জীবনচক্রভিত্তিক সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় মাতৃগর্ভ থেকে শুরু করে শিশুর জীবনের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ১,০০০ দিনসহ চার বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর পুষ্টি চাহিদা পূরণ, শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশে সাহায্য করবে। তাই এ কর্মসূচিকে প্রাধান্য দিয়ে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের উপকারভোগীর সংখ্যা ১০ লাখ ৪৫ হাজার থেকে ২ লাখ ৯ হাজার বৃদ্ধি করে আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে মোট ১২ লক্ষ ৫৪ হাজারে উন্নীত করার প্রস্তাব করছি। এ খাতে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে মোট বরাদ্দ ১ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা।

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ তহবিল প্রসঙ্গে মুস্তফা কামাল বলেন, ২০২১-২০২২ অর্থবছর হতে সকল শ্রেণির বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানি ভাতা ন্যূনতম ২০ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ তথ্য সম্বলিত Management Information System (MIS) ও সমন্বিত তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচিতি নিশ্চিতকল্পে তাঁদের অনুকূলে স্মার্ট কার্ড ও ডিজিটাল সনদপত্র প্রদান কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে দেশের সকল জেলা-উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন বিশেষ প্রকল্প রয়েছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি, চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন, বেদে ও অনগ্রসর গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন, হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নসহ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। দেশব্যাপী ভিক্ষুক পুনর্বাসন ও তাদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। স্কুলগামী বেদে, অনগ্রসর ও তৃতীয় লিঙ্গের শিক্ষার্থীদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ৪ স্তরে উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে।

সামাজিক সুরক্ষা খাতে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ১১২টি এবং ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ১৫০টিসহ মোট ২৬২টি উপজেলায় ভাতা প্রাপ্তির যোগ্য শতভাগ বয়স্ক ও বিধবাকে ভাতা প্রদান কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচিসমূহের সকল নগদ হস্তান্তর জি-টু-পি পদ্ধতির অধীনে আনয়ন করার লক্ষ্যে ১০টি বৃহৎ কর্মসূচিতে এ ডিজিটাল পদ্ধতি ইতোমধ্যে চালু করা হয়েছে এবং ২০২১-২০২২ অর্থবছরে জি-টু-পি এর অধীনে সুবিধাভোগীর সংখ্যা ২ কোটি ৬৩ লাখে উন্নীত করা হয়েছে। ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে হঠাৎ কর্মহীন হয়ে পড়া দরিদ্র মানুষের জন্য বিনামূল্যে জরুরি খাদ্য সহায়তা হিসেবে চাল, ত্রাণ (নগদ) ও শিশু খাদ্য বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সারাদেশে নিম্ন-আয়ের জনগোষ্ঠীর মাঝে মাত্র ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রয়ের চলমান কার্যক্রম বেগবান করা হয়েছে। সারাদেশে লক্ষ্যভিত্তিক উপকারভোগী পরিবারের প্রত্যেককে ২,৫০০ টাকা করে দুই ধাপে মোট ২ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা অনুদান প্রদান করা হয়েছে। তন্মধ্যে প্রথম ধাপে প্রায় ৩৫ লাখ ও দ্বিতীয় ধাপে প্রায় ৩১ লাখ পরিবার এ অনুদান পেয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছে দিনমজুর, কৃষক, শ্রমিক, গৃহকর্মী, মোটরযান শ্রমিক ও অন্যান্য পেশায় জড়িত লোকজন।
‘ফ্যামিলি কার্ড’ কর্মসূচি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে দেশব্যাপী দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বল্পমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিতরণে আমরা ‘ফ্যামিলি কার্ড’ কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। এ কর্মসূচির আওতায় এক কোটি পরিবারের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর অধীনে করোনাকালে নগদ অর্থ সহায়তা বাবদ ২ হাজার ৫০০ টাকা করে পেয়েছেন যে সকল পরিবার তারাসহ মোট এক কোটি পরিবার টিসিবির ‘ফ্যামিলি কার্ড’ সহায়তা পাচ্ছেন। সরকারি এ উদ্যোগের ফলে দেশের প্রায় পাঁচ কোটি স্বল্প-আয়ের মানুষ সরাসরি উপকৃত হবে। আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতে মোট ১ লক্ষ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করছি, যা বাজেটের ১৬.৭৫ শতাংশ এবং জিডিপির ২.৫৫ শতাংশ।

এসএএস/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর