শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ক্ষতি পোষাতে শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন

সেলিম আহমেদ
প্রকাশিত: ০৮ জুন ২০২২, ১২:২৫ পিএম

শেয়ার করুন:

ক্ষতি পোষাতে শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন

করোনাকালে প্রায় দুই বছর বন্ধ ছিল দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই সময়ে শিক্ষার যে ক্ষতি হয়েছে তা বলার মতো নয়। দীর্ঘ সময় শিখন ঘাটতি কারণে ছাত্রছাত্রীদের ঝরে পড়ার হার বেড়েছে। এছাড়া শিশুশ্রম বেড়ে যাওয়া, বাল্যবিবাহ ও অপুষ্টির মুখে পড়েছে অনেক শিক্ষার্থী, যা উদ্বেগজন বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা। এছাড়া আগামীবছর থেকে যে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হচ্ছে তা বাস্তবায়নও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষাখাতকে ঘুরে দাঁড় করাতে আগামী বাজেটে অন্তত ২০ শতাংশ বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা। একইসঙ্গে সংকট মোকাবিলায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি নানা পদক্ষেপ নিতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ভাবনা নিয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান ঢাকা মেইলকে বলেন, বাজেটে যে বরাদ্দ দেওয়া হয় তার ৭০ ভাগ চলে যায় শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীর বেতন ভাতায়। এভাবেতো দেশের শিক্ষাকে খুব বেশি দূরে নেওয়া সম্ভব নয়। এমনিতে আমরা শিক্ষাকে গুরুত্ব দিলেও বাজেটওয়ারি গুরুত্ব দেই না।


বিজ্ঞাপন


আবদুল মান্নান বলেন, বাজেটকে অর্থবহ করতে শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে। ভালো শিক্ষক বাড়াতে হবে। স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ভালো শিক্ষক পেতে হলে তাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। শিক্ষকদের মানসম্মত বেতন কাঠামো দিতে হবে। গরিব ছাত্রদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবকাঠামোগত সুবিধা বাড়াতে হবে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যার চালা নেই। গাছতলায় পাঠদান হয়। এখন সময় হয়েছে শিক্ষার বাজেটকে সবার ওপরে স্থান দেওয়ার। বছরের প্রথমদিন বিনা পয়সায় বই, দুপুরের খাবার দিয়ে শিক্ষার মানোন্নয়ন করা যাবে না। শিক্ষাকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যেতে হলে এসব সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। করোনাকালে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরাতে একটা ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নিতে হবে। তারা ক্লাসে না ফিরলে জাতীর ক্ষতি হবে।’

badget-symbolকরোনা পরবর্তীকালে আসন্ন বাজেটকে আরও বাস্তবমুখী করার আহ্বান জানিয়ে ইউজিসির সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, ‘বছর বছর আমাদের বাজেট বড় হচ্ছে কিন্তু তার বড় একটি অংশ দুর্নীতি খেয়ে ফেলছে। যতক্ষণ পর্যন্ত দুর্নীতি থামানো যাবে না ততক্ষণ শিক্ষায় যত বাজেটই বৃদ্ধি করি না কেন তা খুব বেশি কাজে আসবে বলে আমি মনে করি না।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেছেন, আমরা বিগত ১০ বছরের বাজেটে শিক্ষা খাতের একক বরাদ্দ বাড়তে দেখিনি। জিডিপির হারে দুই থেকে আড়াই শতাংশের মধ্যেই শিক্ষা বাজেট ঘুরপাক খাচ্ছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে নিম্নতর।

শিক্ষা খাতে বাজেটের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, প্রতি বছরই শিক্ষা খাতের সঙ্গে অন্য কোনো খাতকে জুড়ে দেওয়া হয়। গত বছরও শিক্ষা খাতের বাজেটের সঙ্গে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের হিসাব জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। এর কারণে সুস্পষ্ট বাজেটের যে চিত্র তা বোঝা যায় না।


বিজ্ঞাপন


সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, শুধু বরাদ্দ দিলেই হবে না, শিক্ষা বাজেটের যথাযথ ব্যবহার করতে হবে। শিক্ষা খাতের দুই মন্ত্রণালয় বড় বরাদ্দের দাবি দিয়েছে, সেখানে বাজেট ব্যবহারের সক্ষমতা এবং মনিটরিংয়ের সক্ষমতা দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। এ দুটো বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ বলেন, জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (ইউনেস্কো) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুমোদিত ১৪৬টি সুপারিশ সম্বলিত শিক্ষকদের মর্যাদা বিষয়ক সনদে বাংলাদেশ সরকারও স্বাক্ষর করেছেন। সেখানে শিক্ষকদের সকল ধরনের সুবিধা নিশ্চিত করতে শিক্ষা খাতে জাতীয় বাজেটের ২০ শতাংশ অথবা জিডিপির ৬ শতাংশ বরাদ্দের কথা উল্লেখ আছে। আগামী বাজেটে সেটি বাস্তবায়ন করতে হবে।

badget-symbol-3খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী শিক্ষা খাতে জাতীয় বাজেটের কমপক্ষে ২০ শতাংশ অথবা জিডিপির ৬ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলা আছে। কিন্তু বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে জাতীয় বাজেটের ১৩-১৫ শতাংশের মধ্যে থাকলেও জিডিপি মাত্র ২.৮ শতাংশ। জাতীয় বাজেটের হিসাবে বা জিডিপি উভয় ক্ষেত্রে আমাদের বরাদ্দ আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের চেয়ে কম। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাজেটের আকার বড় করলেও শিক্ষাখাতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে বেশ কম।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত মিলে ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়েছিল। তবে একক খাত হিসেবে শিক্ষায় এই বরাদ্দ ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ। গত অর্থবছরেও শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। আগামী অর্থবছরেও টাকার অঙ্কে বরাদ্দ কিছুটা বাড়লেও তা ১২ শতাংশের আশপাশেই থাকবে।

উন্নত দেশগুলো তাদের বাজেট আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের চেয়েও অনেক বেশি অর্থাৎ ৩০-৩৫ শতাংশ বরাদ্দ দেয় শিক্ষা ও গবেষণা খাতে, সেখানে আমাদের দেশে বরাদ্দ দেওয়া হয় মাত্র ১৫ শতাংশ। এজন্য চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চলমান যুগে যে পরিমাণ দক্ষ ও সৃজনশীল জনবল প্রয়োজন, তা এখনো গড়ে উঠছে বলেও মনে করছেন শিক্ষা বিশ্লেষকরা।

badget-symbol-2

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে বরাদ্দ ছিল প্রায় ৩২ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে (২০২২-২৩) এই বিভাগে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে প্রায় ৩৯ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা। একই মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে চলতি অর্থবছর বরাদ্দ ছিল প্রায় ৯ হাজার ১০ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে প্রস্তাব করা হয়েছে প্রায় ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ ছিল প্রায় ২৬ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছর এই মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা। এই হিসেবে আগামী অর্থবছরে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়।

এসএএস/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর