শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

শেখ হাসিনা: এক ফিনিক্স পাখির গল্পগাথা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯ জুন ২০২২, ০৫:৩০ পিএম

শেয়ার করুন:

শেখ হাসিনা: এক ফিনিক্স পাখির গল্পগাথা
ফাইল ছবি

‘কোভিড অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ শিরোনামে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পেশ করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল। বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শৈশব থেকে শুরু করে দেশের একাধিকবারের নেতৃত্ব দেওয়ার সাফল্যগাথা উঠে আসে। সেই সঙ্গে দেশের যেসব ক্ষেত্রে উন্নয়ন ও অগ্রগতি হয়েছে সেসব বিষয়ও এতে উল্লেখ করা হয়।

ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতা সূরা মূলকের প্রথম আয়াত ‘তাবারাকাল্লাজি বিয়াদিহিল মুলক, ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির’ দিয়ে শুরু হয়। পরে দ্বিতীয় অধ্যায়ে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়। যা বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) ডকুমেন্টারি আকারে প্রচার করা হয়।


বিজ্ঞাপন


ঢাকা মেইলের পাঠকদের জন্য সংসদে দেওয়া অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যটি তুলে ধরা হলো-

১৯৪৭ সাল। সময়টা তখন শরৎকাল। রূপময় বাংলার প্রকৃতিতে আদিগন্ত সবুজের সমারোহ। শিউলিঝরা সকাল, ভোরের দূর্বাঘাসে মুক্ত দানা শিশির, নদীর তীরে বনের প্রান্তে কাশফুলের সাদা এলোকেশের দোলা, আকাশের নরম নীল ছুঁয়ে ভাসা শুভ্র মেঘের দল, নৌকার পালে বিলাসী হাওয়া। ভেসে বেড়ানো মেঘের প্রান্ত ছুঁয়ে উড়ে চলা পাখ-পাখালির ঝাঁক, বাঁশবনে ডাহুকের ডাকাডাকি, বিলঝিলের ডুবো ডুবো জলে জড়িয়ে থাকা শালুক পাতা, আঁধারের বুক চিরে জোনাকির রুপালি সেলাই, ঘোর লাগা চাঁদের আলো- সব মিলিয়ে প্রকৃতিতে এক অনিন্দ্য সৌন্দর্যের আড়ম্বর।

Deshbhag

অপরদিকে বাংলার রাজনীতিতে তখন ভারতবর্ষের সদ্য অনাকাঙ্ক্ষিত বিভক্তির টানাপোড়েন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন ছাত্রনেতা। কলকাতায় দেশভাগের সূত্র ধরে ভারতের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রশমনে ব্যস্ত। পাশাপাশি প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন কলকাতার পাট চুকিয়ে স্থায়ীভাবে ঢাকায় চলে আসার। ঠিক এমনি একটি ক্ষণে ২৮ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ঘর আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন তাঁদের প্রথম সন্তান শেখ হাসিনা। ছোটবেলায় সকলের প্রিয় ‘হাসু’ নামেই পরিচিত ছিলেন।


বিজ্ঞাপন


শেখ হাসিনার শৈশব কেটেছে মধুমতীর শাখা বাইগার নদীবিধৌত গ্রামের গৃহস্থ পরিবারে। তিনি টুঙ্গিপাড়ায় বাল্যশিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯৫৪ সালে পরিবার ঢাকায় চলে আসে। শেখ হাসিনার বয়স তখন আট বছর। শেখ হাসিনা প্রথমে লক্ষ্মীবাজারের নারী শিক্ষা মন্দিরে পড়ালেখা করলেও পরবর্তী সময়ে আজিমপুর গার্লস স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৬৭ সালে গভর্নমেন্ট ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

Sheikh Hasina

তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজের ছাত্রী সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি এই কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পরের বছর সভাপতি ছিলেন। শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রলীগের একজন সদস্য এবং ছাত্রলীগের রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি সকল গণআন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

প্রকৃতপক্ষে শেখ হাসিনা উত্তরাধিকার ও জন্মসূত্রে রাজনৈতিক। শৈশব থেকেই বাবাকে দেখেছেন জেলজীবন কাটাতে। আর্থিক টানাপোড়েনে একজন সাদাসিধে গৃহিণী মায়ের তত্ত্বাবধানে বেড়ে উঠেছেন মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবেশে। বাবার রাজনীতির সুবাদে বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর সহযোগী রাজনৈতিক নেতাদের আনাগোনা ও বিচরণ প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হয়েছিল ছোট বেলাতেই।

PM Sheikh Hasina

ষাটের দশকের শেষদিকে পিতা বঙ্গবন্ধু যখন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি হয়ে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে বন্দি, তখন রাজনৈতিক কার্যকলাপ ও নীতিনির্ধারণী বিষয়ে মায়ের পাশাপাশি শেখ হাসিনাও সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূমিকা পালন করেন। ওই সময় সংঘটিত গণআন্দোলনেও তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের মার্চের উত্তাল দিনগুলোতেও বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যরা, বিশেষ করে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ও শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুকে নানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করেন।

একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় সন্তানসম্ভবা শেখ হাসিনা একটি বাড়িতে অন্তরীণ অবস্থায় নানা অনিশ্চয়তায় দিন কাটান। বাবা পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি, দুই ভাই শেখ কামাল ও শেখ জামাল মুক্তিযুদ্ধে এবং মা ও ছোট ভাই রাসেল ও বোন রেহানা তাঁরই মতো একটি বাড়িতে অন্তরীণ। অন্তরীণ অবস্থায় ১৯৭১ সালের মে মাসে জন্ম হয় ছেলে সঞ্জীব ওয়াজেদ জয়ের।

১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১, দেশ স্বাধীন হলে অমানিশার দিনগুলো শেষ হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন দেশে ফিরে এসে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করেন স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মাণের মজবুত ভিত তৈরি করে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে।

কিন্তু অভাগা জাতির জীবনে আবার দুর্যোগের ঘনঘটা নেমে আসে যখন স্বাধীনতাবিরোধী ষড়যন্ত্রকারী হায়নারা ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যা করে বাঙালির ভাগ্যের চাকাকে স্তব্ধ করে দেয়। স্বামীর কর্মস্থল পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় শেখ হাসিনা, দুই সন্তান ও ছোট বোন শেখ রেহানা সেই কালরাত্রে প্রাণে বেঁচে যান।

15 August

দুঃখ, ভয় ও শঙ্কার মধ্যে জার্মানিতে কিছুদিন অবস্থান করে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়ে ২৫ আগস্ট ভারতে আসেন শেখ হাসিনা। ছয় বছর সেখানে অবস্থান করেন। ১৯৮০ সালে ইংল্যান্ডে থেকে তিনি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন শুরু করেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নানা ঘাত-প্রতিঘাতে, ঐক্য অনৈক্যের মধ্যে ধুঁকে ধুঁকে টিকে থাকে। আওয়ামী লীগে ঐক্য ফিরিয়ে আনা এবং পুনর্গঠনের উদ্দেশ্যে ফেব্রুয়ারি ১৯৮১-এর কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ হাসিনাকে দলীয় পদে মনোনীত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী দল আওয়ামী লীগের তখন বড় দুর্দিন। তাদের একজন নির্ভরযোগ্য কাণ্ডারির প্রয়োজন। এ রকম পরিবেশে সামরিক সরকারের সমস্ত বাঁধা ছিন্ন করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ই মে বিকেল ৪টায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন। সেদিন শুধু ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দর নয়, ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের মতোই তার কন্যার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে সমগ্র ঢাকা নগরী জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল।

PM Sheikh Hasina

বিমানবন্দর থেকে একটি ট্রাকে করে জাতীয় নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে জনস্রোতের ঢেউ পেরিয়ে তিনি মানিক মিয়া এ্যাভিনিউয়ের জনসমুদ্রের মঞ্চে দাঁড়িয়ে অঝোরে কাঁদলেন, সেই সঙ্গে জনসমুদ্র হু হু করে কেঁদে উঠলো। ঠিক যেন বঙ্গোপসাগরের উত্তাল জলরাশি সৈকতে মাথা ঠুকে আছড়ে পড়ছে। সেদিন আকাশ-বাতাস ভেঙে ১৫ আগস্টের জমানো কান্নায় কেঁদে উঠেছিল প্রকৃতি।

শেখ হাসিনা দলকে সংগঠিত করার পাশাপাশি দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন ও সংগ্রাম চালিয়ে যান। বঙ্গবন্ধু বাংলার মানুষকে যেরূপ ভালোবাসতেন, দেশটাকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতেন, সেরূপভাবে শেখ হাসিনাও এ দেশের মানুষকে ভালোবাসেন। তিনি ঘোষণা করেন বাবা, মা, ভাইদের ও নিকট আত্মীয়দের হারিয়ে তিনি নিঃস্ব। তার কোনো চাওয়া পাওয়া নেই। তার একমাত্র কামনা হচ্ছে দেশের সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন। তিনি দেশের জনগণের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করতে চান। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে তিনি আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ফলে তীব্র গণআন্দোলনের মুখে ১৯৯০-এর ডিসেম্বরে স্বৈরাচারী শাসনের পতন ঘটে।

১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনের পরে শেখ হাসিনা বিরোধী দলে থেকেই দেশের গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ঘুরে বেড়িয়ে মানুষের দুঃখ-কষ্টে তাদের পাশে দাঁড়ান, অভাব-অভিযোগ শোনেন। দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে কোন এলাকায় কী কী প্রয়োজন সে সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করেন। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ২১ বছর পর জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে এবং শেখ হাসিনা দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করে উন্মুক্ত করেন সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত। ১৯৯৬-২০০১ সময়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার উন্নীত হয় ৬ দশমিক ২ শতাংশে। মূল্যস্ফীতির হার নেমে আসে ১ দশমিক ৫৯ শতাংশে।

Sheikh Hasina

সর্বস্তরে স্বাধীনতার আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকায়ন, কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলকরণ, জাতির পিতা ও জেল হত্যা মামলার বিচার প্রবর্তনের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার ও শান্তি সংরক্ষণ, পার্বত্য শান্তিচুক্তি সম্পাদন, গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি, কৃষিতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন, অর্পিত সম্পত্তি আইন বাতিল, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি লাভ, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন, ১৯৯৮ এর প্রলয়ংকারী বন্যা মোকাবিলা, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু উন্নয়ন, দারিদ্রের হার ৪৪ দশমিক ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা, ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি, গৃহায়ণ তহবিলের আওতায় গৃহহীনদের জন্য ঘরের ব্যবস্থা, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার ব্যবস্থাকরণ, সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিতকল্পে নতুন স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন, দেশব্যাপী হাসপাতাল ব্যবস্থার উন্নয়ন ও কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন, গড় আয়ু ৬৩ বছরে উন্নীতকরণ, দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বয়স্কভাতা চালুকরণ, দুঃস্থ মহিলা ভাতা চালুকরণ, প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা, একটি বাড়ি একটি খামার কর্মসূচি চালুকরণ, কর্মসংস্থান ব্যাংক প্রতিষ্ঠা, দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা দূরীকরণ, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে যুগোপযোগী ও আধুনিক শিক্ষানীতি প্রণয়ন, প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তির ব্যবস্থাকরণ, মাধ্যমিক পর্যায়ে ছাত্রীদের জন্য উপবৃত্তি প্রবর্তন, পাঁচ বছরে স্বাক্ষরতার হার ৪৪ থেকে ৬৫ শতাংশে উন্নীতকরণ, যমুনা নদীর ওপর ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ বঙ্গবন্ধু সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্তকরণ, ৪ জুলাই, ২০০১ এ মাওয়ায় পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি শক্ত ভিত স্থাপন করেন। কিন্তু ২০০১ সালে উন্নয়নের রথ আবার বাধাগ্রস্ত হয়।

১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ক্ষান্ত হয়নি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে স্বাধীনতা, সেই স্বাধীনতাকে অর্থবহ করার এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার ক্লান্তিহীন লড়াইকে থামিয়ে দেবার চেষ্টা হয়েছে বহুবার। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। সময় বিকেল ৫টা ৪০ মিনিট। স্থান আওয়ামী লীগ অফিসের সামনের সড়ক, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ। মাত্রই শেষ হলো দলীয় সমাবেশ। খোলা ট্রাকের ওপর দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দেওয়া শেষ করলেন সেই সময়ের বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা।

21 August

সমাবেশস্থলে ট্রাকের চারপাশে তখনও কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থকের ভিড়। ট্রাকের শেষ মাথায় মই লাগানো। নামার জন্য সেদিকে এগিয়ে গেলেন শেখ হাসিনা। তারপর যা ঘটল, তা বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে নৃশংস ও নিকৃষ্টতম অধ্যায়। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হলো গ্রেনেড। একটি নয়, একের পর এক বিস্ফোরিত হতে থাকল গ্রেনেড। এতটা দ্রুত একটির পর একটি বিস্ফোরণ সম্ভবত যুদ্ধক্ষেত্রেও কদাচিৎ দেখা যায়।

বিস্ফোরণের শব্দ যখন থামল, তখন বোঝা গেল, এ কেবল নিছক শব্দ নয়, এ ছিল নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। দেখা গেল- গ্রেনেডের আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়া মানুষের দেহ এবং তার ওপর দিয়ে জ্ঞানশূন্য মানুষের দিশেহারাভাবে ছুটে চলা। ঘাতকেরা যাঁকে হত্যার জন্য নারকীয় এই আয়োজন করেছিল, সেই শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে যান অলৌকিকভাবে।

এছাড়া ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামে, একই বছরের ১৫ আগস্ট ও ১৯৮৯ সালের ১১ আগস্ট ফ্রিডম পার্টির কর্মীরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে গুলিবর্ষণ ও গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। ১৯৯১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ধানমণ্ডির গ্রিন রোডের পরিবার-পরিকল্পনা ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনকালে গুলিবর্ষণ, ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পাবনার ঈশ্বরদীতে ট্রেনে গুলিবর্ষণ, ১৯৯৫ সালের ৭ ডিসেম্বর রাসেল স্কোয়ারে আওয়ামী লীগের জনসভায় বোমা হামলা, ১৯৯৬ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কার্জন হল এলাকায় গুলিবর্ষণ, ২০০০ সালের ২০ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার জনসভার কাছে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখা, ২০০১ সালের ২৯ মে খুলনার রূপসা সেতু এলাকায় শক্তিশালী বোমা পুঁতে রাখা, ২০০২ সালের ৪ মার্চ নওগাঁয় বিএমসি সরকারি মহিলা কলেজের সামনে গাড়িতে হামলার মাধ্যমে দুর্বৃত্তরা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে প্রায় ২০ বার হত্যার চেষ্টা চালায়। কিন্তু প্রতিবারই আল্লাহর অশেষ মেহেরবাণীতে তিনি অবিশ্বাস্যভাবে মৃত্যুদুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন এবং দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ করে এই বাংলার মানুষের কল্যাণে নিজেকে সমর্পণ করেছেন।

২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে সংকট উত্তরণের লক্ষ্যে বাঙালি জাতির জন্য সম্ভাবনার এক স্বর্ণদুয়ার উন্মোচন করে ‘দিন বদলের সনদ’ ইশতেহারে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়লাভ করে শেখ হাসিনা দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। বাস্তবায়ন করেন দিনবদলের রূপকল্প, ২০২১।

‘শান্তি গণতন্ত্র উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ শিরোনামের ইশতেহার নিয়ে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়লাভ করে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এবং শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ ইশতেহার নিয়ে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের মাধ্যমে টানা তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এবং শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।

Sheikh Hasina

২০০৯ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত (২০২২) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ পার করছে অভাবনীয় এক স্বর্ণালি অধ্যায়। বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে শান্তি, প্রগতি আর সম্প্রীতির এক মিলনমেলায়। একের পর এক রচিত হচ্ছে উন্নয়নের সাফল্যগাঁথা। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য অনুকরণীয় উন্নয়ন স্বপ্নদ্রষ্টা। গত ১৩ বছরের হাজারো অর্জনের মাঝে কিছু উল্লেখযোগ্য অর্জন এখানে তুলে ধরা হচ্ছে।

মহান জাতীয় সংসদ পরিণত হয়েছে রাষ্ট্রীয় সকল কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দুতে। গত ১৩ বছরে জিডিপির গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৬ শতাংশ যা ২০১৬-২০১৭, ২০১৭-২০১৮ ও ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৭ শতাংশের ওপরে ছিল এবং ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৮ শতাংশ অতিক্রম করে। কোভিডকালীন সময়েও ২০২০-২০২১ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ঈর্ষণীয় ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ ছিল। ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা মেয়াদে অর্জিত গড় প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৩ শতাংশ এবং সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা মেয়াদে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ; অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২১-২০২৫), প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-২০৪১) এবং বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ প্রণয়নকরত বাস্তবায়ন কার্যক্রম গ্রহণ; জিডিপির আকার ৪ লাখ ৮২ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা থেকে ৩৯ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে; মাথাপিছু আয় ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে ৫৪৩ মার্কিন ডলার হতে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার; মূল্যস্ফীতি ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে সীমিত আছে; দারিদ্র্যের হার ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ হতে কমে ২০ দশমিক ৫ শতাংশ এবং অতি দারিদ্রের হার দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৫ শতাংশে; বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছুঁয়েছে ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (২৩ আগস্ট, ২০২১ তারিখে)।

বাজেটের আকার ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরের তুলনায় এগারগুণের মতো বৃদ্ধি পেয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দ দুই হাজার ৫০৫ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা চার হাজার ৯০০ মেগাওয়াট থেকে ২৫ হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াটে বৃদ্ধি পেয়েছে। ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ কর্মসূচির’ আওতায় আজ বাংলাদেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে।

মিয়ানমার ও ভারতের সমুদ্রসীমা নিয়ে আইনি বিরোধের চূড়ান্ত নিষ্পত্তির মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের এলাকাভুক্ত সমুদ্রের অংশ, এক্সক্লুসিভ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও মহীসোপানসহ মোট এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকার ওপর স্বত্বাধিকার লাভ করে। সমুদ্রের নীল জলরাশি ও তার সম্পদ আহরণে এ উন্মুক্ত অধিকারের সুযোগ কাজে লাগাতে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১- এ সুনীল অর্থনীতির কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে।

নিম্ন-আয়ের দেশ থেকে গ্রাজুয়েশন; স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা হতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত ধাপ অতিক্রম; রূপকল্প ২০২১-এ কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করে খাদ্য ঘাটতি দূর করা এবং দেশকে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার যে প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছিল তা সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে এরই মধ্যে অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তব রূপ লাভ করেছে।

দেশের চার হাজার ৫৫০টি ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপন করা হয়েছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার; গভীর সমুদ্রের তলদেশে অপটিক্যাল ফাইবার নির্মাণ, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট স্থাপন, মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু, উপজেলা শহরে ব্যাংকের এটিএম বুথ নির্মাণসহ সহজলভ্য ইন্টারনেট সেবা এখন মানুষের দোরগোড়ায়। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ফলে ইন্টারনেট সেবা প্রদান সহজ হয়েছে। দেশে বর্তমানে প্রায় ১৭ কোটি মোবাইল ফোন ব্যবহার হয়।

জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন ঘোষণা (এমডিজি) সফলভাবে অর্জন; এসডিজি বাস্তবায়ন অগ্রগতির স্বীকৃতিস্বরূপ এসডিজি প্রগ্রেস অ্যাওয়ার্ড লাভ; মাতৃমৃত্যুর হার ২০০৫ সালের ৩৪৮ থেকে কমে এখন ১৬৫, পাঁচ বছরের নিচে শিশুমৃত্যুর হার ২০০৫ সালের ৬৮ থেকে কমে ২০১৯ সালে ২৮ এবং প্রসবকালে দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর উপস্থিতি ২০০৪ সালের ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১৯ সালে ৫৯ শতাংশ হয়েছে।

বর্তমানে দেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ফার্স্ট-ট্র্যাক প্রকল্প চলমান রয়েছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল ও ঢাকা বিমানবন্দর থেকে যাত্রাবাড়ীর অদূরে কুতুবখালী পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে অচিরেই চালু হবে; পায়রা সমুদ্রবন্দর, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ আরও কয়েকটি বড় প্রকল্প সমাপ্ত হলে দেশের অগ্রগতিতে নতুন মাত্রা যোগ হবে, ভারতের সঙ্গে স্থল সীমান্ত চুক্তির মাধ্যমে ছিটমহল বিনিময় করে বাংলাদেশ পায় ভারতের ১১১টি ছিটমহল। এ চুক্তির ফলে ৬৮ বছরের রাষ্ট্রহীন ছিটমহলের ৫১ হাজারেরও বেশি মানুষ বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার সুযোগ পায়।

দেশ-বিদেশের অতিথিবর্গের সরব উপস্থিতিতে সফলভাবে মুজিব বর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন। সন্ত্রাস দমনে সরকার সাফল্য অর্জন করেছে। এ ক্ষেত্রে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যথাযথ উদ্যোগের ফলে দেশে নাশকতার হার অনেক কমে এসেছে। ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে চলছে পূর্ণোদ্দমে; বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের অসমাপ্ত বিচারকাজ সম্পন্ন ও আদালতের রায় কার্যকর করা, মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ সম্পন্ন, বঙ্গবন্ধু প্রবর্তিত বৈদেশিক নীতি সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয় মূলমন্ত্র মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অনুসরণ করেন।

দেশ ও জনকল্যাণে অসামান্য অবদানের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ‘হুপে-বোয়ানি’ শান্তি পুরস্কার, Pearl S. Buck 99 পুরস্কার, ‘সেরেস’ মেডেল, মাদার তেরেসা পদক, Paul Haris ফেলোশিপ, নেতাজি সুভাষ চন্দ্ৰ বসু স্মৃতি পদক, ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ-২০১৫’ পুরস্কার, ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ পুরস্কার’, ‘প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন পুরস্কার’, ‘আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার’, ‘প্যান ওম্যান ইন পার্লামেন্ট’ (ডব্লিউআইপি) গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ড, নারী ও শিশু শিক্ষা উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য শান্তি বৃক্ষ পদক, ‘সাউথ-সাউথ’ অ্যাওয়ার্ড, জাতিসংঘের মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) অ্যাওয়ার্ড, ডিপ্লোমা অ্যাওয়ার্ড, কালচারাল ডাইভারসিটি অ্যাওয়ার্ড, গ্লোবাল ডাইভারসিটি অ্যাওয়ার্ড, ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পদক, ‘ডক্টরস অব হিউম্যান লেটার্স’ পদকসহ অর্ধশতাধিক পদক ও ডিগ্রিতে ভূষিত হয়েছেন। ফোর্বস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত, ২০২১ এ বিশ্বের প্রভাবশালী ৫০ নারীর তালিকায় অন্যতম অবস্থানে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

Sheikh Hasina

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আর্থসামাজিক খাতে বাংলাদেশের বিস্ময়কর উত্থান ও অগ্রযাত্রা এখন সারাবিশ্বে স্বীকৃত। তিনি আমাদের অর্থনীতির আঙ্গিনায় অসীম সাহস ও দূরদর্শিতার প্রতীক। যার নির্দেশনায় গোটা জাতি আজ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, তাদের লক্ষ্য আজ অনেক দূর পর্যন্ত প্রসারিত। প্রধানমন্ত্রীর অসীম সাহসী নেতৃত্ব, দেশপ্রেম, দেশের মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা ও দূরদর্শী অর্থনৈতিক দর্শনের কারণে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দরবারে সুমহান উচ্চতায় অধিষ্ঠিত। এক সময়ের বিশ্বের দরিদ্রতম দশটি দেশের অন্যতম বাংলাদেশ আজ বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।

ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিক অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর) এর মতে, অর্থনৈতিক বিকাশ অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ। উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে আজ বিশ্বের বিস্ময় বাংলাদেশ। বিশ্ব নেতৃবৃন্দের মুখে শোনা যায় আজ বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা। সম্ভাবনার এ স্বর্ণদুয়ার উন্মোচনে আওয়ামী লীগ ও জননেত্রী শেখ হাসিনা হয়ে ওঠেন অতীতের ঐতিহ্য সুরক্ষা, বর্তমানের সফল পথচলা এবং ভবিষ্যতে সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অকুতোভয় ও বিশ্বস্ত কাণ্ডারি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা এক ফিনিক্স পাখি। বাবা-মা, ভাইসহ আপন আত্মীয়দের হারিয়ে ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে এসে তিনি তার জীবনকে উৎসর্গ করেছেন এই বাংলার আপামর মানুষের কল্যাণে।

এ দেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে পরিণত করতে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উন্নয়ন অভিযাত্রায় একের পর এক লক্ষ্য অর্জনে যেন কবিগুরুর ভাষায় বলতে হয়- ‘আলোর নৌকা ভাসিয়ে দিয়েছেন আকাশপানে চেয়ে। সবকিছুই সম্ভব হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের হাল ধরেছেন বলে।’

শেখ হাসিনা আছেন বলেই বাংলাদেশ আজ শান্তি, সাম্য আর সম্প্রীতির দেশ। শেখ হাসিনা আছেন বলেই তলাবিহীন ঝুড়ির বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশ। শেখ হাসিনা আছেন বলেই বাংলাদেশ আজ হতে যাচ্ছে উন্নত এক দেশ। সবশেষ দেশবাসীসহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান অর্থমন্ত্রী।

বিইউ/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

টাইমলাইন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর